৩০ বছর বয়সে অভিনেত্রী আয়ো এডেবিরি জানেন, তিনি কী করছেন—বড় বড় চরিত্রে অভিনয়, লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিপূর্ণ জীবন ও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনে অবস্থান সবই এখন তার নিয়ন্ত্রণে। তবু নিজের পথের সন্ধান নিয়ে তার ভাবনা থেমে নেই।
লস অ্যাঞ্জেলেসে সকালবেলার সাক্ষাৎ
সকাল আটটায় হাইল্যান্ড পার্কের এক ম্যাচা ক্যাফেতে দেখা। এরপর আয়ো নিজের ছোট গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যান অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল ফরেস্টের এক হাইকিং ট্রেইলে। নিউ ইয়র্কে অভ্যস্ত এই অভিনেত্রী এখন লস অ্যাঞ্জেলেসের ছন্দে মানিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিউ ইয়র্কে যত সকালেই ওঠো না কেন, কেউ না কেউ আগে থেকেই জেগে থাকে। কিন্তু এখানে দিনের শুরু অফিস সময়ের মতো।”

বেসবল টি-শার্ট, ট্র্যাক প্যান্ট, প্রিন্টেড হেডস্কার্ফ ও প্রাডার সানগ্লাসে তিনি যেন কোনো শুটিংয়ের আগের মুহূর্তে থাকা তারকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেদিনই তার উপস্থিতি ছিল জিমি কিমেল লাইভ অনুষ্ঠানে।
নিউ ইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস—অভ্যস্ত হওয়ার গল্প
এডেবিরি ছয় বছর আগে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে আসেন, যখন তিনি টেলিভিশনের জন্য লেখা শুরু করেন। তবু শুরুতে শহরটি তার কাছে নিঃসঙ্গ লাগত। “গত বছর পর্যন্ত আমি এখানে থাকার আনন্দ ঠিকভাবে পাইনি,” বলেন তিনি।
তার পরিবর্তনের সূত্র ধরেন ‘দ্য বেয়ার’-এর সহঅভিনেতা লায়নেল বয়েস ও তার বন্ধু টাইলার, দ্য ক্রিয়েটর ও ট্রাভিস বেনেটের সঙ্গে। এরা সবাই স্থানীয় অ্যাঞ্জেলিনো, যারা আয়োকে শহরের জীবন বুঝতে সাহায্য করেছেন। “আমরা একসঙ্গে সময় কাটাই, খাবার খাই, পার্কিং লটে আড্ডা দিই, উনো খেলি—পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনের মতো,” টাইলার বলেন।
আগুন, প্রতিবাদ আর সহমর্মিতার সন্ধান
২০২৫ সালের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়াবহ দাবানলের সময় আয়োকে অন্যদের সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার বাড়ি বেঁচে গেলেও বন্ধুদের অনেকের ঘর পুড়ে যায়। সেই একই সময়ে, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে আইস-বিরোধী ও “নো কিংস” আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন। তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—“ডোন’t ট্রেড অন আস।”

তিনি বলেন, “আমরা এক অদ্ভুত সহানুভূতির খরায় আছি। সবাই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”
বোস্টনের শেকড় ও শিল্পের পথে যাত্রা
বোস্টনের ডরচেস্টার এলাকায় জন্ম নেওয়া এডেবিরির বাবা নাইজেরীয়, মা বার্বাডিয়ান—কঠোর পেন্টেকোস্টাল খ্রিষ্টান। একসময় তার স্বপ্ন ছিল পাদরির স্ত্রী হওয়ার, কিন্তু স্কুলজীবনে ইমপ্রোভ ও থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কলেজে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির টিশ স্কুলে ড্রামাটিক রাইটিং পড়ার সময়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ভবিষ্যতের সহঅভিনেত্রী র্যাচেল সেনট ও পরিচালক এমা সেলিগম্যানের সঙ্গে।
‘দ্য বেয়ার’-এর সাফল্যে তারকা হয়ে ওঠা
‘দ্য বেয়ার’ সিরিজে সিডনি আদামুর ভূমিকায় অভিনয় করে আয়ো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। তার অভিনয়ে সূক্ষ্ম হাস্যরসের পাশাপাশি গভীর আবেগের প্রকাশ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অভিনেতা ও পরিচালক উইল শার্প বলেন, “তিনি একইসঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত, হাস্যরসিক এবং গভীরভাবে সংবেদনশীল।”
এই চরিত্রের জন্য তিনি এমি, গোল্ডেন গ্লোব, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও ক্রিটিকস চয়েস পুরস্কার জিতেছেন।

ফ্যাশনে উত্থান ও নতুন পরিচয়
রেড কার্পেটে ড্যানিয়েল গোল্ডবার্গের স্টাইলিংয়ে আয়ো পরিণত হয়েছেন ফ্যাশন আইকনে। প্রাডার লাল সাটিন গাউন থেকে ফেরাগামোর লেদার টেইলকোট—সব জায়গায় তিনি নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল প্রকাশ করেছেন। ২০২৫ সালের শরতে তিনি ম্যাথিউ ব্লেজির নতুন চ্যানেলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নির্বাচিত হন।
চ্যানেলের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ব্লেজি বলেন, “তিনি নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছেন। তার হাসি ও উপস্থিতি এমন যে চোখ ফেরানো কঠিন।”
অভিনয়, লেখালেখি ও ফ্যাশন—সবখানেই আয়ো এডেবিরি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবু নিজের যাত্রা নিয়ে তার ভাবনা বিনয়ী ও মানবিক। একদিকে হলিউডের উজ্জ্বল আলো, অন্যদিকে তার আত্মজিজ্ঞাসার নিঃশব্দ সন্ধান—এই দুইয়ের ভারসাম্যেই গঠিত আজকের আয়ো এডেবিরি।
#আয়োএডেবিরি #দ্যবেয়ার #হলিউড #ফ্যাশন #চ্যানেল #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















