মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। বুধবার শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের রায় ও প্যানেল
বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরে তারা জামিন আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পরিচয়
কারাগারে প্রেরিতদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এবং অবসরে যাওয়া কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান।
এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক কর্মকর্তারা — লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলমও অন্তর্ভুক্ত আছেন।
এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল তিন সাবেক ডিজিএফআই পরিচালক — মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকীকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

মামলার অভিযোগ ও পটভূমি
অভিযোগপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি মামলায় মোট ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন। এক মামলায় ১৭ জন, আরেকটিতে ১৩ জন এবং তৃতীয়টিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে ১৫ জন হেফাজতে আছেন।
রাজধানীজুড়ে বুধবার সকাল থেকেই কাকরাইল, মাছরাই ভবন, পল্টন ও হাইকোর্ট মাজারগেট এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
তিন মামলার মূল অভিযোগ
প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাব পরিচালিত টাস্ক ফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অপহরণ করে গোপনে আটক, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ৮ অক্টোবর দাখিল করা হয়।

দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় শেখ হাসিনা ও আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে, যেখানে অভিযোগ রয়েছে যে, যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র (জেআইসি) বা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত স্থানে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছিল কয়েকজনকে।
তৃতীয় মামলায় বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে রামপুরায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ২৮ জন মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসিকিউশনের আবেদন ও পরবর্তী পদক্ষেপ
প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করে এগুলো বিচারযোগ্য হিসেবে গ্রহণের আবেদন জানান। প্রাথমিক শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে অভিযুক্তদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।
এই মামলাগুলোর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের নতুন অধ্যায় শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আদালতের এই পদক্ষেপকে কেউ কেউ ন্যায়বিচারের পথে অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেছেন।
# আন্তর্জাতিক_অপরাধ_ট্রাইব্যুনা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















