কয়েক মাসের স্থবিরতা কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে নতুন গতি ফিরছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সামান্য বৃদ্ধি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদিও সামগ্রিকভাবে এই খাতের আমদানি এখনো এক বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে।
ধীর অর্থনীতিতে নতুন গতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের (চলতি অর্থবছরের) প্রথম দুই মাসে—জুলাই ও আগস্টে—মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ০.৭২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ২৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৬২ মিলিয়ন ডলার।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে আমদানি ২৫.৪১ শতাংশ কমে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা আগের বছরের ২.৩৪ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পতন নির্দেশ করে।

আমদানি বৃদ্ধির পেছনে কারণ
বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, স্থিতিশীল বিনিময় হার এবং বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় আমদানি আদেশের পরিমাণ বাড়ছে।
বিবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে, ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন সহজে এলসি খুলতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, “এটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরে ধীরে পুনর্জাগরণের স্পষ্ট ইঙ্গিত।”
অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ বেড়ে ৬.২২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগস্টের ৫.৩৮ বিলিয়নের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। জুলাইয়ে ছিল ৬.০৩ বিলিয়ন ডলার এবং জুনে ৪.১৪ বিলিয়ন ডলার।
ব্যবসায়ীদের ভিন্ন মত
তবে ব্যবসায়ী মহল এখনো আশাবাদী নয়। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, “সাধারণত মূলধনী যন্ত্রপাতির বার্ষিক আমদানি ২.৫ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকে, এখন তা নেমে এসেছে এক বিলিয়নের নিচে—এতে বোঝা যায় শিল্প সম্প্রসারণ ঘটছে না, কেবল রক্ষণাবেক্ষণ চলছে।”
তিনি আরও জানান, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগস্টে নেমে এসেছে ৬.৩৫ শতাংশে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। “বর্তমান ব্যবসাবান্ধব নয় এমন পরিবেশে অনেক শিল্প টিকে থাকতে পারছে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যাংক ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সাইয়েদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল টাকার বিনিময় হার সাম্প্রতিক সময়ে আমদানিকে উৎসাহিত করেছে। নির্বাচনের পর এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।”

নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মসরুর রিয়াজ বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের ফলে নির্মাণ খাতে কিছু প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাবে অর্থনীতিতে সামান্য গতি এসেছে। তবে এখনই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঘোষণা করা যাবে না, কারণ মধ্যবর্তী পণ্য ও রপ্তানি খাত এখনো দুর্বল। আরও কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।”
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকায় আমদানিতে নতুন গতি এসেছে, যা অর্থনীতিতে আশার সঞ্চার করছে। তবে ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা একমত যে, প্রকৃত পুনরুদ্ধারের জন্য শিল্প সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রয়োজন। অর্থনীতির এই ‘ধীর পুনর্জাগরণ’ টেকসই হবে কিনা—তা নির্ভর করছে আগামী মাসগুলোর কার্যক্রমের ওপর।
#t বাংলাদেশ_অর্থনীতি, মূলধনী_যন্ত্রপাতি, আমদানি_বৃদ্ধি, বিনিময়_হার, বৈদেশিক_মুদ্রা, রেমিট্যান্স, বাংলাদেশ_ব্যাংক, শিল্প_পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক_বিশ্লেষণ, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















