সমন্বয় কেন্দ্রের উদ্বোধন
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কিরিয়াত গাতের প্রান্তে একটি বিশাল গুদামঘরটি রূপ নিচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার সদর দফতরে। এখানে প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা ইসরায়েলি বাহিনী ও অন্যান্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে গড়ে তুলছে একটি নতুন “সিভিল-মিলিটারি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার”, যা গাজা উপত্যকার অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং মানবিক সহায়তা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটাবে।
এই উদ্যোগটি ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পরিকল্পনার অংশ, যা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গাজায় অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্ত করা হয়েছে এবং এখন হামাসের বিকল্প প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের কঠিন পর্বে প্রবেশ করছে।
পরিকল্পনার অগ্রগতি ও কৌশল
গুদামঘরের বিশাল সিমেন্ট ফ্লোরে সারি সারি সাদা বোর্ড ও বড় বড় ডিসপ্লেতে ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনা ঝোলানো হয়েছে। সেখানে সেনা ও বেসামরিক কর্মীরা ব্যস্তভাবে কাজ করছে, আর স্পিকার থেকে ধ্বনিত হচ্ছে নির্দেশনা: ‘ভিতরে ধূমপান নিষিদ্ধ।’
ট্রাম্প ও তাঁর দূতেরা এক অননুমোদিত পদ্ধতিতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন—প্রথমে বিজয় ঘোষণা, পরে বিস্তারিত ঠিক করা। এই আত্মবিশ্বাসই, সাত মাসের যুদ্ধের পর, প্রথম স্থায়ী অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করেছে।

যদিও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ অব্যাহত আছে, ট্রাম্প প্রশাসন আশাবাদী সুর বজায় রেখেছে। গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, ও প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার ইসরায়েল সফর করেছেন।
রুবিওর মন্তব্য: ‘এটাই একমাত্র পরিকল্পনা’
গত শুক্রবার কিরিয়াত গাতে কেন্দ্রটি পরিদর্শনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, “এই গুদামে যে কাজ চলছে, সেটিই পুরো পরিকল্পনাটিকে একত্রে বেঁধে রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর কোনো বিকল্প পরিকল্পনাই নেই। এটিই সেরা এবং একমাত্র পথ।”
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এই কেন্দ্রটি ওয়াশিংটনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতীক—যতদিন হামাস চুক্তির শর্ত মেনে চলবে, ততদিন ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবে না, এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
নেতানিয়াহুর ওপর চাপ ও আঞ্চলিক সমন্বয়
এই কেন্দ্রের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ওপরও চাপ বজায় রাখা হচ্ছে। তিনি নিজ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের চাপে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কঠিন অবস্থায় রয়েছেন। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলের অন্যান্য উদ্বিগ্ন অংশীদারদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে।

উইটকফ ও কুশনার গত সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে সতর্কবার্তা দেন: হামাসের যে কোনো অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া যেন অনুপাতমূলক হয়। অন্যদিকে, ট্রাম্পও একাধিকবার হামাসকে হুঁশিয়ার করেছেন যে, তারা চুক্তি ভঙ্গ করলে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
নতুন কেন্দ্রের উদ্বোধনী দিনে জার্মানি, ফ্রান্স, গ্রিস, সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের পোশাকে থাকা পতাকাগুলো আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন সেনাদের মধ্যে আর্মি, মেরিন ও স্পেস ফোর্সের সদস্যরাও রয়েছেন। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আরও কূটনীতিক পাঠাচ্ছে এই উদ্যোগে সহায়তার জন্য।
এই কেন্দ্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও মানবিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় করা হচ্ছে—বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ও অন্যান্য সংগঠন গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে যুক্ত হয়েছে।
গুদামভিত্তিক এই সমন্বয় কেন্দ্র এখন গাজা শান্তি পরিকল্পনার মূল ঘাঁটি। এটি কেবল সামরিক বা কূটনৈতিক উদ্যোগ নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনের এক প্রতীকী অঙ্গীকার—একটি স্থায়ী শান্তির জন্য একত্রে কাজ করা।
#গাজা_শান্তি_পরিকল্পনা #ইসরায়েল_হামাস_চুক্তি #ট্রাম্প_নীতি #মার্কিন_কূটনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















