ইউভাল জোহার: হট স্প্রিংসের প্রতি আগ্রহ
ইউভাল জোহার, একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান আর্কিটেক্ট, বর্তমানে জাপানে বাস করছেন। তার নতুন বই, “টাওয়ার্ড অ্যাড নুড আর্কিটেকচার: এ ভিজুয়াল কম্পেন্ডিয়াম অফ জাপানি হট স্প্রিংস”, জাপানের বিশেষ বিশেষ বাথহাউস এবং হট স্প্রিংস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে। বইটি, যার শিরোনাম আধুনিক আর্কিটেকচার নিয়ে লে করবুসিয়ের ক্লাসিক ১৯২৩ সালের বই “টাওয়ার্ড অ্যাড নিউ আর্কিটেকচার”-এর প্রতি ইঙ্গিত করে, জোহারের গভীর আগ্রহ এবং স্নান সংস্কৃতি নিয়ে তার গবেষণার ফলস্বরূপ।
জাপানের স্নান সংস্কৃতি এবং হট স্প্রিংস
জাপান, যার ভূতাত্ত্বিক গঠন অত্যন্ত সক্রিয়, প্রায় ৩০,০০০ প্রাকৃতিক হট স্প্রিংস দ্বারা পূর্ণ। এই স্প্রিংসগুলি বিভিন্ন তাপমাত্রা, রং এবং খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ। জোহার একে “বাষ্প এবং ঘাম মন্দির” হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে স্থানীয় আর্কিটেকচার অনেক সময়ই সরল এবং শুদ্ধ, ঠিক যেমন এটি মানুষের সেবায় নত হবে। তার বইতে তিনি একাধিক প্রকারের হট স্প্রিংস এবং বাথহাউসের বর্ণনা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে তাসুরুনোই, মাকানোই, আউনি অনসেন এবং আরও অনেক কিছু।
জোহারের যাত্রা এবং আর্কিটেকচারের প্রতি আগ্রহ
জোহারের আর্কিটেকচার এবং সাংস্কৃতিক জীবনের যাত্রা অনেকটাই জাপানের হট স্প্রিংসের প্রতি তার আগ্রহের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। তিনি যখন চীন এবং ব্রাসেলসে কাজ করছিলেন, তখন একদিন প্রথমবারের মতো হক্কাইডোর হেল ভ্যালি, যা একটি প্রসিদ্ধ হট স্প্রিং, পরিদর্শন করেন। এর পর তার জীবনে শুরু হয় হট স্প্রিংসের প্রতি অদম্য আকর্ষণ। জোহার তার আর্কিটেকচারের মধ্যে স্নান সংস্কৃতির উপাদানগুলির মিশ্রণ ঘটিয়েছেন এবং কিছু পরিকল্পনায় “সাওনা” সহ ছোট-বড় পাবলিক বাথহাউসের ধারণা তুলে ধরেছেন।
জাপানে স্নান সংস্কৃতির ইতিহাস
জাপানের স্নান সংস্কৃতি ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু হয়, যখন শিন্টো ধর্মের অনুসারীরা স্নান করতেন প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে। প্রাচীন যুগের অনেক কিংবদন্তি শোনা যায়, যেখানে যুদ্ধাররা আহত হয়ে স্নান করে পুনর্বাসিত হত। আজও এই ঐতিহ্য অনেক জায়গায় জীবিত আছে, তবে বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এই সংস্কৃতির পতন ঘটছে।
স্নান সংস্কৃতির অবনতি
১৯৬০-এর দশকে টোকিওতে ২,৬০০ এরও বেশি বাথহাউস ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা মাত্র ৫০০-এর কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। সেন্টো বা পাবলিক বাথহাউসের সংখ্যা ক্রমশ কমছে, কারণ একদিকে সবার বাড়িতে বাথরুম হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বড় বাণিজ্যিক “সুপার সেন্টো” ওয়াটার পার্কগুলোর দখল বেড়েছে। ইউভাল জোহার এই অবনতির পেছনে মূলত প্রজন্মের পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি মানুষের প্রবণতার কারণে এটি ঘটছে বলে মনে করেন।
জোহার এখন জাপানের ইয়ুগাওয়ারা শহরে বাস করছেন, যেখানে তিনি ঐতিহ্যবাহী জাপানি বাড়ি সংস্কারের কাজ করছেন। স্নান সংস্কৃতির প্রতি তার অনুরাগ এবং তার নতুন বইয়ের মাধ্যমে এই ঐতিহ্য রক্ষায় তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তার কাজ এবং বইয়ের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসীকে জাপানের হট স্প্রিংস এবং স্নান সংস্কৃতির প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলেছেন।