০৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের উপকূলীয় শহর ওওইতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল শতাধিক ঘর বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে এগোচ্ছে জাপান গ্রাহকদের ভোগান্তি কমছে না, এবার রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ — জিপি ও বাংলালিংকের আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি ভারতের রেড ফোর্ট হামলার উদ্ধার হওয়া ভিডিও: আত্মঘাতী হামলার সাফাই দিচ্ছিলেন উমর উন-নবী ইন্দোনেশিয়ার শিশুদের ভিডিও গেমে জঙ্গি প্রভাব: পুলিশ গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন

কোভিড ও ফ্লু সংক্রমণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার প্রমাণ পেল নতুন গবেষণা

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড–১৯, ফ্লু এবং শিংলসসহ বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংক্রমণগুলো শরীরের রক্তনালির আবরণে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে রক্ত জমাট বেঁধে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

ভাইরাস সংক্রমণ ও হৃদরোগের সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের “জার্নাল অব দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন”-এ প্রকাশিত গবেষণাটি ১৫০টিরও বেশি গবেষণার বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোভিড–১৯ সংক্রমণের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, আর ফ্লু সংক্রমণের এক মাসের মধ্যে এই ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়।

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিস্ট ড. জিয়াদ আল-আলি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে আলোচনা করছি যে ভাইরাস সংক্রমণগুলো তুচ্ছ নয়,” বলেন তিনি। “এটি ফুসফুসে শুরু হলেও প্রভাব পড়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও, বিশেষত হৃদ্‌যন্ত্রে।”

কোভিড–১৯ ও রক্তনালির ক্ষতি

গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড–১৯ ভাইরাস সরাসরি রক্তনালির আবরণ বা “এন্ডোথেলিয়াম”-এ ক্ষতি ঘটায়, যা স্থানীয় প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। জমাট বাঁধা রক্ত যদি বড় হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায়, তা হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

First wave of COVID-19 increased risk of heart attack, stroke up to three  years later | NHLBI, NIH

এ ছাড়া, রক্ত জমাট ফুসফুসের রক্তনালিও বন্ধ করতে পারে, যা “পালমোনারি এমবোলিজম” নামে পরিচিত—কোভিড–১৯–এর আরেকটি জটিলতা।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ভূমিকা

বেলার কলেজ অব মেডিসিনের ড. ড্যানিয়েল মুশার বলেন, “সবকিছুই শেষ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহে গিয়ে মেলে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হেপাটাইটিস সি বা এইচআইভির মতো ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ধমনিতে জমে থাকা চর্বি বা “প্লাক”-এর ভেতরে প্রদাহজনিত কোষ থাকে। শরীরের অন্য কোথাও প্রদাহ হলে, এই কোষগুলোও উত্তেজিত হয়, ফলে প্লাক ফেটে গিয়ে রক্তনালিতে জমাট বাঁধতে পারে—যা শেষ পর্যন্ত হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণ হয়।

অন্যান্য ভাইরাসও ঝুঁকিপূর্ণ

গবেষণায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি, ভ্যারিসেলা জোস্টার (শিংলসের ভাইরাস), এমনকি রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যদিও এসব ক্ষেত্রে প্রমাণ তুলনামূলকভাবে সীমিত।

How does cardiovascular disease increase the risk of severe illness and  death from COVID-19? - Harvard Health

প্রতিরোধই সেরা উপায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ফ্লু, কোভিড–১৯ এবং শিংলসসহ অনেক ভাইরাসের টিকা পাওয়া যায়, যা সংক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

তবে ভাইরাস সংক্রমণ মানেই যে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হবেন, তা নয়। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং বয়স—এই উপাদানগুলোই মূল ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। জীবনধারার পরিবর্তন ও সঠিক চিকিৎসায় এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ড. আল-আলি বলেন, “ভাইরাস সংক্রমণকে একটি অতিরিক্ত ঝুঁকি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে,” তিনি যোগ করেন, “একবার সংক্রমণ ঘটলে তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়, কিন্তু অন্যান্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখলে সামগ্রিকভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমানো যায়।”

#কোভিড১৯ #ফ্লু #হৃদরোগ #স্ট্রোক #চিকিৎসাগবেষণা #স্বাস্থ্যসংবাদ #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম

কোভিড ও ফ্লু সংক্রমণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার প্রমাণ পেল নতুন গবেষণা

০৬:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড–১৯, ফ্লু এবং শিংলসসহ বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংক্রমণগুলো শরীরের রক্তনালির আবরণে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে রক্ত জমাট বেঁধে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

ভাইরাস সংক্রমণ ও হৃদরোগের সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের “জার্নাল অব দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন”-এ প্রকাশিত গবেষণাটি ১৫০টিরও বেশি গবেষণার বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোভিড–১৯ সংক্রমণের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, আর ফ্লু সংক্রমণের এক মাসের মধ্যে এই ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়।

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিস্ট ড. জিয়াদ আল-আলি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে আলোচনা করছি যে ভাইরাস সংক্রমণগুলো তুচ্ছ নয়,” বলেন তিনি। “এটি ফুসফুসে শুরু হলেও প্রভাব পড়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও, বিশেষত হৃদ্‌যন্ত্রে।”

কোভিড–১৯ ও রক্তনালির ক্ষতি

গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড–১৯ ভাইরাস সরাসরি রক্তনালির আবরণ বা “এন্ডোথেলিয়াম”-এ ক্ষতি ঘটায়, যা স্থানীয় প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। জমাট বাঁধা রক্ত যদি বড় হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায়, তা হৃদয় বা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

First wave of COVID-19 increased risk of heart attack, stroke up to three  years later | NHLBI, NIH

এ ছাড়া, রক্ত জমাট ফুসফুসের রক্তনালিও বন্ধ করতে পারে, যা “পালমোনারি এমবোলিজম” নামে পরিচিত—কোভিড–১৯–এর আরেকটি জটিলতা।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ভূমিকা

বেলার কলেজ অব মেডিসিনের ড. ড্যানিয়েল মুশার বলেন, “সবকিছুই শেষ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহে গিয়ে মেলে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হেপাটাইটিস সি বা এইচআইভির মতো ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ধমনিতে জমে থাকা চর্বি বা “প্লাক”-এর ভেতরে প্রদাহজনিত কোষ থাকে। শরীরের অন্য কোথাও প্রদাহ হলে, এই কোষগুলোও উত্তেজিত হয়, ফলে প্লাক ফেটে গিয়ে রক্তনালিতে জমাট বাঁধতে পারে—যা শেষ পর্যন্ত হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণ হয়।

অন্যান্য ভাইরাসও ঝুঁকিপূর্ণ

গবেষণায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি, ভ্যারিসেলা জোস্টার (শিংলসের ভাইরাস), এমনকি রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যদিও এসব ক্ষেত্রে প্রমাণ তুলনামূলকভাবে সীমিত।

How does cardiovascular disease increase the risk of severe illness and  death from COVID-19? - Harvard Health

প্রতিরোধই সেরা উপায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ফ্লু, কোভিড–১৯ এবং শিংলসসহ অনেক ভাইরাসের টিকা পাওয়া যায়, যা সংক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

তবে ভাইরাস সংক্রমণ মানেই যে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হবেন, তা নয়। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং বয়স—এই উপাদানগুলোই মূল ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। জীবনধারার পরিবর্তন ও সঠিক চিকিৎসায় এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ড. আল-আলি বলেন, “ভাইরাস সংক্রমণকে একটি অতিরিক্ত ঝুঁকি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে,” তিনি যোগ করেন, “একবার সংক্রমণ ঘটলে তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়, কিন্তু অন্যান্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখলে সামগ্রিকভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমানো যায়।”

#কোভিড১৯ #ফ্লু #হৃদরোগ #স্ট্রোক #চিকিৎসাগবেষণা #স্বাস্থ্যসংবাদ #সারাক্ষণরিপোর্ট