১১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা ঘিরে ট্রাম্প–লি বৈঠক; বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ রেকর্ড বৃষ্টিপাতে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা—নয়জনের মৃত্যু, নিখোঁজ পাঁচজন নেপাল ও তিব্বতে প্রচণ্ড তুষারঝড়ের কবলে হাজারো ট্রেকার; হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, পর্যটন বন্ধ ঘোষণা সুপার হেডলাইন: ফটিকছড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু— মা ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার ছয় মাসেই সম্পন্ন হবে আইপিও প্রক্রিয়া—ডিএসইর ডিজিটাল রূপান্তরের ঘোষণা

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১১)

একাদশ পরিচ্ছেদ

ক্রমে হতাশা টু’টি টিপে ধরল আমার। কোথায় যাব আমি, কোথায় খুঁজব? এক সময় কচি ওক্ বনে-ছাওয়া একটা টিলার নিচে এসে পৌঁছলুম, আর ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে সুগন্ধ, বুনো ক্লোভার-ঘাসে ছাওয়া একটা ফাঁকা জায়গায় শুয়ে পড়লুম চুপচাপ। অনেকক্ষণ ওখানে শুয়ে পড়ে রইলুম, আর যতই আমি ঘটনাটার কথা ভাবতে লাগলুম ততই যে-মারাত্মক ভুলটা ঘটে গেছে সেটা আরও জোরালো, আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল মনের কাছে। রক্তচোষা কালো জোঁকের মতো আমার মনের মধ্যে চেপে বসতে লাগল সেই ব্যাপারটা।

না-না, চুবুক আমার উদ্দেশ্যেই থুথু দিয়েছিলেন, আমার দিকেই, অফিসারের দিকে নয় মোটেই। কারণ, চুবুক আসল ব্যাপার কিছু বুঝতে পারেন নি; তিনি সেই কাদেত-ছোকরার কাগজপত্রের ব্যাপার কিছুই জানতেন না, আমিও তাঁকে ও-বিষয়ে কিছু বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। প্রথমে চুবুক মনে করেছিলেন, তাঁর মতো আমিও বুঝি বন্দী হয়েছি, কিন্তু পরে যখন তিনি আমাকে সদর দপ্তরের বাইরে সি’ড়িতে বসে থাকতে দেখলেন, বিশেষ করে পরে যখন ক্যাপ্টেনকে আমার কাঁধে বন্ধুভাবে হাত দিতে দেখলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন আমি শ্বেতরক্ষীদের পক্ষে চলে গিয়েছি।

শ্বেতরক্ষী অফিসারটি আমার জন্যে যেরকম উদ্বেগ প্রকাশ করছিল আর আমার দিকে যতখানি মনোযোগ দিচ্ছিল তাতে চুবুকের পক্ষে এছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাবা সম্ভবই ছিল না, শেষ মুহূর্তে আমার দিকে ওঁর সেই থুথু ছোড়া যেন সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে আমার সারা দেহ পুড়িয়ে দিচ্ছিল। আরও তীর, তিক্ত, মর্মান্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই চিন্তাটা যে ওই ভুল ধারণা সংশোধনের তখন আর কোনো উপায় ছিল না, এমন আর কেউ ছিল না যার কাছে সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলতে পারতুম আমি, আমার দোষ লাঘব করতে পারতুম। সবচেয়ে বড় কথা, চুবুক আর ছিলেন না, তাঁকে আর আমার দেখার কোনো সম্ভাবনা ছিল না কোনোদিন, সেদিন নয়, তারপরও নয়, আর কোনোদিনও নয়…

জঙ্গলের মধ্যে সেই কাঁড়েয় আমি যে মারাত্মক ভুল আচরণ করেছিলুম তার জন্যে আত্মধিক্কারে বুকটা যেন খানখান হয়ে যাচ্ছিল। অথচ কাছেপিঠে তখন এমন একজনও কেউ ছিল না যার কাছে মনের কথা উজাড় করে দিয়ে একটু হালকা হতে পারতুম। চারিদিকে ছিল শুধুই স্তব্ধতা। আর খালি পাখির কিচিরমিচির, আর ব্যাঙের ডাক।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬)

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১১)

০৮:০০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

একাদশ পরিচ্ছেদ

ক্রমে হতাশা টু’টি টিপে ধরল আমার। কোথায় যাব আমি, কোথায় খুঁজব? এক সময় কচি ওক্ বনে-ছাওয়া একটা টিলার নিচে এসে পৌঁছলুম, আর ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে সুগন্ধ, বুনো ক্লোভার-ঘাসে ছাওয়া একটা ফাঁকা জায়গায় শুয়ে পড়লুম চুপচাপ। অনেকক্ষণ ওখানে শুয়ে পড়ে রইলুম, আর যতই আমি ঘটনাটার কথা ভাবতে লাগলুম ততই যে-মারাত্মক ভুলটা ঘটে গেছে সেটা আরও জোরালো, আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল মনের কাছে। রক্তচোষা কালো জোঁকের মতো আমার মনের মধ্যে চেপে বসতে লাগল সেই ব্যাপারটা।

না-না, চুবুক আমার উদ্দেশ্যেই থুথু দিয়েছিলেন, আমার দিকেই, অফিসারের দিকে নয় মোটেই। কারণ, চুবুক আসল ব্যাপার কিছু বুঝতে পারেন নি; তিনি সেই কাদেত-ছোকরার কাগজপত্রের ব্যাপার কিছুই জানতেন না, আমিও তাঁকে ও-বিষয়ে কিছু বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। প্রথমে চুবুক মনে করেছিলেন, তাঁর মতো আমিও বুঝি বন্দী হয়েছি, কিন্তু পরে যখন তিনি আমাকে সদর দপ্তরের বাইরে সি’ড়িতে বসে থাকতে দেখলেন, বিশেষ করে পরে যখন ক্যাপ্টেনকে আমার কাঁধে বন্ধুভাবে হাত দিতে দেখলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন আমি শ্বেতরক্ষীদের পক্ষে চলে গিয়েছি।

শ্বেতরক্ষী অফিসারটি আমার জন্যে যেরকম উদ্বেগ প্রকাশ করছিল আর আমার দিকে যতখানি মনোযোগ দিচ্ছিল তাতে চুবুকের পক্ষে এছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাবা সম্ভবই ছিল না, শেষ মুহূর্তে আমার দিকে ওঁর সেই থুথু ছোড়া যেন সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে আমার সারা দেহ পুড়িয়ে দিচ্ছিল। আরও তীর, তিক্ত, মর্মান্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই চিন্তাটা যে ওই ভুল ধারণা সংশোধনের তখন আর কোনো উপায় ছিল না, এমন আর কেউ ছিল না যার কাছে সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলতে পারতুম আমি, আমার দোষ লাঘব করতে পারতুম। সবচেয়ে বড় কথা, চুবুক আর ছিলেন না, তাঁকে আর আমার দেখার কোনো সম্ভাবনা ছিল না কোনোদিন, সেদিন নয়, তারপরও নয়, আর কোনোদিনও নয়…

জঙ্গলের মধ্যে সেই কাঁড়েয় আমি যে মারাত্মক ভুল আচরণ করেছিলুম তার জন্যে আত্মধিক্কারে বুকটা যেন খানখান হয়ে যাচ্ছিল। অথচ কাছেপিঠে তখন এমন একজনও কেউ ছিল না যার কাছে মনের কথা উজাড় করে দিয়ে একটু হালকা হতে পারতুম। চারিদিকে ছিল শুধুই স্তব্ধতা। আর খালি পাখির কিচিরমিচির, আর ব্যাঙের ডাক।