০৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
কয়লা খনি নিয়ে বিভক্ত নাহদলাতুল উলামা: ধর্মীয় সংগঠনে রাজনীতি ও ব্যবসার টানাপোড়েন শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি খালেদা জিয়ার মৃত্যু: রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা মুন্সিগঞ্জে ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ড; দ্রুত নিয়ন্ত্রণে বড় ক্ষতি এড়ানো গেল এক চিলতে আগুনেই সর্বনাশ, খুলনার বাজারগুলোয় অগ্নিঝুঁকির নীরব আতঙ্ক খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা: জামায়াত নেতা তাহের ইসরায়েলের পদক্ষেপের পর তুরস্কে সোমালি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক বৈঠক সুইস কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন এক এনআইডিতে পাঁচ সিম সীমা গুজব: টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ

রিগ্যান বনাম ট্রাম্প-‘ফ্রি ট্রেড’-এর পক্ষে রিগ্যান, অথচ ট্রাম্পের হাতিয়ার সুরক্ষা নীতি

কানাডা-বিরোধী ট্রাম্পের ক্ষোভের পেছনে রিগ্যানের বক্তব্য

রোনাল্ড রিগ্যানকে অনেকেই আজ ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মনে করেন, কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আচরণ প্রমাণ করে — রিগ্যান এখনও প্রাসঙ্গিক। কানাডার অন্টারিও প্রদেশে প্রচারিত এক বিজ্ঞাপন ট্রাম্পের তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দিয়েছে।

অন্টারিও সরকার ১৯৮৭ সালের রিগ্যানের এক বক্তৃতার অংশ প্রচার করে, যেখানে তিনি সুরক্ষা নীতির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেটিকে “ভুয়া বিজ্ঞাপন” বলে অভিযুক্ত করেন এবং দাবি করেন, এটি নাকি সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রভাব ফেলতে তৈরি করা হয়েছে — যেখানে তার নির্বিচার শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে শুনানি চলছে। এরপরপরই ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দেন।

অতিরিক্ত শুল্ক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা

অন্টারিও কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও সেটি সপ্তাহান্তে ক্রীড়া সম্প্রচারের সময় প্রচারিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প, কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা পূর্ববর্তী করের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটি টিভি বিজ্ঞাপন দেখে বিদেশি পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিক কর বাড়ানো একধরনের একনায়কতান্ত্রিক আচরণ, যা মার্কিন সংবিধানের ক্ষমতা-বণ্টনের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

Trump Announces Tariff Increase on Canada Over Reagan Ad Spat - The New  York Times

রিগ্যানের আসল অবস্থান: মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে

ট্রাম্প দাবি করেছেন, “রোনাল্ড রিগ্যান জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির স্বার্থে শুল্ক ভালোবাসতেন।” কিন্তু ইতিহাস বলছে উল্টো কথা। রিগ্যান ছিলেন মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তা।

১৯৮৭ সালের সেই বক্তৃতায় তিনি জাপানের সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ক্ষেত্রে সীমিত ব্যতিক্রম করেছিলেন, কারণ সে সময় কংগ্রেসে সুরক্ষা নীতি সমর্থনকারী প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল। তখনকার ভয় ছিল, জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে ছাড়িয়ে যাবে।

রিগ্যান চেয়েছিলেন ইতিহাসের শিক্ষা তুলে ধরতে — বিশেষ করে ১৯৩০ সালের ‘স্মুট-হাওলে শুল্ক আইন’ কিভাবে মহামন্দা সৃষ্টি করেছিল। তিনি বুঝতেন, সুরক্ষা নীতি দীর্ঘমেয়াদে উদ্ভাবনকে রুদ্ধ করে দেয়।

সেমিকন্ডাক্টর নীতির ব্যর্থতা ও শিক্ষা

রিগ্যানের সেই সময়ের সেমিকন্ডাক্টর শুল্ক শেষ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়। ইন্টেল করপোরেশন নিজেদের ৩৮৬ ও ৪৮৬ চিপ উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাপানি মেমরি চিপকে ছাড়িয়ে যায়, ফলে শুল্ক নীতি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

তৎকালীন মার্কিন শিল্পনীতি প্রকল্প ‘সেমাটেক’ও ব্যর্থ হয়। সাইপ্রেস সেমিকন্ডাক্টরের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী টি. জে. রজার্স পরে ব্যাখ্যা করেন, সরকার-নির্ভর এই উদ্যোগগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবন কমিয়ে দেয়।

Trumpism versus Reaganism

রিগ্যান বনাম ট্রাম্প: নীতিগত পার্থক্য

রিগ্যানের অবস্থান ছিল শুল্ককে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা, যেখানে ট্রাম্প এটিকে নীতির মূল ভিত্তি করে তুলেছেন। রিগ্যান বুঝতেন, শুল্ক মানে কর — যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপরই পড়ে।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেন, এই শুল্ক বিদেশিরা দেয়, যা বাস্তবে ভুল। তার নীতি মার্কিন উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করার দাবি করলেও, বাস্তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারকারী স্থানীয় কোম্পানিগুলোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

ট্রাম্পের সৌভাগ্য যে, এখনো বড় ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হয়নি, তাই বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো গেছে। তবু এই শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে — পণ্যের দাম বাড়ছে, ব্যবসার মনোবল কমছে এবং প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ট্রাম্প যতই রিগ্যানের নাম ব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চান, ইতিহাস সাক্ষী — রিগ্যান ছিলেন মুক্ত বাজারের নেতা, সুরক্ষা নীতির নয়।

 

# যুক্তরাষ্ট্র, #ডোনাল্ড ট্রাম্প,# রোনাল্ড রিগ্যান, #শুল্কনীতি, #মুক্ত বাণিজ্য,# কানাডা, #অর্থনীতি,# বাণিজ্যযুদ্ধ

জনপ্রিয় সংবাদ

কয়লা খনি নিয়ে বিভক্ত নাহদলাতুল উলামা: ধর্মীয় সংগঠনে রাজনীতি ও ব্যবসার টানাপোড়েন

রিগ্যান বনাম ট্রাম্প-‘ফ্রি ট্রেড’-এর পক্ষে রিগ্যান, অথচ ট্রাম্পের হাতিয়ার সুরক্ষা নীতি

০১:১৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

কানাডা-বিরোধী ট্রাম্পের ক্ষোভের পেছনে রিগ্যানের বক্তব্য

রোনাল্ড রিগ্যানকে অনেকেই আজ ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মনে করেন, কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আচরণ প্রমাণ করে — রিগ্যান এখনও প্রাসঙ্গিক। কানাডার অন্টারিও প্রদেশে প্রচারিত এক বিজ্ঞাপন ট্রাম্পের তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দিয়েছে।

অন্টারিও সরকার ১৯৮৭ সালের রিগ্যানের এক বক্তৃতার অংশ প্রচার করে, যেখানে তিনি সুরক্ষা নীতির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেটিকে “ভুয়া বিজ্ঞাপন” বলে অভিযুক্ত করেন এবং দাবি করেন, এটি নাকি সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রভাব ফেলতে তৈরি করা হয়েছে — যেখানে তার নির্বিচার শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে শুনানি চলছে। এরপরপরই ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দেন।

অতিরিক্ত শুল্ক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা

অন্টারিও কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও সেটি সপ্তাহান্তে ক্রীড়া সম্প্রচারের সময় প্রচারিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প, কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা পূর্ববর্তী করের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটি টিভি বিজ্ঞাপন দেখে বিদেশি পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিক কর বাড়ানো একধরনের একনায়কতান্ত্রিক আচরণ, যা মার্কিন সংবিধানের ক্ষমতা-বণ্টনের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

Trump Announces Tariff Increase on Canada Over Reagan Ad Spat - The New  York Times

রিগ্যানের আসল অবস্থান: মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে

ট্রাম্প দাবি করেছেন, “রোনাল্ড রিগ্যান জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির স্বার্থে শুল্ক ভালোবাসতেন।” কিন্তু ইতিহাস বলছে উল্টো কথা। রিগ্যান ছিলেন মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তা।

১৯৮৭ সালের সেই বক্তৃতায় তিনি জাপানের সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ক্ষেত্রে সীমিত ব্যতিক্রম করেছিলেন, কারণ সে সময় কংগ্রেসে সুরক্ষা নীতি সমর্থনকারী প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল। তখনকার ভয় ছিল, জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে ছাড়িয়ে যাবে।

রিগ্যান চেয়েছিলেন ইতিহাসের শিক্ষা তুলে ধরতে — বিশেষ করে ১৯৩০ সালের ‘স্মুট-হাওলে শুল্ক আইন’ কিভাবে মহামন্দা সৃষ্টি করেছিল। তিনি বুঝতেন, সুরক্ষা নীতি দীর্ঘমেয়াদে উদ্ভাবনকে রুদ্ধ করে দেয়।

সেমিকন্ডাক্টর নীতির ব্যর্থতা ও শিক্ষা

রিগ্যানের সেই সময়ের সেমিকন্ডাক্টর শুল্ক শেষ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়। ইন্টেল করপোরেশন নিজেদের ৩৮৬ ও ৪৮৬ চিপ উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাপানি মেমরি চিপকে ছাড়িয়ে যায়, ফলে শুল্ক নীতি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

তৎকালীন মার্কিন শিল্পনীতি প্রকল্প ‘সেমাটেক’ও ব্যর্থ হয়। সাইপ্রেস সেমিকন্ডাক্টরের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী টি. জে. রজার্স পরে ব্যাখ্যা করেন, সরকার-নির্ভর এই উদ্যোগগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবন কমিয়ে দেয়।

Trumpism versus Reaganism

রিগ্যান বনাম ট্রাম্প: নীতিগত পার্থক্য

রিগ্যানের অবস্থান ছিল শুল্ককে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা, যেখানে ট্রাম্প এটিকে নীতির মূল ভিত্তি করে তুলেছেন। রিগ্যান বুঝতেন, শুল্ক মানে কর — যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপরই পড়ে।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেন, এই শুল্ক বিদেশিরা দেয়, যা বাস্তবে ভুল। তার নীতি মার্কিন উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করার দাবি করলেও, বাস্তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারকারী স্থানীয় কোম্পানিগুলোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

ট্রাম্পের সৌভাগ্য যে, এখনো বড় ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হয়নি, তাই বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো গেছে। তবু এই শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে — পণ্যের দাম বাড়ছে, ব্যবসার মনোবল কমছে এবং প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ট্রাম্প যতই রিগ্যানের নাম ব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চান, ইতিহাস সাক্ষী — রিগ্যান ছিলেন মুক্ত বাজারের নেতা, সুরক্ষা নীতির নয়।

 

# যুক্তরাষ্ট্র, #ডোনাল্ড ট্রাম্প,# রোনাল্ড রিগ্যান, #শুল্কনীতি, #মুক্ত বাণিজ্য,# কানাডা, #অর্থনীতি,# বাণিজ্যযুদ্ধ