০৫:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
এসএনএলের ওপেনিংয়ে অ্যামি পোহলার–টিনা ফে—দ্রুতগতির ব্যঙ্গ, ভাইরাল ক্লিপ রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩৯) দক্ষিণ চীন সাগরে থিতুর কাছে ফিলিপাইনের জাহাজে জলকামান ও ধাক্কা—বেইজিংয়ের অস্বীকৃতি” ওসাকা এক্সপোতে ‘ই-মিথেন’ প্রচার—জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন মার্কিন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী সুরক্ষায় শিথিলতার চাপ—ঝুঁকিতে তিমি-সিলে গোলাগুলির পর পাকিস্তান-আফগানিস্তান তোরখাম সীমান্ত বন্ধ “চীনের নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও ‘বিকল্প আছে’—দুর্লভ খনিজে তাইওয়ানের স্বস্তি” “এসএনএল মঞ্চে রোল মডেলের সঙ্গে চার্লি এক্সসিএক্স—হাইপ ছড়াল ক্যামিও” “ওসাকা এক্সপো শেষের পথে: উত্তরাধিকার কী থাকছে জাপানের?” “জিওইঞ্জিনিয়ারিং কি জলবায়ু মোকাবিলার বিকল্প? ঝুঁকি–শাসন–পথচলা”

গৃহহীনদের শাস্তি নয়, সহায়তা দরকার: আশ্রয় না দিয়ে শহরগুলো গৃহহীনদের উচ্ছেদ করছে

গৃহহীনদের বিরুদ্ধে দমননীতি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বহু শহর গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে তাদের আশ্রয়স্থল থেকে উচ্ছেদ করছে। ২০২৪ সালের মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় — City of Grants Pass বনাম Johnson — শহরগুলোকে জনসমক্ষে ক্যাম্প স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার অনুমতি দেয়, এমনকি যদি স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পূর্ণও থাকে।

এই রায়টির সমালোচনা করেন হাওয়াইয়ের ACLU নীতিনির্দেশক ক্যারি অ্যান শিরোটা। তিনি বলেন, “মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এই ভয়াবহ রায় গৃহহীনদের চোখের আড়ালে সরিয়ে দেওয়ার লজ্জাজনক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে; অথচ তাদের প্রয়োজন সাশ্রয়ী বাসস্থান ও সহায়ক সেবা।”


ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান ও মানবিক ক্ষতি

রায়ের পর দেশজুড়ে “ক্যাম্প উচ্ছেদ অভিযান” বাড়তে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৫০টি শহর নতুন করে জনসমক্ষে ক্যাম্প স্থাপন নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহর প্রতিদিন গড়ে ২০টির বেশি ক্যাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এই ‘পরিষ্কার অভিযানে’ গৃহহীনদের প্রায় কোনো সময়ই দেওয়া হয় না নিজেদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার। শহরের পরিচ্ছন্নতা দল এসে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এতে অনেকের জন্মসনদ, পরিচয়পত্র ও ওষুধপত্র কিংবা আবেগঘন স্মৃতি হারিয়ে যায়।

এমন ঘটনাগুলো তাদের মানসিক আঘাত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে শহরের কলম্বাস পার্কে জুন মাসে এক ক্যাম্প উচ্ছেদের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ন্যান্সি লোপেজের যত্নে গড়ে তোলা একটি বাগান পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়। আবেগভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কারণ এতে আমার অনেক পরিশ্রম লেগেছে।”


গৃহহীনদের মৌলিক চাহিদা ও বাস্তবতা

গৃহহীনদের জন্য জনসমক্ষে বেঁচে থাকা মানে শুধু আশ্রয় নয়, বরং সেখানে তাদের জন্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যের সুযোগও থাকে। কিন্তু এইসব ‘অ্যান্টি-ক্যাম্পিং’ আইন তাদের অদৃশ্য করে দেয়—তাদের মৌলিক জীবনের সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

একটি ক্যাম্প উচ্ছেদের পর নতুন আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়। গবেষণা বলছে, গৃহহীন ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের তুলনায় গড়ে ২০ বছর আগে মারা যান। ৫০ বছরের বেশি বয়সী গৃহহীনরা অনেক সময় বার্ধক্যজনিত দৃষ্টি ও মানসিক সমস্যা দ্রুত ভোগ করেন।


আশ্রয় নয়, উচ্ছেদ—সমস্যার সমাধান নয়

ক্যাম্প উচ্ছেদ করা শুধু গৃহহীনতার বাস্তবতাকে আড়াল করে, সমস্যার সমাধান করে না। কিছু মানুষ হয়তো অস্থায়ী আশ্রয়ে যায় কিন্তু অনেকে পারেন না বা চান না। অনেক সময় রাস্তায় থাকা তাদের জন্য নিরাপদ ও সহজ হয়, কারণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিয়ম রয়েছে; পাশাপাশি সহিংসতা, অতিরিক্ত শব্দ ও সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে।

সাশ্রয়ী বাসস্থান না থাকায় তারা বাধ্য হয় অন্যত্র নতুনভাবে আশ্রয় নিতে। সল্ট লেক সিটির ‘দ্য ইন বিটউইন’ নামের এক আশ্রয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিলিয়ান ওলমস্টেড বলেন, “এই উচ্ছেদ শুধু জিনিসপত্র কেড়ে নেয় না, মানুষের জীবন ও সম্পর্কও ধ্বংস করে, তাদের মানসিক ক্ষত আরও গভীর করে।”


মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান

জাতীয় গৃহহীন স্বাস্থ্যসেবা কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী, শহরগুলোকে উচ্ছেদে নয় বরং গৃহহীনদের স্থায়ী বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার ওপর জোর দিতে হবে।

একটি মানবিক সমাজের দায়িত্ব হলো মানুষকে “আবর্জনা” হিসেবে সরিয়ে দেওয়া নয়, বরং সহানুভূতি, উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানো।


#গৃহহীনতা #যুক্তরাষ্ট্র #সামাজিক_নীতি #মানবাধিকার #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

এসএনএলের ওপেনিংয়ে অ্যামি পোহলার–টিনা ফে—দ্রুতগতির ব্যঙ্গ, ভাইরাল ক্লিপ

গৃহহীনদের শাস্তি নয়, সহায়তা দরকার: আশ্রয় না দিয়ে শহরগুলো গৃহহীনদের উচ্ছেদ করছে

০১:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

গৃহহীনদের বিরুদ্ধে দমননীতি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বহু শহর গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে তাদের আশ্রয়স্থল থেকে উচ্ছেদ করছে। ২০২৪ সালের মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় — City of Grants Pass বনাম Johnson — শহরগুলোকে জনসমক্ষে ক্যাম্প স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার অনুমতি দেয়, এমনকি যদি স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পূর্ণও থাকে।

এই রায়টির সমালোচনা করেন হাওয়াইয়ের ACLU নীতিনির্দেশক ক্যারি অ্যান শিরোটা। তিনি বলেন, “মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এই ভয়াবহ রায় গৃহহীনদের চোখের আড়ালে সরিয়ে দেওয়ার লজ্জাজনক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে; অথচ তাদের প্রয়োজন সাশ্রয়ী বাসস্থান ও সহায়ক সেবা।”


ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান ও মানবিক ক্ষতি

রায়ের পর দেশজুড়ে “ক্যাম্প উচ্ছেদ অভিযান” বাড়তে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৫০টি শহর নতুন করে জনসমক্ষে ক্যাম্প স্থাপন নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহর প্রতিদিন গড়ে ২০টির বেশি ক্যাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এই ‘পরিষ্কার অভিযানে’ গৃহহীনদের প্রায় কোনো সময়ই দেওয়া হয় না নিজেদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার। শহরের পরিচ্ছন্নতা দল এসে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এতে অনেকের জন্মসনদ, পরিচয়পত্র ও ওষুধপত্র কিংবা আবেগঘন স্মৃতি হারিয়ে যায়।

এমন ঘটনাগুলো তাদের মানসিক আঘাত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে শহরের কলম্বাস পার্কে জুন মাসে এক ক্যাম্প উচ্ছেদের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ন্যান্সি লোপেজের যত্নে গড়ে তোলা একটি বাগান পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়। আবেগভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কারণ এতে আমার অনেক পরিশ্রম লেগেছে।”


গৃহহীনদের মৌলিক চাহিদা ও বাস্তবতা

গৃহহীনদের জন্য জনসমক্ষে বেঁচে থাকা মানে শুধু আশ্রয় নয়, বরং সেখানে তাদের জন্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যের সুযোগও থাকে। কিন্তু এইসব ‘অ্যান্টি-ক্যাম্পিং’ আইন তাদের অদৃশ্য করে দেয়—তাদের মৌলিক জীবনের সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

একটি ক্যাম্প উচ্ছেদের পর নতুন আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়। গবেষণা বলছে, গৃহহীন ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের তুলনায় গড়ে ২০ বছর আগে মারা যান। ৫০ বছরের বেশি বয়সী গৃহহীনরা অনেক সময় বার্ধক্যজনিত দৃষ্টি ও মানসিক সমস্যা দ্রুত ভোগ করেন।


আশ্রয় নয়, উচ্ছেদ—সমস্যার সমাধান নয়

ক্যাম্প উচ্ছেদ করা শুধু গৃহহীনতার বাস্তবতাকে আড়াল করে, সমস্যার সমাধান করে না। কিছু মানুষ হয়তো অস্থায়ী আশ্রয়ে যায় কিন্তু অনেকে পারেন না বা চান না। অনেক সময় রাস্তায় থাকা তাদের জন্য নিরাপদ ও সহজ হয়, কারণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিয়ম রয়েছে; পাশাপাশি সহিংসতা, অতিরিক্ত শব্দ ও সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে।

সাশ্রয়ী বাসস্থান না থাকায় তারা বাধ্য হয় অন্যত্র নতুনভাবে আশ্রয় নিতে। সল্ট লেক সিটির ‘দ্য ইন বিটউইন’ নামের এক আশ্রয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিলিয়ান ওলমস্টেড বলেন, “এই উচ্ছেদ শুধু জিনিসপত্র কেড়ে নেয় না, মানুষের জীবন ও সম্পর্কও ধ্বংস করে, তাদের মানসিক ক্ষত আরও গভীর করে।”


মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান

জাতীয় গৃহহীন স্বাস্থ্যসেবা কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী, শহরগুলোকে উচ্ছেদে নয় বরং গৃহহীনদের স্থায়ী বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার ওপর জোর দিতে হবে।

একটি মানবিক সমাজের দায়িত্ব হলো মানুষকে “আবর্জনা” হিসেবে সরিয়ে দেওয়া নয়, বরং সহানুভূতি, উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানো।


#গৃহহীনতা #যুক্তরাষ্ট্র #সামাজিক_নীতি #মানবাধিকার #সারাক্ষণ_রিপোর্ট