কানাডার ফার ট্রেড যুগে হাডসন’স বে কোম্পানি যে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রেখে গেছে, তার বহু নিদর্শন আজ জাদুঘরে সংরক্ষিত। নিচে এসব বস্তু ও এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের জীবন, সামাজিক আচার, বাণিজ্যপথ ও উত্তরাঞ্চলের বসতির ইতিহাস তুলে ধরা হলো।
এইচবিসি ব্লেজার
সব কর্মীর জন্য নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ছিল না, তবে কিছু দায়িত্বে বিশেষ অনুষ্ঠান বা কাজে পোশাকবিধি মানতে হতো। পোস্ট ম্যানেজারের মতো উচ্চপদস্থদের দেওয়া হতো ড্রেস ব্লেজার—বক্ষপকেটে সেলাই করা কোট অব আর্মস, পিতলের বোতামে এমবস করা চিহ্ন। ১৯৪০–এর দশকের এই ব্লেজারটি জন লরির; তিনি ১৯২৮ সালে স্কটল্যান্ড থেকে কানাডায় এসে এইচবিসিতে যোগ দেন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, সাসকাচুয়ান ও ম্যানিটোবায় কাজ করে ১৯৩২ সালে পোস্ট ম্যানেজার হন।
রিম লক
১৬৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭০ সালে সদর দপ্তর কানাডায় যাওয়া পর্যন্ত এইচবিসির কেন্দ্র ছিল লন্ডনে। শেষ লন্ডন কার্যালয়টি ১৯২৬ সালে বিশপসগেটে নির্মিত হয়—বহির্ভাগে উত্তর আমেরিকা–প্রেরিত খোদাই ও কুপোলার চূড়ায় সোনালি বিভার বায়ুবর্তনী। বড় বোর্ডরুমের দরজা ও অগ্নিকুণ্ডে ছিল কাঠখোদাই অলঙ্করণ; সেখানে একাধিক দরজা সুরক্ষায় ব্যবহৃত হতো সিলভার–প্লেটেড রিম লক। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে রিম লক ব্যবহারের প্রচলন মর্টিস বা বোরড সিলিন্ড্রিক্যাল লকের আগেকার; এগুলো দরজার গায়ে বসানো হয়, দরজায় ছিদ্র কাটার দরকার পড়ে না।
বিয়ের পোশাক
১৮৯৬ সালে হেলেন হোগ যখন ক্যালিক্স্ত ল্যান্ড্রিকে বিয়ে করেন, তিনি এই দুই খণ্ডের বিয়ের পোশাকটি পরেছিলেন। হোগ ছিলেন মার্গারেট টেইলর ও আমাব্ল হোগের নাতনি—মার্গারেট টেইলর ছিলেন এইচবিসি গভর্নর জর্জ সিম্পসনের সাবেক ‘কান্ট্রি ওয়াইফ’, আর আমাব্ল হোগ ১৮২১ সালে কোম্পানিতে যোগ দিয়ে পরে সিম্পসনের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। হেলেনের মেটিস পরিচয়ে পাওয়া জমিতে তিনি ও তাঁর স্বামী ম্যানিটোবার মারিয়াপোলিসের প্রতিষ্ঠাতা বাসিন্দা হন। ল্যান্ড্রি শ্যালক লেওঁ রয়ের (খ্যাত লেখিকা গ্যাব্রিয়েল রয়ের পিতা) সঙ্গে মুদি দোকান চালাতেন; হোগ লালন–পালন করেন তাঁদের নয় সন্তানকে। পোশাকটি পরিবারে প্রজন্মান্তরে থেকেছে এবং নাটুকে সাজে পরা হয়েছে। সেই সময় এপলেট খুব প্রচলিত না থাকায় ধারণা করা হয়, হোগ নিজের রুচিতে এগুলো যোগ করেছিলেন। এইচবিসি সংগ্রহে বহু বস্তু নারীদের বানানো হলেও অল্প কিছুর সঙ্গে নারীর নাম বা পূর্ণ তথ্য যুক্ত আছে—এই পোশাকটি তার এক বিরল ব্যতিক্রম; পরিবারটি ২০১৮ সালে এটি দান করে।
সিলভার ‘কভেন্যান্ট চেইন অব ফ্রেন্ডশিপ’ ওয়াম্পাম
১৭৬৪ সালের নাইয়াগ্রা চুক্তির অংশ এই রূপালি ওয়াম্পাম বেল্ট—মিত্রতা ও অঙ্গীকারের ঐতিহাসিক প্রতীক—সংগ্রহের বিশেষ নিদর্শন।
‘র্যাম’স হেড’ স্নাফ মুল
স্কটিশ রেজিমেন্টে নাকে তামাকগুঁড়া টানার রীতিকে (স্নাফ) আনুষ্ঠানিকতা ও সাজসরঞ্জামে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হতো। ডিনারের পর জুনিয়র অফিসাররা সিনিয়রদের ও অতিথিদের কাছে স্নাফ মুল এগিয়ে দিতেন; বড় গ্রামীণ এস্টেটেও এমন মুল থাকত। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি এই ভেড়ার মাথার আকৃতির মুলে রয়েছে স্নাফ নেওয়ার সব সরঞ্জাম—নাক বা গোঁফে লেগে থাকা স্নাফ মুছতে ছোট খরগোশের পায়ের ব্রাশও আছে। টেবিলজুড়ে ঘোরাতে ক্যাস্টার (চাকা) রয়েছে। সঙ্গে থাকা সিগার বক্সের ঢাকনায় খোদাই—‘রুপার্ট’স ল্যান্ডের গভর্নর ইন-চিফ’; কারণ এটি ছিল ১৮২১–১৮৬০ সময়ের এইচবিসি গভর্নর স্যার জর্জ সিম্পসনের। এখনও বহু স্কটিশ পরিবার ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ইংরেজ–স্কটিশ রেজিমেন্টে পূর্বপুরুষদের স্নাফ মুল সংরক্ষিত আছে।
স্কুনার ‘ক্যাডবরো’র মডেল
প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের জন্য ১৮২৪ সালে ইংল্যান্ডের রাই শহরে এইচবিসি ‘ক্যাডবরো’ (কখনও ‘ক্যাডবরোঘ’) স্কুনারটি নির্মাণ করায়। ১৮২৭ সালের ২৪ মে ফোর্ট ভ্যাঙ্কুভারে পৌঁছে জাহাজটি ক্যালিফোর্নিয়ার নিম্ন উপকূল অন্বেষণে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যের পাশাপাশি এর কিছু রোমাঞ্চকর অভিযান ছিল—১৮৪০ সালে এসএস ‘বিভার’-এর সঙ্গে সিটকা, আলাস্কায় যাওয়া; পরে মার্কিন নৌবাহিনী ডুবে যাওয়া স্কুনার ‘শার্ক’-এর নাবিকদের ক্যালিফোর্নিয়ায় নিতে এটিকে চার্টার করে। ১৮৬১ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যে সক্রিয় থেকে ১৮৬২ সালে ঝড়ে ধ্বংস হয়। ১৯৩০–এর দশকে নানাইমো, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যালান কবর্ন কোম্পানির জন্য এই মডেলটি বানান; উইনিপেগের জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য তিনি আরও কয়েকটি মডেল তৈরি করেন।
টোল ব্রিজের পাস ও টোকেন
১৮৯১ সালের আগে উইনিপেগ ও সেন্ট বোনিফেসের মধ্যে রেড নদী পারাপার কেবল ফেরিতে সম্ভব ছিল। নরউড এলাকায় জনসংখ্যা বাড়লে কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ের পরিচালকদের মালিকানাধীন নরউড ইমপ্রুভমেন্ট কোম্পানি প্রথম নরউড ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগী হয়। সেতুর উইনিপেগ প্রান্তে টোল নেওয়া হতো—নরউড এলাকার জমির মালিক ছাড়া সবার কাছ থেকে। পদচারী ও ঘোড়া–গাড়িসহ যাতায়াতকারীদের জন্য রেড রিভার অ্যান্ড আসিনিবোয়েন ব্রিজ কোম্পানি কাগুজে পাস ও অ্যালুমিনিয়ামের টোকেন ইস্যু করত—এর মধ্যে ১৮৯৮ সালের টোকেনের দাম ছিল প্রতিটি দুই সেন্ট। ১৯০৯ সালে সেন্ট বোনিফেস সেতুটি কিনে নেওয়ার পর টোল বন্ধ হয়।
শল্যচিকিৎসার সরঞ্জাম
দূরবর্তী পোস্টে পোস্ট ম্যানেজারদের জন্য—যেখানে সরাসরি চিকিৎসা পাওয়া যেত না—এইচবিসি একটি মানক মেডিক্যাল চেস্ট সরবরাহ করত। কারও কারও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ থাকতে পারত, কিন্তু তাঁদের ভূমিকা চিকিৎসকের বিকল্প ছিল না। ১৯৫৩ সালের ‘হাডসন’স বে কোম্পানি পোস্ট ম্যানেজার’স মেডিক্যাল গাইড’-এ দেখা যায়—এসব সরঞ্জাম ও বিভিন্ন ওষুধ সেই মানক চেস্টের অংশ। গাইডে সাধারণ অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসার নির্দেশনা আছে; আবার সরঞ্জামগুলো দেখায়, দাঁত তোলার মতো ছোট অস্ত্রোপচারও প্রয়োজনে ম্যানেজারের দায়িত্বে পড়ত। এই সেটটি ১৯৭০–এর দশকে নাউনিয়াত (সাবেক রিপাল্স বে), বর্তমান নুনাভাটে ব্যবহৃত হয়েছে; তবে টুলগুলোর উৎস ১৯৩০–এর দশকের।
ক্রিবেজ বোর্ড
প্রারম্ভিক অভিযাত্রী ও তিমিশিকারিদের মধ্যে ক্রিবেজ ছিল জনপ্রিয় খেলা; বাণিজ্যিক যোগাযোগের মাধ্যমে ইনুইটদের মাঝেও এ খেলা পৌঁছায়। বিংশ শতকের শুরুর দিকের এই হাতিরদন্তের বোর্ডটির নির্মাতা অজানা। খোদাই করে (স্ক্রিমশ) কালি ভরে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংগ্রহের কিছু বোর্ড ইউরোপীয়দের বানানো হলেও এই বোর্ডে ইনুইট শৈলী স্পষ্ট—চিত্রে আছে শিকার, কুকুর–স্লেজে চলাচল, নৌকা ও কায়াক, আর বাণিজ্য পোস্ট বা ইউরোপীয়–কানাডীয় শিবিরের দৃশ্য।
ট্রান্সসিভার
এসবি–৬০ মডেলের এই ট্রান্সসিভারটি দূরপাল্লার রেডিও যোগাযোগের জন্য—বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চল বা সমুদ্রযাত্রায়—নকশা করা। ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক স্পিলসবারি অ্যান্ড টিন্ডাল রেডিও কমিউনিকেশনস লিমিটেড ১৯৪১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি তৈরি করে। ভেন্টসহ স্টিল–মেশ কভার, সাতটি ডায়াল (চ্যানেল বদলের একটি—যার ‘বি’ চ্যানেল এইচবিসি যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ), পাশে ঝুলিয়ে রাখা হাতে-ধরা মাইক্রোফোন—এগুলো এর বৈশিষ্ট্য। ঠিক কোথায় এটি চালানো হয়েছিল জানা যায় না; ১৯৬৮ সালের দিকে এইচবিসিতে ব্যবহৃত ছিল। উত্তরাঞ্চলের পোস্টগুলোর জন্য, যারা আগে কেবল চিঠিপত্রে নির্ভর করত, রেডিও যোগাযোগ ছিল অপরিহার্য সুবিধা। ১৯৮৭ সালের এক নোটে উল্লেখ আছে—পুরোনো এইচবিসি রেডিও সরঞ্জাম দুর্লভ—ফলে এই সেটটির ঐতিহাসিক মূল্য বেশি।
শট মোল্ড
আগ্নেয়াস্ত্রে ব্যবহারের জন্য সীসার গুলি বানাতে শট মোল্ড ব্যবহার করা হতো। ঢালাই পিতলের এই দ্বিমুখী ‘গ্যাং মোল্ড’-এ পাশের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে গলিত সীসা ঢাললে একবারে ১৪টি মাস্কেট বল তৈরি হতো। ঠান্ডা হয়ে সেট হলে মোল্ড খুলে বলগুলো বের করা হতো। যেখানে সীসা ঢোকানো হতো, সেখানে গুলিগুলো স্প্রু নামের সীসাখণ্ড দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকত—ব্যবহারের আগে তা কেটে ফেলতে হতো; ছোট স্প্রু–চিহ্ন প্রায়ই দেখা যায়, যা দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদরা নির্মাণপদ্ধতি শনাক্ত করতে পারেন। প্রচুর সীসার গুলি সরাসরি ইংল্যান্ড থেকে এলেও, স্থানীয়ভাবে পাওয়া সীসা পুনর্ব্যবহারে এমন মোল্ড কাজে লাগত। এই নির্দিষ্ট মোল্ডটি ১৯৩১ সালে উত্তর ম্যানিটোবার ইয়র্ক ফ্যাক্টরির কাছে পাওয়া যায়।