টরন্টোর মা জিল ক্যানন এই শরতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এম্পটি নেস্টার’ হয়েছেন। তাঁর দুই ছেলে—একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে, আরেকজন প্রথম বর্ষে—এখন স্বাবলম্বী এবং স্বাধীন জীবনে পা রেখেছে। ঘরের নিয়মকানুন, অবাঞ্ছিত উপদেশ কিংবা বারবার গুছিয়ে রাখার অনুরোধ শোনা থেকে তারা এখন মুক্ত।
তবে থ্যাঙ্কসগিভিং সপ্তাহান্তে তারা বাসায় ফিরবে। মা জানেন, তাদের মুখ দেখা ও গল্প শোনা নিঃসন্দেহে রান্নাঘরের বিশৃঙ্খলা বা ভেজা তোয়ালে উপেক্ষা করার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দের হবে।
বড় সন্তানদের সঙ্গে সহাবস্থানের জটিলতা
জিল ক্যানন লিখেছেন, বড় সন্তানদের বেড়ে ওঠা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া মানে হলো স্বাধীনতার প্রয়োজন বুঝতে পারা, কিন্তু একই সঙ্গে ঘরের নিয়ম ও পরিচ্ছন্নতার সামান্য ধারাও বজায় রাখা।
তবে সবসময় এটি সহজ ছিল না। বড় ছেলে প্রথম বর্ষ শেষে বাসায় ফিরে আসার পর থেকেই রাতের বেলা রান্নাঘরের অগোছালো অবস্থা, রাত গভীরে ফেরা, দিনে ঘুমানো—এসব কারণে ঘরে বিশৃঙ্খলা নেমে আসে।
ফলস্বরূপ, মা ও ছেলের মধ্যে শুরু হয় বিরোধ, রাগ আর অপ্রয়োজনীয় মানসিক টানাপোড়েন। সেই গ্রীষ্মে মা-ছেলের কেউই একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে উঠতে পারেননি।
এক আলোকিত আলাপ
গত গ্রীষ্মে বড় ছেলের সঙ্গে একটি অর্থবহ কথোপকথন সবকিছু বদলে দেয়। মা বিরক্ত ছিলেন ছোট ছেলের আচরণে—অগোছালো, নিয়ম না মানা, অমনোযোগী। তাই তিনি বড় ছেলেকে পরামর্শ চান, কিভাবে এমন আচরণ সামলানো যায়।
ছেলের উত্তর ছিল সোজা, কিন্তু গভীর। সে বলেছিল, “মা, এটা তোমার বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পনা নয়। ও শুধু এক সাধারণ কিশোর, নিজের জগতে মগ্ন। সে বুঝতেই পারে না তুমি কী চাও। সবসময় ভাববেন না, এটা আপনার ব্যাপারে।”
এই কথাগুলো মায়ের মনে আলো জ্বালায়। তিনি বুঝতে পারেন, ছেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিরক্ত করছে না—তারা কেবল নিজেদের মতো করে জীবনটা বুঝতে শিখছে।
নতুন বোঝাপড়া ও পরিবর্তনের শুরু
এই উপলব্ধি জিলকে নতুন পথে নিয়ে যায়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, রাগ নয়—সহমর্মিতা, ধৈর্য ও ভালোবাসা দিয়েই পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তিনি প্রথমে নিজের আচরণে পরিবর্তন আনেন—একটি অগোছালো রান্নাঘর দেখে আর ‘DEFCON 1’ সতর্কতা জারি করেন না। বরং শান্তভাবে বলেন, “‘গাড়ি নিতে চাও? তাহলে ঘরটা একটু গুছিয়ে ফেলো।’”
ফলাফলও ইতিবাচক ছিল। ছেলেরা আগের চেয়ে সহযোগিতাপূর্ণ হয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাকে আলিঙ্গন করে এবং মাঝে মাঝে গালে চুমুও দেয়।
শেখা ও ছাড় দেওয়ার শিল্প
জিল ক্যানন বুঝেছেন—পিতামাতার ভূমিকা এক চলমান শেখার প্রক্রিয়া। সন্তানদের বড় হতে দিতে হলে কখনো কখনো তাদের ছেড়ে দিতে হয়।
তিনি লিখেছেন, “আমার নতুন বাস্তবতায় এখন স্কুল ড্রপ-অফ, স্পোর্টস প্র্যাকটিস, টেনিস টুর্নামেন্টের দিনগুলো শেষ। রান্নাঘর এখন ঝকঝকে। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি তাদের হাসি, কথাবার্তা আর প্রোটিনের খোঁজে থাকার ব্যস্ততা মিস করি।”
এই গল্পে মায়ের রাগ, ভালোবাসা, শিখন ও পরিবর্তনের এক মানবিক ছোঁয়া আছে। সন্তানের স্বাধীনতা মানে তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া নয়—বরং বুঝে নেওয়া, কখন আঁকড়ে ধরতে হবে আর কখন ছেড়ে দিতে হবে।
জিল ক্যাননের সেই অনিচ্ছাকৃত “শিক্ষণ মুহূর্ত” তাঁর জীবনে এক আলোকিত পরিবর্তনের সূচনা করেছে—যা প্রতিটি পিতামাতার জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা।
#parenting #motherhood #familylife #growth #learning #সারাক্ষণ_রিপোর্ট