০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ফার্মগেটে মেট্রোর বেয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণ গেল এক পথচারীর, মেট্রো চলাচলস্থগিত সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নবম কর্নেল কমান্ড্যান্ট সরকার গঠন করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা জং সো মিন: ‘ডাঙ্গাল’, ‘Would You Marry Me’ এবং ভাগ্যের মায়া তানজানিয়া ও আইভরি কোস্টে স্থিতিশীলতার আড়ালে অস্থিরতার আশঙ্কা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে কাতারের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা কৌশল যুদ্ধোত্তর ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি—বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে নতুন গতি ট্রাম্পের শুল্কনীতি তামা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে প্রযুক্তি, নৈতিকতা ও পিতৃত্বের নতুন প্রশ্নে ফিরে এল মেরি শেলির অমর সৃষ্টি

‘বিচ র্যাটস’ থেকে কানে-জয়ী চলচ্চিত্র ‘আর্চিন’: ২৯ বছর বয়সে লেখক ও পরিচালক হিসেবে হ্যারিস ডিকিনসনের আত্মপ্রকাশ

ব্রিটিশ অভিনেতা হ্যারিস ডিকিনসন শুধু অভিনয়ে নয়, এখন চলচ্চিত্র নির্মাণেও নিজের স্বাক্ষর রাখছেন। কানে প্রিমিয়ার হওয়া তাঁর লেখা ও পরিচালিত চলচ্চিত্র আর্চিন তাঁকে নতুন মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে—অভিনেতা থেকে এক প্রতিশ্রুতিশীল পরিচালক।


শুরুর গল্প: এক স্কুল ভবনের অফিস থেকে কানের লাল গালিচায়

গ্রীষ্মের এক বিকেলে পূর্ব লন্ডনের একটি পুরনো স্কুল ভবনে দেখা মেলে ২৯ বছর বয়সী হ্যারিস ডিকিনসনের। এখন সেটি তাঁর প্রোডাকশন কোম্পানি Devisio Pictures-এর অফিস। সাদামাটা টি-শার্ট ও কার্গো প্যান্ট পরা ডিকিনসন যেন এক পরিশ্রমী উদ্যোক্তা—কোণে বড় মনিটরে তিনি নিজেই সম্পাদনা করেছেন আর্চিন-এর প্রথম কাট।
চলচ্চিত্রটি মাত্র দুই মাস আগে কানে প্রিমিয়ার হয়, যেখানে তিনি পরেছিলেন প্রাডার ডাবল-ব্রেস্টেড স্যুট, আর আলোকচিত্রীদের ফ্ল্যাশে ঝলসে উঠেছিল তাঁর মুখ। এখন সেই গ্ল্যামার থেকে অনেক দূরে, তিনি স্মৃতিচারণ করেন: ‘স্ক্রিনিং-এর ১০ মিনিট আগে মনে হচ্ছিল ভেঙে পড়ব—এতটা নার্ভাস কখনো হইনি।’


‘আর্চিন’: লন্ডনের রাস্তায় এক মানুষের লড়াই

চলচ্চিত্র আর্চিন লন্ডনের এক গৃহহীন তরুণের (ফ্র্যাঙ্ক ডিলেন অভিনীত) মানসিক অস্থিরতা ও আসক্তির গল্প। সমালোচকরা একে গভীর মানবিক নাটক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কানে এটি দুটি পুরস্কার জেতে—সমালোচক পুরস্কার ও সেরা অভিনেতার স্বীকৃতি। ডিকিনসনের ভাষায়, ‘মানুষ যখন বলে, “তুমি পাগল নও, তোমার কাজ সার্থক হয়েছে,” তখন সেটাই আসল পুরস্কার।’


অভিনেতা থেকে পরিচালক: সাহসী এক রূপান্তর

কানে স্কারলেট জোহানসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের মতো অভিনেতারাও তাঁদের পরিচালনা-প্রথম প্রদর্শন করেন। ডিকিনসন বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছু সন্দেহ ছিল। কেউ কেউ বলেছিল আমি নাকি শুধু “দুধ অর্ডার করতেই পারি।” এই ধরনের মন্তব্য সত্যিই অপমানজনক।’
কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন—চলচ্চিত্র বানানোর ইচ্ছা তাঁর বহু বছরের, এবং তিনি তা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।


অভিনয়ের সাফল্য: ‘বিচ র্যাটস’ থেকে ‘বেবিগার্ল’

২০১৭ সালের বিচ র্যাটস-এ এক তরুণের অন্তর্দ্বন্দ্বময় চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন ডিকিনসন। এরপর Where the Crawdads SingThe Iron Claw, এবং রুবেন অস্টলুন্ডের Triangle of Sadness-এ তিনি নানা রূপে ধরা দেন।
গত বছর নিকোল কিডম্যানের বিপরীতে Babygirl-এ অভিনয়ে তিনি তুলে ধরেন এক ইন্টার্নের জটিল সম্পর্কের গল্প।


পরিবার ও শিকড়: শ্রমজীবী ঘর থেকে চলচ্চিত্র জগতে

পূর্ব লন্ডনের হাইয়ামস পার্ক-এ জন্ম নেওয়া ডিকিনসনের মা একজন হেয়ারড্রেসার ও বাবা একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা বানানোর।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন অনেক কাজ করেছি যা হয়তো শিল্পগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কিন্তু সেগুলোই সুযোগ এনে দিয়েছে।’
আর্চিন পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁকে বেশ কিছু অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়, কারণ তহবিল ও সময় দুই-ই অনিশ্চিত ছিল। তবু তিনি সিদ্ধান্ত নেন—‘এটা এমন কিছু, যা না করলে শান্তি পাব না।’


এক দশকের প্রস্তুতি

মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি Sony Handycam-এ স্কেটবোর্ডিং ভিডিও বানাতেন। ১৪ বছর বয়সে তৈরি করতেন মাইক লি ও শেন মিডোজের প্রভাবে ছোট ছোট গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র।
নিজের ভাষায়, ‘আমি তখনই গভীর ও ভারী গল্প লিখতাম। সম্ভবত তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটাই আমার পথ।’


অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হ্যারিস ডিকিনসনের নতুন পরিচয় এখন পরিচালক ও লেখক। আর্চিন তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে—যেখানে ঝুঁকি আছে, কিন্তু আছে পরিপূর্ণতার তীব্র তাগিদ।

#হ্যারিস_ডিকিনসন,# আর্চিন, #কান #_ফিল্ম_ফেস্টিভ্যাল,# ব্রিটিশ#_সিনেমা, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ফার্মগেটে মেট্রোর বেয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণ গেল এক পথচারীর, মেট্রো চলাচলস্থগিত

‘বিচ র্যাটস’ থেকে কানে-জয়ী চলচ্চিত্র ‘আর্চিন’: ২৯ বছর বয়সে লেখক ও পরিচালক হিসেবে হ্যারিস ডিকিনসনের আত্মপ্রকাশ

১১:০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

ব্রিটিশ অভিনেতা হ্যারিস ডিকিনসন শুধু অভিনয়ে নয়, এখন চলচ্চিত্র নির্মাণেও নিজের স্বাক্ষর রাখছেন। কানে প্রিমিয়ার হওয়া তাঁর লেখা ও পরিচালিত চলচ্চিত্র আর্চিন তাঁকে নতুন মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে—অভিনেতা থেকে এক প্রতিশ্রুতিশীল পরিচালক।


শুরুর গল্প: এক স্কুল ভবনের অফিস থেকে কানের লাল গালিচায়

গ্রীষ্মের এক বিকেলে পূর্ব লন্ডনের একটি পুরনো স্কুল ভবনে দেখা মেলে ২৯ বছর বয়সী হ্যারিস ডিকিনসনের। এখন সেটি তাঁর প্রোডাকশন কোম্পানি Devisio Pictures-এর অফিস। সাদামাটা টি-শার্ট ও কার্গো প্যান্ট পরা ডিকিনসন যেন এক পরিশ্রমী উদ্যোক্তা—কোণে বড় মনিটরে তিনি নিজেই সম্পাদনা করেছেন আর্চিন-এর প্রথম কাট।
চলচ্চিত্রটি মাত্র দুই মাস আগে কানে প্রিমিয়ার হয়, যেখানে তিনি পরেছিলেন প্রাডার ডাবল-ব্রেস্টেড স্যুট, আর আলোকচিত্রীদের ফ্ল্যাশে ঝলসে উঠেছিল তাঁর মুখ। এখন সেই গ্ল্যামার থেকে অনেক দূরে, তিনি স্মৃতিচারণ করেন: ‘স্ক্রিনিং-এর ১০ মিনিট আগে মনে হচ্ছিল ভেঙে পড়ব—এতটা নার্ভাস কখনো হইনি।’


‘আর্চিন’: লন্ডনের রাস্তায় এক মানুষের লড়াই

চলচ্চিত্র আর্চিন লন্ডনের এক গৃহহীন তরুণের (ফ্র্যাঙ্ক ডিলেন অভিনীত) মানসিক অস্থিরতা ও আসক্তির গল্প। সমালোচকরা একে গভীর মানবিক নাটক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কানে এটি দুটি পুরস্কার জেতে—সমালোচক পুরস্কার ও সেরা অভিনেতার স্বীকৃতি। ডিকিনসনের ভাষায়, ‘মানুষ যখন বলে, “তুমি পাগল নও, তোমার কাজ সার্থক হয়েছে,” তখন সেটাই আসল পুরস্কার।’


অভিনেতা থেকে পরিচালক: সাহসী এক রূপান্তর

কানে স্কারলেট জোহানসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের মতো অভিনেতারাও তাঁদের পরিচালনা-প্রথম প্রদর্শন করেন। ডিকিনসন বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছু সন্দেহ ছিল। কেউ কেউ বলেছিল আমি নাকি শুধু “দুধ অর্ডার করতেই পারি।” এই ধরনের মন্তব্য সত্যিই অপমানজনক।’
কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন—চলচ্চিত্র বানানোর ইচ্ছা তাঁর বহু বছরের, এবং তিনি তা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।


অভিনয়ের সাফল্য: ‘বিচ র্যাটস’ থেকে ‘বেবিগার্ল’

২০১৭ সালের বিচ র্যাটস-এ এক তরুণের অন্তর্দ্বন্দ্বময় চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন ডিকিনসন। এরপর Where the Crawdads SingThe Iron Claw, এবং রুবেন অস্টলুন্ডের Triangle of Sadness-এ তিনি নানা রূপে ধরা দেন।
গত বছর নিকোল কিডম্যানের বিপরীতে Babygirl-এ অভিনয়ে তিনি তুলে ধরেন এক ইন্টার্নের জটিল সম্পর্কের গল্প।


পরিবার ও শিকড়: শ্রমজীবী ঘর থেকে চলচ্চিত্র জগতে

পূর্ব লন্ডনের হাইয়ামস পার্ক-এ জন্ম নেওয়া ডিকিনসনের মা একজন হেয়ারড্রেসার ও বাবা একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা বানানোর।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন অনেক কাজ করেছি যা হয়তো শিল্পগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কিন্তু সেগুলোই সুযোগ এনে দিয়েছে।’
আর্চিন পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁকে বেশ কিছু অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়, কারণ তহবিল ও সময় দুই-ই অনিশ্চিত ছিল। তবু তিনি সিদ্ধান্ত নেন—‘এটা এমন কিছু, যা না করলে শান্তি পাব না।’


এক দশকের প্রস্তুতি

মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি Sony Handycam-এ স্কেটবোর্ডিং ভিডিও বানাতেন। ১৪ বছর বয়সে তৈরি করতেন মাইক লি ও শেন মিডোজের প্রভাবে ছোট ছোট গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র।
নিজের ভাষায়, ‘আমি তখনই গভীর ও ভারী গল্প লিখতাম। সম্ভবত তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটাই আমার পথ।’


অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হ্যারিস ডিকিনসনের নতুন পরিচয় এখন পরিচালক ও লেখক। আর্চিন তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে—যেখানে ঝুঁকি আছে, কিন্তু আছে পরিপূর্ণতার তীব্র তাগিদ।

#হ্যারিস_ডিকিনসন,# আর্চিন, #কান #_ফিল্ম_ফেস্টিভ্যাল,# ব্রিটিশ#_সিনেমা, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট