০৩:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
কীভাবে আপনার জন্য উপযুক্ত যোগব্যায়াম [ yoga ] ক্লাস নির্বাচন করবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ‘আমি জানি কে আমি, তবে সেটি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’- ভারতীয় সিনেমার নব্যা নায়ের একান্ত কথা কানাডায় তিমিদের জীবনরক্ষা নিয়ে বিতর্ক: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প পথ এখনো খোলা নেপালে অগ্নিকাণ্ড: একটি সমন্বিত ধ্বংসাত্মক অভিযান একটি রাতের আধুনিক আর অ্যান্ড বি সোল: কোরিয়ান ট্রিওর দাপটে কুয়ালালামপুরে বাজল সঙ্গীতের সুর শরীফা হানিস্যার ‘পুনর্জন্ম’ ভারতের বাজারে অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হুন্দাইয়ের ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা টেলর সুইফটের নতুন কৌশলে অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড ভাঙল আধুনিকতা, ঐতিহ্য আর স্বাচ্ছন্দ্যের মিশেলে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ব্র্যান্ড স্প্ল্যাশের নতুন সংগ্রহ এ বছর পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি শীত পড়বে

নববিবাহিত জয়-রাজিয়া গত সপ্তাহে কাজ নিয়েছিলেন গার্মেন্টসে, আগুনে প্রাণ হারালেন দু’জনই

“কত আদরের মাইয়া আমার। কত যত্ন কাইরা হ্যারে বড় করছি। হেই মাইয়া আমার গার্মেন্টসে কামে ঢুইকা আগুনে পুইড়া মরলো,” একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মোহাম্মদ সুলতান।

গত মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে যে ১৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, মি. সুলতানের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা তাদেরই একজন।

নববিবাহিতা মিজ সুলতানা ও তার স্বামী মোহাম্মদ জয় মাত্র সাতদিন আগে মিরপুরের ওই পোশাক কারখানাটিতে কাজ শুরু করেছিলেন।

মি. জয় ছিলেন মেশিন অপারেটর, আর মিজ সুলতানা ছিলেন সহকারি মেশিন অপারেটরের দায়িত্বে।

গার্মেন্টস থেকে দূরত্ব কিছুটা কাছে হওয়ায় সম্প্রতি স্বামীকে নিয়ে মিরপুরে বাবার বাসায় এসে ওঠেন মিজ সুলতানা।

আগের কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও তারা দু’জনে একসঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হন।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় তাদের পরিবার।

“ওগো গার্মেন্টসের আশপাশে যারা কাম করে হেগো মধ্যে একজনের ভাই আমারে কইলো যে, তোমার মাইয়াগো গার্মেন্টসে নাকি আগুন লাগছে। ফোন দিয়া খোঁজ নাও হেরা বের হইতে পারছে নাকি,” বলছিলেন মি. সুলতান।

খবরটা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ফোন করেন তিনি। ফোন ধরে মেয়ে কথাও বলেন তার সঙ্গে।

“ফোন ধইরা শুনি চিল্লাচিল্লি হইতাছে। মাইয়া আমারে কইলো- আব্বা, আগুন লাইগা গেছে। আমরা ভেতরে আটকা পড়ছি। গেটে তালা মারা তাই বের হইতে পারতাছি না,” বলছিলেন মি. সুলতান।

মেয়ের সঙ্গে এটাই তার শেষ কথা।

“ওইটুকু কথা কওনের পরপরই ফোনটা কাইটা গেলো। এরপরে যখনই ফোন করি, নাম্বার বন্ধ দেখায়,” বলেন মি. সুলতান।

এরপর মেয়ে ও তার স্বামীর সন্ধান পেতে শুরু হয় ছোটাছুটি।

“গতকাল দুপুর থেকে শুরু করে সারাডা দিন, হের পর সারডা রাইত আমরা কেবল ছুটছি। একবার গার্মেন্টসের ওইখানে যাই, আরেকবার যাই ঢাকা মেডিকেলে,” বলেন মি. সুলতান।

বুধবার সকাল পর্যন্তও এই বাবা আশায় ছিলেন যে, মেয়ে ও তার স্বামীকে হয়তো জীবিত ফেরত পাবেন। কিন্তু দুপুর নাগাদ জানতে পারেন যে, দু’জনের কেউই আর বেঁচে নেই।

“নতুন সংসার পাইতা জামাইয়ের লগে মাইয়াডাও গার্মেন্টসে কাম নিছিলো। যারে আমরা বাড়ির কাম পন্ত করতে দিতাম না, হেই আদরের মাইয়াডা আমার না জানি কত কষ্ট পাইয়া মরছে,” কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মি. সুলতান।

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের সবাইকে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। সেগুলোর মধ্যে নয় জন পুরুষ এবং সাতজন নারীর মরদেহ বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।

তবে মরদেহগুলো আগুনে এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, বেশিরভাগের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তারা।

“সব কটি লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এ অবস্থায় নিহতের শরীরের পোশাকসহ বিভিন্ন চিহ্ন দেখে স্বজনরা ১০ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মি. সুলতানও একইভাবে মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ও তার স্বামী মোহাম্মদ জয়কে খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান।

“পরথমে জামাইয়েরটা চিনছি, কাপড় দেইখা। সকালে হে কালো একটা প্যান্ট আর গেঞ্জি পিন্দে বের হইছিলো। প্যান্টের তলে সাদা একটা থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টও পিন্দে আইছে। থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টডা বাড়িতেও পরতো। হেইডা পুরছে না। ওই প্যান্ট দেইখ্যা হেরে চিনছি,” বলছিলেন মোহাম্মদ জয়ের শ্বশুর মি. সুলতান।

একইভাবে মেয়ে রাজিয়া সুলতানার মরদেহও খুঁজে বের করেছেন বলে জানান তিনি।

“মাইয়ার লাশও অমনেই খুঁইজা পাইছি। কিন্তু হাসপাতালের হেরা কইছে ডিএনএ করতে হইবো,” বলছিলেন মোহাম্মদ সুলতান।

মূলতঃ ভবিষ্যতে যাতে মরদেহগুলো নিয়ে কোন সংশয়-সন্দেহ দেখা না দেয় এবং পরিবারগুলো যেন নিশ্চিত হয়ে তাদের স্বজনের মরদেহ নিয়ে দাফন করতে পারেন, সেজন্যই সব ক’টি মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলেই মরদেহগুলো স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

কীভাবে আপনার জন্য উপযুক্ত যোগব্যায়াম [ yoga ] ক্লাস নির্বাচন করবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

নববিবাহিত জয়-রাজিয়া গত সপ্তাহে কাজ নিয়েছিলেন গার্মেন্টসে, আগুনে প্রাণ হারালেন দু’জনই

১১:০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

“কত আদরের মাইয়া আমার। কত যত্ন কাইরা হ্যারে বড় করছি। হেই মাইয়া আমার গার্মেন্টসে কামে ঢুইকা আগুনে পুইড়া মরলো,” একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মোহাম্মদ সুলতান।

গত মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে যে ১৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, মি. সুলতানের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা তাদেরই একজন।

নববিবাহিতা মিজ সুলতানা ও তার স্বামী মোহাম্মদ জয় মাত্র সাতদিন আগে মিরপুরের ওই পোশাক কারখানাটিতে কাজ শুরু করেছিলেন।

মি. জয় ছিলেন মেশিন অপারেটর, আর মিজ সুলতানা ছিলেন সহকারি মেশিন অপারেটরের দায়িত্বে।

গার্মেন্টস থেকে দূরত্ব কিছুটা কাছে হওয়ায় সম্প্রতি স্বামীকে নিয়ে মিরপুরে বাবার বাসায় এসে ওঠেন মিজ সুলতানা।

আগের কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও তারা দু’জনে একসঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হন।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় তাদের পরিবার।

“ওগো গার্মেন্টসের আশপাশে যারা কাম করে হেগো মধ্যে একজনের ভাই আমারে কইলো যে, তোমার মাইয়াগো গার্মেন্টসে নাকি আগুন লাগছে। ফোন দিয়া খোঁজ নাও হেরা বের হইতে পারছে নাকি,” বলছিলেন মি. সুলতান।

খবরটা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ফোন করেন তিনি। ফোন ধরে মেয়ে কথাও বলেন তার সঙ্গে।

“ফোন ধইরা শুনি চিল্লাচিল্লি হইতাছে। মাইয়া আমারে কইলো- আব্বা, আগুন লাইগা গেছে। আমরা ভেতরে আটকা পড়ছি। গেটে তালা মারা তাই বের হইতে পারতাছি না,” বলছিলেন মি. সুলতান।

মেয়ের সঙ্গে এটাই তার শেষ কথা।

“ওইটুকু কথা কওনের পরপরই ফোনটা কাইটা গেলো। এরপরে যখনই ফোন করি, নাম্বার বন্ধ দেখায়,” বলেন মি. সুলতান।

এরপর মেয়ে ও তার স্বামীর সন্ধান পেতে শুরু হয় ছোটাছুটি।

“গতকাল দুপুর থেকে শুরু করে সারাডা দিন, হের পর সারডা রাইত আমরা কেবল ছুটছি। একবার গার্মেন্টসের ওইখানে যাই, আরেকবার যাই ঢাকা মেডিকেলে,” বলেন মি. সুলতান।

বুধবার সকাল পর্যন্তও এই বাবা আশায় ছিলেন যে, মেয়ে ও তার স্বামীকে হয়তো জীবিত ফেরত পাবেন। কিন্তু দুপুর নাগাদ জানতে পারেন যে, দু’জনের কেউই আর বেঁচে নেই।

“নতুন সংসার পাইতা জামাইয়ের লগে মাইয়াডাও গার্মেন্টসে কাম নিছিলো। যারে আমরা বাড়ির কাম পন্ত করতে দিতাম না, হেই আদরের মাইয়াডা আমার না জানি কত কষ্ট পাইয়া মরছে,” কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মি. সুলতান।

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের সবাইকে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। সেগুলোর মধ্যে নয় জন পুরুষ এবং সাতজন নারীর মরদেহ বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।

তবে মরদেহগুলো আগুনে এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, বেশিরভাগের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তারা।

“সব কটি লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এ অবস্থায় নিহতের শরীরের পোশাকসহ বিভিন্ন চিহ্ন দেখে স্বজনরা ১০ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মি. সুলতানও একইভাবে মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ও তার স্বামী মোহাম্মদ জয়কে খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান।

“পরথমে জামাইয়েরটা চিনছি, কাপড় দেইখা। সকালে হে কালো একটা প্যান্ট আর গেঞ্জি পিন্দে বের হইছিলো। প্যান্টের তলে সাদা একটা থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টও পিন্দে আইছে। থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টডা বাড়িতেও পরতো। হেইডা পুরছে না। ওই প্যান্ট দেইখ্যা হেরে চিনছি,” বলছিলেন মোহাম্মদ জয়ের শ্বশুর মি. সুলতান।

একইভাবে মেয়ে রাজিয়া সুলতানার মরদেহও খুঁজে বের করেছেন বলে জানান তিনি।

“মাইয়ার লাশও অমনেই খুঁইজা পাইছি। কিন্তু হাসপাতালের হেরা কইছে ডিএনএ করতে হইবো,” বলছিলেন মোহাম্মদ সুলতান।

মূলতঃ ভবিষ্যতে যাতে মরদেহগুলো নিয়ে কোন সংশয়-সন্দেহ দেখা না দেয় এবং পরিবারগুলো যেন নিশ্চিত হয়ে তাদের স্বজনের মরদেহ নিয়ে দাফন করতে পারেন, সেজন্যই সব ক’টি মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলেই মরদেহগুলো স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

BBC News বাংলা