দুবাইয়ের কাইট বিচে সূর্যোদয়ের প্রথম আলোয় ব্যায়ামপ্রেমীদের ঢল নামে। যোগ, স্পিন, কিকবক্সিং ও রিবাউন্ডার কার্ডিওর সেশনে অংশ নিয়ে হাজারো মানুষ ফিটনেস ও কমিউনিটি স্পিরিটে মেতে ওঠে। ‘দুবাই ফিটনেস চ্যালেঞ্জ ২০২৫’-এর সূচনা দিনেই শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক নতুন উদ্দীপনা।
সকালের আলোয় কাইট বিচের প্রাণচাঞ্চল্য
সূর্য ওঠার আগেই দুবাইয়ের কাইট বিচ ভরে উঠেছিল ব্যায়ামপ্রেমীদের পদচারণায়। সকাল ৭টার মধ্যে দৌড়ানোর ট্র্যাকে সারি সারি অংশগ্রহণকারী, আর উন্মোচিত হচ্ছিল যোগের চাটাই। সপ্তাহান্তের অবকাশের বদলে সকালের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠেছিল দুবাইয়ের সৈকত—দুবাই ফিটনেস চ্যালেঞ্জ ২০২৫-এর প্রথম দিনের এমনই উচ্ছ্বাস।
এই বছরের ডিপি ওয়ার্ল্ড ফিটনেস ভিলেজ কাইট বিচে আগের চেয়ে বড় ও কর্মচঞ্চল। বিনামূল্যে যোগব্যায়াম, স্পিন, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, কিকবক্সিং ও রিবাউন্ডার কার্ডিও সেশন চলছে সাগরের ঢেউ ও উদ্দীপনাময় সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

অংশগ্রহণকারীদের প্রিয় মিলনমেলা
দুবাইবাসীর কাছে এই ফিটনেস চ্যালেঞ্জ এখন বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
আমেরিকান প্রবাসী টিনা ম্যাকফ্যাডজিয়ান, যিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ইউএই-তে বসবাস করছেন, বলেন, “২০১৭ সালে প্রথম আয়োজন থেকেই আমি আসছি—এটা আমার সুখের জায়গা। এবার কাইট বিচ আরও বড়, ক্লাস ও স্টলের সংখ্যাও বেড়েছে। আমি এরোবিকস ক্লাস করেছি, প্রতি সপ্তাহান্তেই আসার চেষ্টা করি। ফিটনেস আর কমিউনিটির চমৎকার মিশেল এটি।”
তিনি আরও জানান, “এই মাসে যোগব্যায়ামের সেশনগুলো চেষ্টা করব, অনেক নতুন কিছু আছে—সবকিছু অভিজ্ঞতা নিতে চাই।”
অফিসের চ্যালেঞ্জ: দলবদ্ধ ফিটনেসের অনুপ্রেরণা
দুবাইয়ের বিজমোসিস কোম্পানির তিন সহকর্মী—দানিয়েলা (মলদোভা), অ্যাবি ও জেনিফার (ফিলিপাইনস)—এবার অংশ নিয়েছেন অফিস চ্যালেঞ্জ হিসেবে। তাদের বস ঘোষণা করেছেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে কর্মীরা আগেভাগে অফিস ছাড়তে পারবেন, পাশাপাশি থাকছে বিশেষ পুরস্কার।
দানিয়েলা বলেন, “আমরা বাধা পারকোর্স, ট্রামপোলিন সেশন আর স্টলের নানা চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছি। গত বছর প্রতিদিনই আসতাম, এবার আয়োজন আরও বড়, ক্লাসও বেশি, সুবিধাও উন্নত।”

অ্যাবি যোগ করেন, “এইবার প্যাডল বোর্ড সেশন ট্রাই করব। গত বছর করতে পারিনি, এবার আগেভাগে স্লট বুক করব।”
জনপ্রিয় রিবাউন্ডার কার্ডিও: মজা আর ঘাম একসাথে
এবারের অন্যতম আকর্ষণ রিবাউন্ডার কার্ডিও—একটি ছোট ট্রামপোলিনে উচ্চ-উদ্দীপনাময় অ্যারোবিক অনুশীলন, যা শরীরচর্চাকে আরও মজাদার করে তুলেছে।
মলদোভার সেমিওন ও আনা দম্পতি বলেন, “অনুশীলন কঠিন, কিন্তু পরের অনুভূতি অসাধারণ। ফিটনেস চ্যালেঞ্জের আবহ খুব ভালো লাগে—সকালের ঠান্ডা বাতাস, সক্রিয় মানুষদের ভিড়—সবই মন ভালো করে দেয়।”
১৩ বছর ধরে ইউএইতে থাকা ফিলিপিনো প্রবাসী কিম রোম বলেন, “প্রথমবার কাইট বিচে এলাম, অভিজ্ঞতা দারুণ। প্রশিক্ষকেরা অনুপ্রেরণাদায়ক, সপ্তাহান্তে সকালেই আসার পরামর্শ দেব।”
আরেক ফিলিপিনো অংশগ্রহণকারী কায়জেন জানান, “এবারের আয়োজন অনেক বৈচিত্র্যময়—বাধা পারকোর্স, ক্লাইম্বিং ওয়াল সবই আকর্ষণীয়। আবহাওয়াও এখন অনুকূল, তাই সকালে বা বিকেলে আসাই ভালো। স্পিন ক্লাসটা চেষ্টা করার পরিকল্পনাও আছে।”
যোগশিক্ষকের পাঁচ বছরের ঐতিহ্য
২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যুক্তরাজ্যের যোগ শিক্ষক সীতল পুরোহিত টানা পাঁচ বছর ধরে দুবাই ফিটনেস চ্যালেঞ্জে যোগসেশন পরিচালনা করছেন।
তিনি বলেন, “এটা আমার কাছে কমিউনিটির জন্য সেবা। যোগ শুধু ব্যায়াম নয়, শরীর, মন ও আত্মার সংযোগ। প্রথম দিনেই এত অংশগ্রহণ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি—মানুষের মধ্যে আত্মশৃঙ্খলা ও সুস্থতার আকাঙ্ক্ষা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
স্মৃতির ভাণ্ডারে শেষ অংশগ্রহণ
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শিক্ষক মোহাম্মদ জুবাইর, যিনি ৯ বছর ধরে ইউএইতে আছেন, বলেন, “এই চ্যালেঞ্জে এটাই আমার শেষ বছর, কারণ আমি দেশে ফিরব। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর অংশ নিয়েছি, এমনকি একবার এমিরেটসের টিকিটও জিতেছিলাম। অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে এখানে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে উৎসাহ দিই। সকাল ৮টায় এসে কিকবক্সিং করেছি, কয়েকটি নতুন ক্লাসও ট্রাই করেছি। স্টলগুলোতে নানা ব্র্যান্ডের ছোট চ্যালেঞ্জ ও পুরস্কার আছে—সব মিলিয়ে দারুণ পরিবেশ।”

অংশগ্রহণের আগে যা জানা দরকার
যারা দুবাই ফিটনেস চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে চান, তারা তিনটি বিনামূল্যের ফিটনেস ভিলেজে যেতে পারেন—যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যায়াম সেশন, ক্লাস ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক অনুশীলনকে অভ্যাসে পরিণত করা।


#DubaiFitnessChallenge #KiteBeach #HealthyLiving #UAECommunity #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 














