একটা কবিতা লিখবো বহুদিন বহুরাত গত;
আহত নিহত যত শব্দ আছে জমা করে রাখি
চুলখোলা অন্ধকারে, ধর্ষিতার বিধ্বস্ত উদ্যানে —
না, কবিতা আসে না আর পরাধীন বিবর্ণ খাতায়।
অভিধান খুলে দেখি আহা! আমাদের শব্দগুচ্ছ
কবিতা লেখার জন্য আজ আর উপযোগী নয়;
যে শক্তি-সাহস ছিল আমাদের শব্দের ভেতর
তা নাকি এখন নেই ; কেন নেই কেউ কি বলবেন?
কোথাও খবরে আর এসব দেখিনা উড়ে এসে
জুড়ে বসা কতিপয় গোত্রহীন লুটেরা ডাকাত
কী অদ্ভুত চাল দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে গেছে
পাখির আকাশ থেকে নীল আর বাতাসের গান,
নদীর উজান টানে জন্ম নেয়া জলের উচ্ছ্বাস:
একটা নতুন বন্দোবস্ত জারি হলো ঘরে ঘরে —
ওই বাজছে সতর্ক সংকেত –কেউ কথা বলিবে না,
সকলেই মনে রেখো একট পুরনো মূল্যহীন
অচল আধুলি হলো রক্ত দিয়ে চড়া দামে কেনা
তোমাদের ওই ঠুনকো স্বাধীনতা — ওটা নিয়ে আর
কোনো কথা নয়,কোনো গান নয়–জিহ্বা কাটা যাবে।
প্রতারিত দেশপ্রেম বিক্রি করে মায়ের ইজ্জত–
বাহারি আলোর সাজে সেনাকুঞ্জে বিয়ের উৎসব :
মৃতকে মৃতের মতো আর কত বেঁচে থাকতে হবে!
২.
কবিতা এখন আর স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে
চিৎকার করে না; ওর কণ্ঠে বরফের মতো ঠান্ডা
একটা শীতল মহামারী রোগের জীবাণু আজ
বসত গেড়েছে; যারা বলে কবিতার আছে নাকি
অপার ঐশ্বর্য আর অলৌকিক শক্তি তারা কেউ
নির্বাসনে আত্মবন্দী আর কেউ নাকি জন্মখোজা–
খোজার পিরিতি দিয়ে কবিতায়
ক্ষমতা থাকে না।
ক্ষমতা এখন এক ধুরন্ধর শিয়াল পন্ডিত ,
যাকে নিয়ে মহানন্দে হাম্বা এক বুড়ো দৈত্যরাজ
কী যে সব আজগুবি হাবিজাবি
সার্কাস দেখাচ্ছে!
যে জন কুসভ্য আর কুশিক্ষিত যত সে-ই জন
তত বেশি সার্কাস পছন্দ করে — আমি কুশিক্ষিত
কতদিন সার্কাস দেখিনি! বহুরাত জেগে জেগে
কবিতা না লিখে তাই সার্কাসের একটা টিকেট
সংগ্রহের অপেক্ষায় আছি; কখনো সার্কাস দেখতে
একটা সুযোগ যদি ভুলে ভাগ্যগুণে পেয়ে পাই!
তাহলে নিশ্চিত হয়ে জোর দিয়ে বলতে পারি আমি
বাঘের খাঁচার মধ্যে সুকৌশলে বন্দী করে রাখা
আমাদের রক্ত থেকে জন্ম নেয়া নীল বর্ণগুলো
সিংহের গর্জনে চোখ খুলে ঘুম থেকে জেগে উঠবে–
চিড়িয়াখানার জলাশয়ে ওই গণ্ডারের মতো
আকাশের দিকে যারা মুখ তুুলে
তাকিয়ে রয়েছে
তারা অন্ধ নয়; কিন্তু লোভ ও মোহের টানে যারা
অন্ধকারে চোরাপথে হাঁটে লোকে বলে
তারা নাকি
জনারণ্যে জনতার ছদ্মবেশে বেশ্যার দালাল;
যে গেছে বেশ্যার ঘরে সেও চায় বারবার যেতে–
ক্ষমতা এমন মধু আহা! একবার স্বাদ পেলে
বারবার খেতে মন চায়; ক্ষমতা পেয়েছে যারা
চোখ থাকতে ওরা অন্ধ হয়ে গেছে! কবে শেষ হবে
ওদের অন্ধত্ব — শেষ হবে অবাঞ্ছিত গ্রহণের ঋতু?
ওই হেরা পর্বতের পাদদেশে এই তো সেদিন
অপরাহ্নো দাঁড়িয়ে হঠাৎ আমি
চোখ বন্ধ করে একটা
গায়েবি আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে উঠেছি :
ভয় করো না মরণে
থাকবে তুমি স্মরণে
গান ধরো তিমির বিনাশী
তুমি বীর বঙ্গবাসী
দিন আসবে — দূর হবে অন্ধকার
বন্ধ হবে বলাৎকার
বাঘের ক্ষুধার কাছ থেকে মুক্ত হরিণীর কাছে
যখন ভোরের আলো আসবে হাওয়াকে জড়িয়ে গায়ে।
মৌলিক মানুষ থেকে জন্ম নেবে মৌলিক সুন্দর
এবং সেদিন যদি বাঁচি আমি সেই কবিতাটি
রক্ত দিয়ে লিখে রাখবো আলোকিত সে- সত্যের নামে,
তায়েফের পবিত্র পর্বত কুঞ্জে যে সত্যের জন্য
অধীর অপেক্ষা নিয়ে বসে আছে
আমার সন্তান।
আসাদ মান্নান 


















