নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয়—এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তি পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশই হতে পারে মুক্তির পথ।
নারীর অধিকার ও সাংস্কৃতিক জাগরণই বৈষম্যমুক্ত সমাজের পথ
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তি পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তারা বলেন, নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়। শনিবার অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন এবং পত্রিকাটির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
সমাজে নারী বৈষম্যের অবসান চাইলেন প্রেস ক্লাব সভাপতি
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “নারীরা আজও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হন, এমনকি সাংবাদিকতাতেও এই বাস্তবতা বিদ্যমান। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও নারী ও শিশুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন—এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না; আমরা চাই নারী-পুরুষ সমান অধিকারভিত্তিক একটি সমাজ।”
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে পঙক্তি ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত পরিসরে নারীর অধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
সংস্কৃতির অবক্ষয় থেকে উত্তরণের পথ: সাংস্কৃতিক বিপ্লব
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা এখন সাংস্কৃতিকভাবে এক খারাপ সময় পার করছি। রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, সমাজে অবক্ষয় গভীর হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারে কেবল একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব।”

জাতিসত্তা রক্ষায় নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আহ্বান
কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, “ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন কাজ। আজ শিল্প, মাজার, দরগা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর বারবার আঘাত আসছে। এটি জাতিসত্তা ও আমাদের সৃজনশীল সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ।”
তিনি আরও বলেন, “ষাটের দশকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐক্যই আমাদের স্বাধীনতা এনেছিল। এখন সময় এসেছে নতুন এক সাংস্কৃতিক জাগরণের।”
সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পান্নার আত্মনির্ভরতার গল্প
সভাপতির বক্তব্যে পঙক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না বলেন, “আমি আজ খুব আনন্দিত। ২৬ বছর ধরে কাউকে নির্ভর না করে কাজ করছি। একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা সহজ নয়, কিন্তু আমরা তা করতে পেরেছি। পঙক্তি সব সময় নারীর সমস্যাগুলোকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেবে।”
‘পঙক্তি’ নামের পেছনের ভালোবাসা ও অর্থ
বাংলাদেশের আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, “‘পঙক্তি’ নামটি এসেছে কবিসত্তা থেকে, কারণ এর অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আবার এটি সম্পাদক পান্না বেগমের একমাত্র কন্যার নামও বটে। এই নামের মধ্যেই রয়েছে মাতৃত্বের ভালোবাসা ও সৃজনশীলতার মেলবন্ধন।”
তিনি আরও বলেন, “বিজ্ঞাপন ও বিক্রির ওপর নির্ভরশীল একটি পত্রিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন, কিন্তু পঙক্তি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সফলভাবে এগিয়ে চলছে। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
পঙক্তির সাফল্যে সাহিত্য ও গণমাধ্যমের প্রশংসা
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির বলেন, “মানুষ যেমন সীমা ছাড়িয়ে আকাশে যায়, তেমনি আমি চাই পঙক্তিও তার সীমা ছাড়িয়ে অনেক দূরে এগিয়ে যাক।”
কবি বজলুর রহমান বলেন, “একটি পত্রিকা টিকিয়ে রাখা যেমন কষ্টের, তেমনি পাঠক হিসেবে আমরা আনন্দ পাই যখন একটি মানসম্মত পত্রিকা হাতে পাই। পঙক্তি সেই প্রত্যাশা পূরণ করছে।”
কবি আব্দুল মান্নান যোগ করেন, “পত্রিকাটি ঝকঝকে ও মানসম্মত — দেখলেই পড়তে ইচ্ছে করে।”
নারীর নেতৃত্বে সফল প্রকাশনা
কবি মোশাররফ হোসেন ইউসুফ বলেন, “বর্তমানে এমন মানসম্পন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকা বাজারে বিরল। পঙক্তি পরিবার অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।”
বাংলানিউজ সাংবাদিক তুলনা আফরিন বলেন, “একজন নারী সম্পাদক হয়ে পান্না-আপা নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করছেন—এটি আমাদের গর্বের বিষয়, নারী সমাজের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।”
অনুষ্ঠানের পরিবেশনা ও সমাপনী
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন জেরিন ফেরদৌস পঙক্তি। কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বর্ণিল ও অনুপ্রেরণামূলক। বক্তারা সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও পঙক্তি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
#সাপ্তাহিক_পঙক্তি #সাংস্কৃতিক_জাগরণ #নারীর_অধিকার #বাংলাদেশ_প্রেস_ক্লাব #সাহিত্য_ও_সংস্কৃতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 














