জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশে ভয়, অনিশ্চয়তা ও অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার অভিযোগ, সরকারের নীতিনির্ধারণ দেশের ভাবমূর্তিকে এমন অবস্থায় নামিয়ে এনেছে যে, বিশ্বের বহু দেশ এখন বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। তিনি ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন—“অশান্তির জন্য যদি কোনো নোবেল পুরস্কার থাকত, বাংলাদেশই সেটি পেত।”
অন্তবর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে অনিশ্চয়তা
জিএম কাদের অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণকে ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার মতে, এই সরকারের সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, “অশান্তির জন্য যদি কোনো নোবেল পুরস্কার বা আন্তর্জাতিক পুরস্কার থাকত, বাংলাদেশ সেই পুরস্কারের উপযুক্ত প্রার্থী হতো।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য
বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন জিএম কাদের। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তার দলের অবস্থান তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, “দেশকে বর্তমান অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়। তাই সরকার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের মতে, দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা জরুরি। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে হবে। “এই সরকার যত দ্রুত বিদায় নেবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে,”—যোগ করেন তিনি।
পুলিশি বাধা ও হামলার অভিযোগ
জিএম কাদের ১১ অক্টোবর কাকরাইল অফিসের সামনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশে পুলিশের বাধা ও হামলার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “কোনো প্ররোচনা ছাড়াই পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জলকামান দিয়ে পানি ছুড়তে শুরু করে। এরপর সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
তার দাবি, “নেতাকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে ছুটোছুটি করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এই আচরণ সরকারের পক্ষপাতমূলক মনোভাবের প্রতিফলন।”
নির্বাচনী পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা
জিএম কাদের বলেন, সরকার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। “এই সরকার নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আগ্রহী নয়। আমাদের মতো নিবন্ধিত দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়াই তার প্রমাণ,” তিনি যোগ করেন।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল রাব্বি চৌধুরী ও দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
জিএম কাদেরের এই বক্তব্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তার মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, জাতীয় পার্টি আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে প্রস্তুত।
#জিএম_কাদের #জাতীয়_পার্টি #তত্ত্বাবধায়ক_সরকার #বাংলাদেশ_রাজনীতি #অন্তবর্তী_সরকার #নির্বাচন #রাজনৈতিক_সংকট