জাতীয় দিবস ও মধ্য-শরৎ উৎসব একসঙ্গে পড়ায় ২০২৫ সালের ছুটির সপ্তাহে চীনে ভ্রমণ ও ভোক্তা কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ঐতিহ্য, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মিশেলে কোটি কোটি মানুষ দেশজুড়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন, যা পর্যটন ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্য এনে দেয়।
অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে রেকর্ড ভাঙা অংশগ্রহণ
চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আট দিনের এই ছুটিতে দেশজুড়ে মোট ৮৮৮ মিলিয়ন (প্রায় ৮৯ কোটি) ভ্রমণ সম্পন্ন হয়েছে—যা গত বছরের সাত দিনের ছুটির তুলনায় ১২৩ মিলিয়ন বেশি।
পর্যটন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৯ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা আগের বছরের তুলনায় ১০৮ বিলিয়ন ইউয়ান বেশি। মন্ত্রণালয় জানায়, সারাদেশে ছুটিকালীন পর্যটন বাজার ছিল স্থিতিশীল ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত।
উৎসবের আয়োজন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলন
দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ফসল উৎসব ও মধ্য-শরৎ থিমভিত্তিক আয়োজনগুলো পেয়েছে বিপুল সাড়া। জিলিন প্রদেশের চাংবাই পর্বতে চালু হয় ‘শরৎ উপভোগে ধীর পদচারণা’ ভ্রমণপথ, আর হুবেই ও লিয়াওনিং প্রদেশের জাদুঘরগুলোতে রাতের বিশেষ প্রদর্শনী দর্শকদের আকর্ষণ করেছে।
ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির যুগলবন্দি
লুওইয়াং শহরের লংমেন প্রাচীন সড়কে ঐতিহ্যবাহী আগুন–ফুঁকনি প্রদর্শনী দর্শকদের ভিড়ে মুখর ছিল। একই সঙ্গে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় নবম ‘চায়না অপেরা কালচার উইক’, যা চীনা ঐতিহ্য ও আধুনিক সংস্কৃতির সংযোগকে নতুন মাত্রা দেয়।
পর্যটন খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও সুবিধাজনক হয়েছে।
স্মার্ট ব্যবস্থাপনা ও ভ্রমণ সুবিধা
বেইজিং–তিয়ানজিন–হেবেই অঞ্চলে চালু হয় যৌথ টিকিট ব্যবস্থা, যা পর্যটন সম্পদের সমন্বয় ঘটায়।
হেনানের লাওজুন পর্বত ও শানশির সিতৌ শহরে পর্যটকদের জন্য কম মূল্যের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। গানসুর দুনহুয়াংয়ের মোগাও গুহায় সংযোজিত হয় নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল গাইড সিস্টেম।
ঝেজিয়াংয়ের হাংজু ও গুইঝুর হুয়াজিয়াং সেতু এলাকায় অনলাইন বুকিং ও ভিড়–সতর্কতা প্রযুক্তি চালু হয়, যাতে ভ্রমণ আরও নির্বিঘ্ন হয়।
ভ্রমণচাপে টিকিট সংকট
ছুটির ভিড়ের কারণে জনপ্রিয় রুটগুলোতে টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বেইজিংয়ের এক যাত্রী জানান, সাধারণত প্রতি ১০ মিনিটে বেইজিং–জিনান রুটে ট্রেন চলে, কিন্তু ছুটিতে টিকিট পাওয়া যায়নি। ফেরার সময় বৃষ্টির কারণে স্টেশন এলাকায় যানজটও সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠতে পেরে আমার ছুটি সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে।”
পর্যটনে নতুন প্রবণতা
চায়না ট্যুরিজম একাডেমির পরিচালক দাই বিন জানান, এবারের ভ্রমণে পর্যটকেরা শুধু “রেড সংস্কৃতি” ও শান্তির মূল্যবোধ উপভোগ করেননি, বরং ঐতিহ্য ও আধুনিক জীবনের সংমিশ্রণও উপভোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও বৈচিত্র্যময় পর্যটন অভিজ্ঞতা এখন শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাকে নতুন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিচ্ছে।”
চীনের এবারের ‘ডাবল হলিডে’ শুধু উৎসব উদযাপন নয়—এটি দেশের সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও ভোক্তা খাতের প্রাণবন্ত অগ্রযাত্রার প্রতীক। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে চীনের পর্যটন খাত নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে।
# চীন #পর্যটন #সংস্কৃতি #প্রযুক্তি #জাতীয়_দিবস #চীনা_অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট