০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
মঞ্চে বুকে টেপ—কেন করছেন লর্ড, জানালেন ‘আল্ট্রাসাউন্ড’ ট্যুরে ম্যাচা চায়ের বিশ্বজোড়া উন্মাদনা—জাপানি ঐতিহ্যের মাঝে নকল পণ্য, সংকট ও সংস্কৃতির বিকৃতি প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল পেনএআইয়ের ‘অ্যাটলাস’ ব্রাউজার: গুগল ক্রোমের আধিপত্যে নতুন চ্যালেঞ্জ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঋণ পরিশোধে অপমান সইতে না পেরে প্রাণ দিলেন মনির লালমনিরহাটে অবৈধভাবে বিক্রির জন্য মজুত ৪১৬ বস্তা সার জব্দ জমি নিয়ে সালিশে মারধর—হাতুড়ির আঘাতে প্রাণ গেল স্থানীয় মাতব্বরের স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী পলাতক ধ্বসের কিনারে কেন শেয়ারবাজারের লেনদেন ও সূচক দুইই!

সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দিল হাইকোর্ট

তদন্তে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এটাই শেষ সুযোগ। এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে এ আদেশ দেন। শুনানিতে বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রিটকারী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আরশাদুর রউফ।


টাস্কফোর্স গঠন ও দায়িত্ব

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র‌্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, চার সদস্যের টাস্কফোর্সে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।

বাকি সদস্যরা হলেন—পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডি থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা এবং র‌্যাব থেকে পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি।

প্রথমে চলতি বছরের ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবকাশকালীন ছুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে ২২ এপ্রিল আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। এবার আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এটি হবে চূড়ান্ত সময়সীমা।


হত্যা মামলা ও তদন্তের ইতিহাস

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে থানার এক কর্মকর্তা তদন্তের দায়িত্ব পান, পরে তা ডিবির পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের হাতে যায়। কিন্তু দুই মাস পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় র‌্যাবকে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।


আইনি প্রক্রিয়া ও রিট মামলা

২০১২ সালের হত্যাকাণ্ডের পর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায় কেন খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হবে না।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামিদের বিচারের আওতায় আনার জন্যই আমরা রিটটি করেছিলাম। আদালত তখন রুল জারি করে এবং পরবর্তীতে আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত র‌্যাবের কাছে যায়। কিন্তু এত বছরেও কোনো চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি।”


আদালতের বার্তা

হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, টাস্কফোর্স এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই বহন করতে হবে। আদালত বলেছে, “এই ছয় মাসই শেষ সময়। এরপর কোনো অজুহাত চলবে না।”

দীর্ঘ ১৩ বছরেও সাংবাদিক দম্পতির হত্যার বিচার না হওয়ায় এ মামলাটি এখনো জাতীয়ভাবে আলোচিত। হাইকোর্টের নতুন নির্দেশে প্রত্যাশা জেগেছে যে, এবার হয়তো মামলার তদন্তে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাবে।


#ট্যাগ: #সাগররুনি #হত্যামামলা #হাইকোর্ট #টাস্কফোর্স #তদন্ত #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

মঞ্চে বুকে টেপ—কেন করছেন লর্ড, জানালেন ‘আল্ট্রাসাউন্ড’ ট্যুরে

সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দিল হাইকোর্ট

০৮:৪০:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

তদন্তে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এটাই শেষ সুযোগ। এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে এ আদেশ দেন। শুনানিতে বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রিটকারী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আরশাদুর রউফ।


টাস্কফোর্স গঠন ও দায়িত্ব

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র‌্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, চার সদস্যের টাস্কফোর্সে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।

বাকি সদস্যরা হলেন—পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডি থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা এবং র‌্যাব থেকে পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি।

প্রথমে চলতি বছরের ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবকাশকালীন ছুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে ২২ এপ্রিল আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। এবার আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এটি হবে চূড়ান্ত সময়সীমা।


হত্যা মামলা ও তদন্তের ইতিহাস

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে থানার এক কর্মকর্তা তদন্তের দায়িত্ব পান, পরে তা ডিবির পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের হাতে যায়। কিন্তু দুই মাস পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় র‌্যাবকে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।


আইনি প্রক্রিয়া ও রিট মামলা

২০১২ সালের হত্যাকাণ্ডের পর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায় কেন খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হবে না।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামিদের বিচারের আওতায় আনার জন্যই আমরা রিটটি করেছিলাম। আদালত তখন রুল জারি করে এবং পরবর্তীতে আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত র‌্যাবের কাছে যায়। কিন্তু এত বছরেও কোনো চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি।”


আদালতের বার্তা

হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, টাস্কফোর্স এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই বহন করতে হবে। আদালত বলেছে, “এই ছয় মাসই শেষ সময়। এরপর কোনো অজুহাত চলবে না।”

দীর্ঘ ১৩ বছরেও সাংবাদিক দম্পতির হত্যার বিচার না হওয়ায় এ মামলাটি এখনো জাতীয়ভাবে আলোচিত। হাইকোর্টের নতুন নির্দেশে প্রত্যাশা জেগেছে যে, এবার হয়তো মামলার তদন্তে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাবে।


#ট্যাগ: #সাগররুনি #হত্যামামলা #হাইকোর্ট #টাস্কফোর্স #তদন্ত #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা #সারাক্ষণরিপোর্ট