মার্কিন প্রভাব পুনর্গঠনে হেগসেথের এশিয়া সফর
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শুক্রবার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান প্রতিরক্ষা সম্মেলনে চীন ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলোর লক্ষ্য ছিল এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা।
হেগসেথ জানান, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুনকে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখবে। তিনি দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান অঞ্চলে চীনের কর্মকাণ্ড নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভারতের সঙ্গে ১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি
এ সফরে হেগসেথ ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি নতুন ১০ বছরের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। হেগসেথ বলেন, “এটি আমাদের দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি রোডম্যাপ।”
এই পদক্ষেপকে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের পর দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুল্ক আরোপের কারণ ছিল ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখা।

ট্রাম্পের পরমাণু পরীক্ষা পুনরারম্ভের ঘোষণা
হেগসেথের সফরটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ঘোষণার পরপরই আসে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র আবার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করবে। এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি ৩৩ বছর ধরে চলা মার্কিন পরমাণু পরীক্ষার স্থগিতাদেশ ভাঙতে পারে।
তবে ট্রাম্পের বক্তব্যে বিভ্রান্তি রয়েছে— তিনি ক্ষেপণাস্ত্র বা অস্ত্রবাহী ব্যবস্থার পরীক্ষা বোঝাতে চেয়েছেন, নাকি বিস্ফোরণমূলক পরমাণু পরীক্ষার কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়। হেগসেথও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি।
আসিয়ান সাধারণভাবে পরমাণু অস্ত্রের বিরোধী এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে পরমাণুমুক্ত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্ত করা
চীনের প্রভাব প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার উপস্থিতি আরও দৃঢ় করছে। ট্রাম্প আসিয়ান নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, “ওয়াশিংটন আপনাদের পাশে শতভাগ আছে এবং বহু প্রজন্ম ধরে শক্তিশালী অংশীদার থাকবে।”
ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে নিয়মিত সামরিক মহড়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা এই উদ্যোগেরই অংশ।

দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিরোধ পুনর্গঠনের অঙ্গীকার
হেগসেথ তাঁর কুয়ালালামপুর বৈঠকের পর সামাজিক মাধ্যমে জানান, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী জোটের সম্পর্ক, ইন্দোনেশিয়ার স্থিতিশীলতার ভূমিকা এবং ফিলিপাইনের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিরোধ পুনর্গঠন করব এবং আমাদের জোট আরও মজবুত করব।”
চীনের অবস্থান: ‘পূর্বের প্রজ্ঞা’ দিয়ে সম্মিলিত নিরাপত্তা
চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে এবং সেখানে টহলজাহাজ মোতায়েন করেছে। ফিলিপাইনের জাহাজের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষ ঘটেছে, পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের জ্বালানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগও রয়েছে।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন আসিয়ান মন্ত্রীদের বলেন, “আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একটি আরও শক্তিশালী সম্মিলিত নিরাপত্তা ঢাল গড়ব। পূর্বের প্রজ্ঞা ও ঐক্য দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করব।”

বিশ্লেষণ: প্রতিযোগিতার নতুন ভারসাম্য
হেগসেথের এই সফর ইঙ্গিত দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ভারতের মতো অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা জোরদার করছে, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপও অব্যাহত রাখছে। দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা, আসিয়ানের পরমাণুবিরোধী অবস্থান এবং ট্রাম্পের পরমাণু ঘোষণা — সব মিলিয়ে এশিয়ায় কূটনৈতিক ভারসাম্যের নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে।

#মার্কিন_প্রতিরক্ষা #এশিয়া_কূটনীতি #চীন_যুক্তরাষ্ট্র #ভারত_মার্কিন_চুক্তি #দক্ষিণ_চীন_সাগর #আসিয়ান #ট্রাম্প_পরমাণু_পরীক্ষা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 














