সমূদ্র সৈকতকে পাঁচ অংশে বিভক্ত করে প্রথমে পদাতিক ও ট্যাঙ্কবাহিনীর “অ্যাক্ষিবিয়াস ল্যান্ডিং” করা হয়, অতঃপর বেদম বোমাবর্ষণ করা হয়
১৯৪৪ সালে, “এয়ার ট্রান্সপোর্ট কমান্ড/এটিসি” আনাতোলকে পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়। লস এঞ্জেলেসের (ক্যালিফোর্নিয়া) নিকটবর্তী এক বন্দর থেকে আনাতোল জাহাজে উঠে বসেন। ‘টর্পেডাক্রান্ত’ প্রশান্ত মহাসাগরের শত্রু-টর্পেডোকে এড়ানোর জন্য জাহাজটি ঘুরপথ ধরে প্রথমে আসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বন্দরে। অতঃপর, সেখান থেকে রওনা দেয় বোম্বাই-এর উদ্দেশ্যে। যাহোক, লস এঞ্জেলেস টু ঢাকা পর্যন্ত আসতে আনাতোলের পাক্কা একমাস সময় লেগে যায়।
১৯৪৪ সালে আনাতোল যখন ঢাকায় আসেন- ঢাকাবাসীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন সৈনিকদের আনাগোনায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কারণ, ১৯৪৩ সালের গ্রীষ্মকালে ঢাকায় “৪৯০তম বোম্বার্ডমেন্ট স্কোয়াড্রনের” কর্মতৎপরতা সক্রিয় করতে মার্কিন সৈনিকরা ঢাকায় আসা শুরু করেছিলেন। ফলে সহসা অজানা অপরিচিত কোনো দেশে এসে আনাতোলকে খাপ খাওয়ানোর ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৪ সালের শুরু পর্যন্ত মোটামুটি চার বছরের মহাযুদ্ধীয় হিসাব-খাতার হিসাব অনুযায়ী, অতি সংক্ষেপে এরকম:
১৯৪২ সালের গ্রীষ্মকালের মধ্যে, ইউরোপের সুবিশাল ভূ-খণ্ড- ৩য়ারস থেকে ওসলো-টু-প্যারিস এবং পূর্বদিকে- অ্যাথেন্স, কিয়েভ, সেভান্তোপল জার্মস বাহিনীর তথা ‘কেরমাখতে’র করতলগত হয়।
১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র মহাযুদ্ধের রণাঙ্গণে প্রবেশ করে। যুক্তরাজ্যের তাতে সুবিধা হয়। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সঙ্গে চার্চিল স্বশরীরে, বছ করে দশবার আলাপ-আলোচনা করেন এবং যুদ্ধ অপারেশনসমূহ সমন্বিত করাং জন্য “যৌথ চিফস অব স্টাফ কমিটি” (কম্বাইন্ড চিফস অব স্টাফ কমিটি গঠ করেন, কমিটিতে মস্কোকে নেয়া হয় না।
৪৯০তম বোম্বার্ডমেন্ট স্কোয়াড্রনের অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্ণেল রিচার্ড জনসনের আঁকা কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটির স্কেচ। স্কেচ-প্রণেতার অনুমতি সাপেক্ষে লেখক কর্তৃক প্রকাশিত হলো।
বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করে আসছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিশেষ করে শক্তিশী ১০ জুন ১৯৪০ সাল থেকে ব্রিটিশবাহিনী উত্তর আফ্রিকা-রণাঙ্গণে অক্ষশক্তির মার্কিন নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যে অবশেষে ১৯৪৩ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে অক্ষশক্তিকে পরাভূত করা হয়।
১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধে ‘ভেরমাখত’-য়ের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে মহাযুদ্ধের বিজয়মাল্য কার পক্ষে- তা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত হয়ে যায়। এই একই বছর, ১৯৪৩ সালের আগস্ট মাসে “কুরস্ক” যুদ্ধেও ভেরমাখ্ত পরাজিত হয়।
১৯৪১ সেপ্টেম্বর মাস থেকে, প্রায় নয়শ’ দিন অবরুদ্ধ থাকা লেনিনগ্রাদের (সেন্ট পিটারসবুর্গ) অবরোধমুক্তি ঘটে ২৭ জানুয়ারি ১৯৪৪ সালে, হিটলারের ‘ভাঙ্গা মাজা’কে মেরামত করে দাঁড়ানোর সব আশা নির্মূল হয়ে যায়।
অ্যাংলো-আমেরিকান জোট সোভিয়েট ইউনিয়নকে ১৯৪২ সালের গ্রীষ্মকালে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৪ সালের ৬ জুন অ্যাংলো-আমেরিকান জোটের যৌথবাহিনী বার বার স্থগিত রাখা “নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং” নামে পরিচিত দ্বিতীয়-ফ্রন্ট খোলে।
নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং-এ, ফ্রান্সের আশি কিলোমিটার দীর্ঘ নরমান্ডি নামক সমূদ্র সৈকতকে পাঁচ অংশে বিভক্ত করে প্রথমে পদাতিক ও ট্যাঙ্কবাহিনীর “অ্যাক্ষিবিয়াস ল্যান্ডিং” করা হয়, অতঃপর বেদম বোমাবর্ষণ করা হয় এবং মধ্যরাতের পরে চব্বিশ হাজার সৈনিক প্যারাশ্যুটের মাধ্যমে অবতরণ করেন। এই ল্যান্ডিং ও প্যারাশ্যুটিস্ট বাহিনীর অবতরণকালে, যুদ্ধকালীন সময়ে যা হয়, তা-ই ঘটে; বেশ কিছু সৈনিক মারা যান।
(চলবে)