বৈশ্বিক তেল সরবরাহের ১৫ শতাংশ এখন নিষেধাজ্ঞার আওতায়
বৈশ্বিক তেলের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার অধীনে—এ তথ্য দিয়েছে তেলবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলার। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর রাশিয়াকে নতুন পথ খুঁজে নিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইরান কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তেল রপ্তানি বজায় রাখতে পারে, রাশিয়াও সেই সক্ষমতা দেখাতে পারবে।
নিষেধাজ্ঞার পর বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি
গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫ ডলার বেড়ে ৬৬ ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার প্রধান দুটি তেল উৎপাদক—রসনেফট ও লুকওইল—এর ওপর আরোপিত হয়। এর ফলে চীন ও ভারতের মতো প্রধান ক্রেতা দেশগুলোর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তুলনামূলক কম হতে পারে। কমোডিটি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আর্গাস মিডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট টম রিড জানান, ব্রেন্ট ও দুবাই তেলের মূল্যের ব্যবধান সংকুচিত হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়—চীন ও ভারত রাশিয়ার তেলের বিকল্প হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের তেল কেনা বাড়িয়েছে।
ভারতের ওপর প্রভাব: রসনেফট ও লুকওইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভারতের ওপর দ্রুত প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগের ট্রাম্প প্রশাসনের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরও ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছিল। তবে এখন নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হওয়ায় পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ভারত দৈনিক ১.৫৭ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল কিনেছে—যা জুলাই মাসের (১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল) তুলনায় সামান্য কম।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, রসনেফটের অন্যতম বড় ক্রেতা, জানিয়েছে তারা বর্তমানে রুশ তেল কেনার বিষয়ে “পুনর্মূল্যায়ন” করছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান রসনেফট বা লুকওইলের সঙ্গে ব্যবসা করছে, তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষভাবে নির্ধারিত নিষিদ্ধ ব্যক্তি তালিকায় (SDN List) যুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কঠিন হয়ে পড়বে এবং ডলারভিত্তিক পেমেন্ট ব্যবস্থায় প্রবেশ সীমিত হবে।
চীনের অবস্থান: রাষ্ট্রায়ত্ত বনাম বেসরকারি রিফাইনারি
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগারগুলো আপাতত রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল কেনায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তবে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো ঝুঁকি নিয়ে কিছু কার্গো নিতে পারে। যেমন ইরানের নিষিদ্ধ তেল এখন মূলত চীনের শানডং অঞ্চলের ছোট স্বাধীন রিফাইনারিগুলো কিনে থাকে।
তবে এই বছর তাদের ক্রয়কোটা প্রায় শেষ হয়ে আসায় রাশিয়ার অতিরিক্ত তেল শোষণ করার সম্ভাবনা কম।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেল রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড
যদিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় তেলের পরিমাণ বেড়েছে, বৈশ্বিক সরবরাহে তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং গত মাসে রাশিয়ার তেল রপ্তানি রেকর্ড ছুঁয়েছে, আর ইরানের রপ্তানি ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে—জানিয়েছেন ভর্টেক্সা’র সামুদ্রিক ঝুঁকি বিশ্লেষক ক্লেয়ার জাংম্যান।
এই বছরই ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের জ্বালানি খাতের ওপর ১২টির বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে ইরান তার তেল গভীর ছাড়ে বিক্রি করলেও রপ্তানি বজায় রেখেছে। এর পেছনে রয়েছে জটিল গোপন পরিবহন নেটওয়ার্ক, যেখানে “শ্যাডো ফ্লিট” নামে পরিচিত ট্যাঙ্কার বহর এখন আগের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে।
রাশিয়াও সম্ভবত একই পথ নেবে—নতুন সরবরাহ চেইন তৈরি করবে, জাহাজের অবস্থান লুকাতে ট্রান্সপন্ডার বিকৃতি করবে এবং জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর বাড়াবে।
চীনের কৌশলগত মজুত গড়ে তোলা
ওয়াশিংটনের নতুন নিষেধাজ্ঞা চীনের জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। চীন প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল রুশ পাইপলাইন তেল আমদানি করে, যা এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। যদিও চীন রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা বন্ধ করবে না, তবে তারা দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তাকে আরও গুরুত্ব দেবে।

এই বছর চীন তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে তেল কিনেছে। সম্ভবত তারা তেলের দাম কমে যাওয়ায় কৌশলগত মজুত গড়ে তুলছে। বর্তমানে তাদের সংরক্ষণাগারের প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গা পূর্ণ, যা বাড়ানোর সুযোগ আছে।
চাপের মুখেও রাশিয়ার জ্বালানি টিকে থাকবে
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার প্রতিটি তেল কার্গো এখন বেচাকেনায় আরও সময়সাপেক্ষ, জটিল ও ব্যয়বহুল হবে। তবুও বৈশ্বিক তেল সরবরাহে বড় ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ফল হতে পারে—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ তহবিল সংকুচিত হবে, অথচ ভোক্তারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে কিছুটা রেহাই পাবে।
# রাশিয়া_তেল_#নিষেধাজ্ঞা,# যুক্তরাষ্ট্র_#রাশিয়া_সম্পর্ক, #চীন_#ভারত_#তেল,# বৈশ্বিক_#জ্বালানি#_বাজার,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















