১১:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গাজা স্থিতিশীলতা মিশনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্তের পথে

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার কাজ করছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উপস্থাপন করা হবে বলে ফ্রান্স নিশ্চিত করেছে।

আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভিত্তি গঠনে জাতিসংঘের ভূমিকা

ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পাসকাল কনফাভরো বলেন, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের জন্য জাতিসংঘের অনুমোদন অপরিহার্য। এটি শুধু আইনি ভিত্তিকে মজবুত করবে না, বরং বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য ও আর্থিক সহায়তা আহরণকেও সহজ করবে।
তিনি জানান, ‘ফ্রান্স তার অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এই মিশনকে বাস্তবায়ন করতে। এটি অবশ্যই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমন্বয়ে নতুন উদ্যোগ

ফ্রান্স ও ব্রিটেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যাতে তারা গাজা মিশনে সৈন্য পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি।’

‘স্থিতিশীলতা বাহিনী সময়সাপেক্ষ’ — ব্রিটেন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সংসদে বলেন, ‘গাজায় স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এখনও এর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা আশা করছি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এর অনুমোদন দেবে।’
প্যারিসে ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় প্রশাসনিক রূপান্তর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।

কূটনীতিকরা জানান, এই বাহিনী জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক শান্তিরক্ষা মিশনের মতো নয়, বরং হাইতির মতো ক্ষেত্রে গৃহীত বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তাবের আদলে এটি গঠিত হতে পারে। ওই প্রস্তাবটির অনুসারে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ‘প্রয়োজনে বল প্রয়োগসহ সব পদক্ষেপ গ্রহণের’ অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাব: ২০ হাজার সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি

যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনায় আছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার ও আজারবাইজান। ইতালি ইতিমধ্যেই অংশগ্রহণের আগ্রহ জানিয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই ডজন মার্কিন সেনা বর্তমানে এই উদ্যোগের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে কাজ করছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঘোষণা দেন—যদি জাতিসংঘ অনুমোদন দেয়, তাহলে দেশটি গাজায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ২০ হাজার বা তারও বেশি সেনা পাঠাতে প্রস্তুত।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে নতুন অগ্রগতি

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি ১৯৩ সদস্যের বিপুল সমর্থনে এক ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অগ্রগতি, এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন গঠনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

#: গাজা_যুদ্ধ, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, কূটনীতি, মধ্যপ্রাচ্য_সংঘাত, আন্তর্জাতিক_রাজনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গাজা স্থিতিশীলতা মিশনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্তের পথে

০৬:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার কাজ করছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উপস্থাপন করা হবে বলে ফ্রান্স নিশ্চিত করেছে।

আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভিত্তি গঠনে জাতিসংঘের ভূমিকা

ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পাসকাল কনফাভরো বলেন, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের জন্য জাতিসংঘের অনুমোদন অপরিহার্য। এটি শুধু আইনি ভিত্তিকে মজবুত করবে না, বরং বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য ও আর্থিক সহায়তা আহরণকেও সহজ করবে।
তিনি জানান, ‘ফ্রান্স তার অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এই মিশনকে বাস্তবায়ন করতে। এটি অবশ্যই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমন্বয়ে নতুন উদ্যোগ

ফ্রান্স ও ব্রিটেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যাতে তারা গাজা মিশনে সৈন্য পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি।’

‘স্থিতিশীলতা বাহিনী সময়সাপেক্ষ’ — ব্রিটেন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সংসদে বলেন, ‘গাজায় স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এখনও এর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা আশা করছি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এর অনুমোদন দেবে।’
প্যারিসে ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় প্রশাসনিক রূপান্তর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।

কূটনীতিকরা জানান, এই বাহিনী জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক শান্তিরক্ষা মিশনের মতো নয়, বরং হাইতির মতো ক্ষেত্রে গৃহীত বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তাবের আদলে এটি গঠিত হতে পারে। ওই প্রস্তাবটির অনুসারে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ‘প্রয়োজনে বল প্রয়োগসহ সব পদক্ষেপ গ্রহণের’ অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাব: ২০ হাজার সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি

যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনায় আছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার ও আজারবাইজান। ইতালি ইতিমধ্যেই অংশগ্রহণের আগ্রহ জানিয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই ডজন মার্কিন সেনা বর্তমানে এই উদ্যোগের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে কাজ করছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঘোষণা দেন—যদি জাতিসংঘ অনুমোদন দেয়, তাহলে দেশটি গাজায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ২০ হাজার বা তারও বেশি সেনা পাঠাতে প্রস্তুত।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে নতুন অগ্রগতি

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি ১৯৩ সদস্যের বিপুল সমর্থনে এক ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অগ্রগতি, এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন গঠনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

#: গাজা_যুদ্ধ, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, কূটনীতি, মধ্যপ্রাচ্য_সংঘাত, আন্তর্জাতিক_রাজনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট