বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বয়স্ক হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় প্রবীণদের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দীর্ঘমেয়াদি যত্নব্যবস্থা গড়ে তুলতে নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছেন। ঢাকায় এক উচ্চপর্যায়ের সেমিনারে এই উদ্যোগের উদ্বোধন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রবীণদের সুরক্ষায় প্রমাণভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়।
দ্রুত বয়স বাড়ছে দেশের জনগোষ্ঠী
মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সেমিনারে বাংলাদেশের প্রথম ‘কান্ট্রি ডায়াগনস্টিক স্টাডি অন লং টার্ম কেয়ার ফর ওল্ডার পিপল’ প্রকাশিত হয়, যা যৌথভাবে সম্পাদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আয়াত-এডুকেশন ফাউন্ডেশন। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বয়স্ক হয়ে উঠছে এবং এই প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই যত্ন কাঠামো গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়।

প্রমাণভিত্তিক সুপারিশ ও নীতিগত অঙ্গীকার
গবেষণায় প্রমাণভিত্তিক সুপারিশের মাধ্যমে একটি লিঙ্গ-সংবেদনশীল, সাশ্রয়ী ও মানুষকেন্দ্রিক প্রবীণ যত্নব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যত্ন অন্তর্ভুক্ত করতে নীতিগত সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, “একটি কার্যকর জাতীয় কাঠামো বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা অপরিহার্য। সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গড় আয়ু বাড়লেও ‘স্বাস্থ্যবান জীবনকাল’ বা হেলদি লাইফ এক্সপেকট্যান্সি কমছে—যা মোকাবিলায় নতুন ধরনের অর্থায়ন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার মডেল প্রয়োজন।
‘ডেমোগ্রাফিক ক্রসরোডে’ বাংলাদেশ
এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আকিরা মাতসুনাগা বলেন, “বাংলাদেশ এখন এক জনসংখ্যাগত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি যত্নব্যবস্থা গড়ে উঠলে তা শুধু প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করবে না, বরং ‘কেয়ার ইকোনমি’-তে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।”
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর হার ২০২০ সালে ছিল ১৩ শতাংশ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও বেশি হবে। এতে সতর্ক করা হয়েছে, প্রচলিত পারিবারিক অনানুষ্ঠানিক যত্নব্যবস্থা—যা সাধারণত বেতনহীন নারী সদস্যরা বহন করেন—দ্রুত বর্ধনশীল এই চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

যত্নকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা জরুরি
আয়াত-এডুকেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন তাহসিন আমান উদ্যোগটিকে “একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যত্নে বিনিয়োগ করা কেবল নৈতিক দায় নয়, এটি অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করে।
এডিবির প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার (জেন্ডার) নাশিবা সেলিম ও জাতীয় প্রবীণ যত্ন পরামর্শক ইমরান চৌধুরী গবেষণার মূল দিকগুলো উপস্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, এখনই জাতীয় লং টার্ম কেয়ার পলিসি ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন, প্রশিক্ষিত কর্মশক্তি গঠন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবার একীভূত ব্যবস্থা এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও সমন্বিত কৌশল
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা অবদানভিত্তিক সামাজিক বিমা প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং বর্তমান সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এলটিসি সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।
গবেষণায় আরও সুপারিশ করা হয়েছে, প্রস্তাবিত জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি যত্ননীতি ও কৌশলকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রবীণ ব্যক্তিদের জাতীয় নীতি ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জনসংখ্যার কাঠামো দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এবং এখনই পদক্ষেপ নেয়ার উপযুক্ত সময়। সঠিক দৃষ্টি, বিনিয়োগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব যা প্রবীণদের সুরক্ষা দেবে, নারীদের ক্ষমতায়ন করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের পথ তৈরি করবে।
#
বাংলাদেশ, এডিবি, প্রবীণ যত্ন, সামাজিক সুরক্ষা, উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি, জনসংখ্যা পরিবর্তন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















