পুরোনো নিউইয়র্কের গন্ধে ফিরে দেখা
নব্বইয়ের দশকের নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাতগুলো এখনো যেন মার্ক রনসনের চোখে ভাসে। ট্রাইবেকার সেই নিউ মিউজিক ক্যাফেতে তিনি যখন তরুণ বয়সে ডিজে হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছিলেন, তখনই শুরু হয় তাঁর রাতজাগা জীবনের গল্প। সেই ক্লাবেই প্রথমবার তিনি নোটোরিয়াস বি.আই.জি.-এর ‘হিপনোটাইজ’ গানটি বাজান, যা পরে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। এখন সেই জায়গা বহুবার রূপ বদলেছে—রেস্টুরেন্ট, বার, আবার বন্ধ। কিন্তু রনসনের মনে রয়ে গেছে সেই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত।
রনসন বলেন, “প্রতিটি রাতের শুরুতে ক্লাবের বাইরে ভিড়, উত্তেজিত মুখ, আর সেই বিশেষ গন্ধ—সব আজও টাটকা মনে আছে। তখন বুঝেছিলাম, ‘রাতের মানুষ’ আর ‘রাত উপভোগকারী মানুষ’-এর মধ্যে পার্থক্য কত গভীর।”
সঙ্গীতের শরীরী স্মৃতি
এখন পঞ্চাশে পৌঁছেছেন রনসন—স্বামী, দুই সন্তানের বাবা। কিন্তু তাঁর শরীর এখনো বহন করে ডিজে জীবনের চিহ্ন—ঘাড়ের ব্যথা, জয়েন্টের সমস্যা, অসংখ্য রাতের ক্লান্তি। তবু তিনি বলেন, “বুস্টা রাইমসের ‘Put Your Hands Where My Eyes Could See’ শুনলেই আমি আবার ফিরে যাই ১৬তম স্ট্রিটের সেই ক্লাবে, যেখানে মেঝেতে বিয়ারের গন্ধে বাতাস ভারী থাকত। সঙ্গীতের বেস শরীরের অণু পর্যন্ত বদলে দেয়—তাই এসব স্মৃতি মুছে যায় না।”
ক্লাবের ভেতরের কিংবদন্তি রাত
রনসনের আত্মজীবনী “Night People: How to Be a DJ in ’90s New York City”-তে উঠে এসেছে অসংখ্য অজানা গল্প। তিনি বইয়ের জন্য প্রায় ১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন—যারা তখন তাঁর চারপাশে ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে ছিলেন ডিজে বুথে বন্দি।
তিনি মনে করেন, সেই সময়টাকে সবচেয়ে জীবন্তভাবে ধরে রাখতে হলে প্রত্যেক সাক্ষীর কণ্ঠ দরকার ছিল। যেমন, এক রাতে বিগি স্মলস (Notorious B.I.G.) ক্লাবে আসেন পঞ্চাশ জন দেহরক্ষীসহ। প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার কারণে সবাইকে ঢুকতে সময় লাগে। রনসনের বন্ধু ফ্রাঙ্ক তখন বলেছিলেন, “বিগি দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ঘণ্টা ধরে, হাতে টাকার বান্ডিল, প্রতি পাঁচ মিনিটে একেকজনকে ঢোকাচ্ছেন।” এই দৃশ্যই তাঁর বইয়ের অন্যতম জীবন্ত অংশ।
‘হিপনোটাইজ’ বাজানোর প্রথম মুহূর্ত
রনসন স্মরণ করেন, “একজন প্রোমোশন ম্যানেজার আমাকে বিগির নতুন গান শুনতে দেন। সেটা ছিল এক বিশেষ অ্যাসিটেট ভিনাইল, যা মাত্র দশবার বাজানো যেত। আমি সেটা ক্লাবে বাজালাম, আর পুরো হল যেন বিস্ফোরিত হলো। সবাই প্রথমবার শুনছিল—৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ একই সঙ্গে। মনে হচ্ছিল, ঘরের প্রতিটি অণু কাঁপছে, যেন একসঙ্গে ৫০০ জনের উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ।”
কেন লিখলেন এই বই
রনসনের কথায়, “আমি বুঝেছিলাম, যত দিন এই গল্পগুলো নিজের মধ্যে রাখব, ততই সেগুলো ঝাপসা হয়ে যাবে।” তাঁর প্রিয় বন্ধু ও সহ-ডিজে ব্লু জেমজের মৃত্যু এই বই লেখার প্রেরণা দেয়। একসময় লে বেইন ক্লাবে তাঁদের যৌথ অনুষ্ঠান ছিল। বন্ধুর মৃত্যুপরবর্তী শোকেই রনসন বুঝেছিলেন—পুরোনো রেকর্ড, পুরোনো হিপহপ অ্যালবামগুলোর মধ্যে এখনো লুকিয়ে আছে গল্প, সময় আর অনুভূতি।
অ্যালিয়াহর সঙ্গে শেষ দেখা
রনসন জানান, “অ্যালিয়াহ আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, তাঁর নতুন ভিডিও ‘More Than a Woman’-এ থাকতে চাই কিনা। আমি প্রথমে যেতে চাইনি, কিন্তু শেষে রাজি হয়েছিলাম। সেটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা—তার কয়েক সপ্তাহ পরই দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। এখন ভাবি, সেই সাক্ষাৎই ছিল এক সৌভাগ্য।”
উত্তরাধিকার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
নিজের মেয়ের জন্য তিনি বইটি লিখেননি, তবে শেষদিকে ভাবতে শুরু করেন—এই গল্পগুলো একদিন তার কাছে কেমন লাগবে। রনসন বলেন, “সম্ভবত কিশোর বয়সে ও আমাকে বোকা মনে করবে, আমার কিছু পড়বে না। কিন্তু এখন সে সঙ্গীতে মগ্ন—তার ছোট রেকর্ড প্লেয়ার আছে, নিজের ৪৫ ভিনাইল বাজায়। তবে না, আমি ওকে ডিজে বানাতে চাই না।”
“Night People” শুধু এক ডিজের আত্মকথা নয়—এটি নব্বইয়ের নিউইয়র্ক সঙ্গীত সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। ক্লাব, সুর, বন্ধুত্ব, আর রাতের অদৃশ্য ভূতেরা আজও রনসনের মনে গেঁথে আছে—যেন শহরের প্রতিটি মোড়ে বাজছে তার অতীতের সুর।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















