দুই দশকের অভিনয়যাত্রা পেরিয়ে ৪২ বছর বয়সে এসে গ্রেটা লি এখন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন আইকন ও হলিউডের আলোচিত অভিনেত্রী। খ্যাতি, সাফল্য ও ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনের মাঝেও তিনি শিখছেন—কীভাবে নিজের আনন্দ ও পরিচয়কে রক্ষা করতে হয়।
ক্রোয়েশিয়ার দ্বীপে নির্জনতা খোঁজার গল্প
দীর্ঘ পাঁচ মাসের ক্লান্তিকর শুটিং শেষে Tron: Ares ছবির কাজ শেষ করেই গ্রেটা লি পরিবারসহ ক্রোয়েশিয়ার লোপুদ নামের এক ছোট দ্বীপে যান। সূর্যালোকিত, নির্জন আর সাইপ্রাসগাছে ঘেরা সেই দ্বীপে তিনি খুঁজছিলেন শান্তি ও গোপনীয়তা—হলিউড থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকার সময়।
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে পাশের বাড়িতেই ছিলেন দুই বিখ্যাত পরিচালক রুবেন অস্টলুন্ড ও শন বেকার। লি মজা করে বলেন, “আমি বিশেষভাবে এমন জায়গাই খুঁজেছিলাম যেখানে কাউকে না দেখি। তাই যখন বুঝলাম কে পাশেই আছেন, আমি তো পালিয়ে গেলাম!”

দুই দশক পর খ্যাতির দেখা
প্রায় ২০ বছর অভিনয়ের পর গ্রেটা লি-র ক্যারিয়ার নতুন মোড় নেয় ২০২৩ সালে Past Lives চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সেখানে নোরা চরিত্রে তাঁর অভিনয় তাঁকে এনে দেয় Golden Globe, Critics Choice ও Independent Spirit Award–এর মনোনয়ন।
এরপর এল ধারাবাহিক কাজ—Tron: Ares, ক্যাথরিন বিগেলোর থ্রিলার A House of Dynamite, The Morning Show–এর নতুন সিজন এবং ইন্ডি ড্রামা Late Fame।
“আমার বয়সে এসে এমন সাফল্য পাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত,” বলেন তিনি। “কখনো ভাবিনি চল্লিশের পরেও নতুন চরিত্রের অফার পাব।”
ফ্যাশন দুনিয়ার নতুন মুখ
রেড কার্পেটেও গ্রেটা লি এখন এক অনন্য নাম। প্রচলিত সৌন্দর্যের ছক ভেঙে, তিনি পছন্দ করেন সাহসী, কাঠামোগত ও অনন্য পোশাক। ডিজাইনার জোনাথন অ্যান্ডারসনের সঙ্গে তাঁর কাজ শুরু লোয়েভে, আর এখন তিনি Dior-এর গ্লোবাল অ্যাম্বাসাডর।
নতুন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অ্যান্ডারসনের হাত ধরে ডিওরের আধুনিক যুগে লি হচ্ছেন অন্যতম মুখ।
শিকড় ও পরিবার: লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে হলিউড
লস অ্যাঞ্জেলেসের লা ক্যানাডা ফ্লিন্টরিজ এলাকায় বড় হওয়া গ্রেটা দক্ষিণ কোরীয় অভিবাসী পরিবারের বড় মেয়ে। মা ছিলেন পিয়ানোবাদক, আর তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত বাজত অপেরা সঙ্গীত। ছোটবেলায় গান, নাচ, ছবি আঁকা—সবই ছিল তার জীবনের অংশ।
তবে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে পরিবারের দ্বিধা ছিল প্রবল। বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়। কিন্তু নাটকের প্রতি আগ্রহ ও শিল্পচর্চার ভালোবাসাই তাঁকে যুক্ত করে Northwestern University–তে নাট্যশিক্ষায়।

“Tron: Ares” ও নতুন চ্যালেঞ্জ
দীর্ঘ বিরতির পর Tron: Ares–এর অডিশন দেন গ্রেটা। চরিত্রটি ছিল Past Lives–এর নরম বাস্তবধর্মী পরিবেশের সম্পূর্ণ বিপরীত—একজন প্রোগ্রামার, যে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করে।
লি বলেন, “আমরা যখন সাফল্যের মুখ দেখি, তখন চারপাশে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। আমি সেই দূরত্ব পছন্দ করি না। আমি চাই সাধারণ মানুষের সঙ্গেই সংযোগ রাখতে।”
“Late Fame”: শিল্প, স্বীকৃতি ও বিভ্রান্তি
কেন্ট জোন্স পরিচালিত Late Fame চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন উইলেম ড্যাফোর সঙ্গে। এটি খ্যাতি ও শিল্পচর্চার জটিল সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত এক সূক্ষ্ম চলচ্চিত্র।
ড্যাফো বলেন, “গ্রেটা খুব সরাসরি, কিন্তু রহস্যময়ও বটে। তাঁকে সহজে সংজ্ঞায়িত করা যায় না—এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।”
সঙ্গীত, নাচ ও শরীরচর্চায় ভরপুর জীবন
শৈশব থেকেই নাচ ও সংগীতে পারদর্শী গ্রেটা এখনো সক্রিয় শরীরচর্চায়। নিজেকে তিনি বলেন “Tracy Anderson addict”, প্রতিদিন ফিটনেস স্টুডিওতে যান।
তিনি বলেন, “আমি জীবনের প্রতি লোভী। আমি আনন্দের জন্য সময় নিই, পরিবারে আরও সন্তান নিতে চাই।”

এল.এ.-এর অফ-গ্রিড জীবন
নিউ ইয়র্কে ১৫ বছর কাটিয়ে ২০২০ সালে পরিবারসহ এল.এ.-তে আসেন লি। পাহাড়ে ঘেরা ছোট এক বাড়িতে তাঁরা বাস করেন, যেখানে কায়োট ও সাপও দেখা মেলে। “এ যেন ওয়াইল্ড ওয়েস্টে বসবাসের মতো,” তিনি হাসতে হাসতে বলেন।
লেখক ও পরিচালক হিসেবে নতুন যাত্রা
গ্রেটা লি এখন The Eyes Are the Best Part নামের মনিকা কিমের উপন্যাস অবলম্বনে একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার পরিচালনা ও লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গল্পটি এক কোরীয়-আমেরিকান পরিবারের ওপর, যেখানে রয়েছে রহস্য, অপরাধ ও আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান।
তিনি বলেন, “আমি সেই সুযোগ দিতে চাই যা আমার সময়ে কেউ দেয়নি। সেই অভাবই এখন আমাকে চালিত করে।”
ডিওরের ‘লেডি’ নন, বরং নতুন সংজ্ঞার নারী
ডিওরের বিজ্ঞাপনে “Je suis Lady Dior” বলা নিয়ে লি মজা করে বলেন, “আমি তো নিজেকে লেডি ভাবি না! কিন্তু এই জটিলতাই হয়তো তাদের পছন্দ।”
তার ফ্যাশন আইডল টুইলা থার্প ও ক্যাথরিন হেপবার্নের মতোই তিনি বাস্তব ও শক্তিশালী নারীর প্রতিনিধিত্ব করেন—যারা পোশাককে ব্যবহার করেন ব্যক্তিত্বের ভাষা হিসেবে।
ভেনিস উৎসব ও ফ্যাশন–অভিনয়ের মেলবন্ধন
ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তিনি A House of Dynamite ও Late Fame–এর প্রিমিয়ারে অংশ নেন ডিওরের পোশাকে। ডিজাইনার অ্যান্ডারসন বলেন, “গ্রেটা নিজের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত, সাহসী, এবং পোশাকে ঝুঁকি নিতে ভয় পান না।”

স্মার্টফোনবিহীন সময়ের প্রতি নস্টালজিয়া
লি বলেন, “আমি ফোনে নিজের ছবি দেখি না। আমরা একসময় নাচতাম, হাসতাম—এখন সবাই ক্যামেরার সামনে অভিনয় করে। সেই পুরোনো আনন্দটাই আমি ফিরে পেতে চাই।”
অভিনয়, ফ্যাশন, মাতৃত্ব ও সৃষ্টিশীল স্বাধীনতা—সবকিছুর ভেতর দিয়ে গ্রেটা লি আজ নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। তাঁর ভাষায়, “জীবনকে আমি পুরোপুরি নিংড়ে নিতে চাই, যেন এক ফোঁটাও না থাকে। সেটাই আমার আনন্দ।”
#গ্রেটা_লি,# ভোগ,# হলিউড# ডিওর,# ফ্যাশন_#আইকন, #পাস্ট_#লাইভস, #নারী_শিল্পী, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















