আইনস্টাইনের সাফল্য এবং ত্রুটি
জিমেনা কানালেস বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় আইনস্টাইনকে শুধুমাত্র তার বৈজ্ঞানিক সাফল্য এবং মানবকল্যাণে তার অবদানের জন্য তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু এই বইটি তার জীবন ও মতাদর্শের জটিলতাকে পুরোপুরি তুলে ধরেনি। বইটি আইনস্টাইনকে একটি নম্র এবং শান্তিপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখিয়েছে, বিশেষ করে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাকে জনপ্রিয়তা পেতে দেখা যায়, তবে এটি তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক বাদ দিয়েছে।
বৈজ্ঞানিক সাফল্য এবং ব্যক্তিগত মতবাদ
আইনস্টাইন তার জীবনে অনেক বৈজ্ঞানিক সফলতা অর্জন করেছেন, বিশেষ করে ১৯০৫ এবং ১৯১৫ সালে। বইটি তাকে শুধুমাত্র মানবতার কল্যাণে কাজ করার মানুষ হিসেবে দেখিয়েছে, তবে এটি তার রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিবর্তন এবং নানা সময়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করেনি। উদাহরণস্বরূপ, তিনি যখন প্রথম কমিউনিজমকে সমর্থন করেছিলেন, পরে তা থেকে সরে এসেছিলেন এবং প্যাসিফিস্ট আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরও তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছিল।
রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত বিরোধ
আইনস্টাইন অনেক সময় বিপরীত মতামত প্রকাশ করেছেন। যখন তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তির পক্ষে কথা বলতেন, তখন তার ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে তার অন্য মতামত প্রকাশ পেত। একদিকে, তিনি জার্মান বিজ্ঞানীদের বয়কটের পক্ষে ছিলেন, অন্যদিকে তিনি যুদ্ধের পর জার্মানির পুনঃশস্ত্রীকরণের পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। আইনস্টাইন কখনও একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন না, তবে তার রাষ্ট্রবাদী মতাদর্শ কখনোই ফ্যাসিস্টদের সমর্থক ছিল না।
বইটির ভুল উপস্থাপনা
এই বইটি আইনস্টাইনের সাফল্যকে অনেক উজ্জ্বলভাবে দেখিয়েছে, কিন্তু তার বৈজ্ঞানিক চিন্তা এবং রাজনৈতিক অবস্থানগুলির পরিবর্তনকে প্রায় উপেক্ষা করেছে। বইটি তার জীবনের অন্ধকার দিক এবং তার আপেক্ষিকতা, আপোষের বিষয়গুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি, যা পাঠকদের একটি অসম্পূর্ণ চিত্র দেয়।
নৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক অবদান
আইনস্টাইনের অবদানকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং নতুন ধারণাগুলো আধুনিক বিজ্ঞানকে বদলে দিয়েছে। তিনি একাধিক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, এবং তার অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমর হয়ে থাকবে। যদিও তার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনগুলো অনেক জটিল ছিল, তবুও তার বিজ্ঞান ও মানবতার প্রতি তার অবদান অমূল্যায়ন করা যায় না।
জিমেনা কানালেস, একজন বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ, যিনি তার বই “Bedeviled: A Shadow History of Demons in Science” (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০২০) এর জন্য পরিচিত।