ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে পাঠানো এক যৌথ চিঠিতে আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, দলীয় কার্যক্রমে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করছে।
রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর
চিঠিতে বলা হয়েছে, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে আরোপিত সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশ, সংগঠন এবং সমাবেশের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে সীমিত করেছে।” সংস্থাগুলো মনে করে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং দেশের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ব্যাহত করছে।
জাতিসংঘের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত অনুসন্ধান প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেছে,
“রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ গণতন্ত্রে ফেরার পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং দেশের ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।”
‘গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা ছাড়া স্থায়ী স্থিতি সম্ভব নয়’
সংস্থাগুলোর মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো—সকল রাজনৈতিক শক্তিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া। তারা সতর্ক করেছে, যদি কোনো দলের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে, তবে নির্বাচন গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণ করবে না এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে।
তাদের ভাষায়, “গণতন্ত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়া স্থিতিশীলতা টেকে না। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা মানে দেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া।”
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার অবসান দাবি
চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বা প্রমাণবিহীন অভিযোগে যেসব মামলা দায়ের হয়েছে—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে—সেগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। সংস্থাগুলোর মতে, এসব মামলা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধের চিহ্ন বহন করে।
নিরাপত্তা খাত ও আইনি সংস্কারের প্রসঙ্গ
যৌথ চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইন ব্যবস্থা সংস্কার না করলে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য তারা র্যাব বিলুপ্তি, ডিজিএফআই-এর ক্ষমতা সীমিতকরণ, এবং গুম-নির্যাতনের দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
সিভিল সোসাইটি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
চিঠিতে সিভিল সোসাইটি ও এনজিও খাতের ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাগুলোর মতে, সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি শক্তিশালী করতে নাগরিক সংগঠনগুলোর স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ থাকা অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মন্তব্য
চিঠির শেষে বলা হয়েছে, “অন্তর্বর্তী সরকার যদি একটি প্রকৃত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সকল নাগরিকের সমান রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই হবে প্রথম শর্ত।”
স্বাক্ষরকারী সংস্থাসমূহ
১. সিভিকাস
২. কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)
৩. ফোর্টিফাই রাইটস
৪. হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
৫. রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস
৬. টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট
# আওয়ামীলীগ_নিষেধাজ্ঞা_প্রত্যাহার, বাংলাদেশ_মানবাধিকার, ইউনুস_অন্তর্বর্তী_সরকার, গণতন্ত্র_ও_রাজনীতি, আন্তর্জাতিক_চিঠি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট