দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য ও পরিষ্কার জ্বালানি প্রযুক্তির বিস্তারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং যৌথ অর্থায়ন (Blended Finance) কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি উইক ২০২৫–এর এক আলোচনায় প্যানেল সদস্যরা এই মত প্রকাশ করেন।
নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির বিস্তারে প্রয়োজন সরকারি সহায়তা
আলোচনায় বলা হয়, কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড স্টোরেজ (CCUS) এবং হাইড্রোজেনের মতো প্রযুক্তি বর্তমানে আসিয়ান অঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি বিদ্যুৎ খাতের নির্গমন কমাতে সাহায্য করছে, যদিও এই অঞ্চলের জ্বালানির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
ইন্দোনেশিয়ার তেল ও গ্যাস কোম্পানি মেদকো এনার্জির আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান ও উৎপাদন বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রেইগ স্টুয়ার্ট বলেন, “কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি কার্যকর হলেও এর খরচ অনেক বেশি।”
ব্যয়সাপেক্ষ হলেও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি
স্টুয়ার্টের মতে, ইউরোপের মতো উন্নত অঞ্চলে সরকার প্রাথমিক খরচ বহন করায় এই প্রকল্পগুলো সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগত সমাধান আমাদের কাছে আছে, তবে মূল প্রশ্ন হলো — এই প্রকল্পগুলো কে বাস্তবায়ন করবে এবং কে খরচ বহন করবে?”

নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর গুরুত্ব
ডিবিএস ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও গ্লোবাল হেড অব এনার্জি, রিনিউএবলস ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার কেলভিন ওং বলেন, “নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবসময়ই সরকারের দৃঢ় নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা দরকার।”
তিনি উদাহরণ হিসেবে জানান, সৌরশক্তি একসময় ব্যয়সাপেক্ষ ছিল, কিন্তু সরকারি নীতি ও বিনিয়োগ সহযোগিতায় এর খরচ ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
যৌথ অর্থায়ন: বিনিয়োগে উৎসাহের পথ
ওং বলেন, “ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স অর্থাৎ সরকারি ও দাতব্য মূলধনের সমন্বয়ে, এমন তহবিল গঠন করা দরকার যা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকবে।” এতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নতুন প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী হবে।
সবুজ হাইড্রোজেনের ভবিষ্যৎ
আসিয়ান এনার্জি সেন্টারের বেনি সুরিয়াদি বলেন, “সবুজ হাইড্রোজেনের উৎপাদন এখনও ব্যয়বহুল, তবে ভবিষ্যতে এর চাহিদা দ্রুত বাড়বে।”
তিনি জানান, বর্তমানে অধিকাংশ হাইড্রোজেন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয়, যা “গ্রে হাইড্রোজেন” নামে পরিচিত। কিন্তু নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপন্ন “সবুজ হাইড্রোজেন” শিল্প খাত — বিশেষ করে ইস্পাত ও অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য — একটি টেকসই সমাধান হতে পারে।

বায়োমিথেন: নতুন সম্ভাবনা
২৭ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের জ্বালানি ও বিজ্ঞান–প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী তান সি লেং ঘোষণা দেন যে দেশটি বায়োমিথেন বা নবায়নযোগ্য গ্যাস ব্যবহারের উপায় অনুসন্ধান করছে।
বায়োমিথেন রাসায়নিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান মিথেনের মতোই, তবে এটি তৈরি হয় কৃষি ও খাদ্য বর্জ্যসহ জৈব পদার্থ থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাসের পরিশোধনের মাধ্যমে। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে।
স্ট্রেইটস বায়ো–এলএনজি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হে ইয়ি ইয়ং বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়োমিথেন উৎপাদনের সম্ভাবনাকে এখনো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।”
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে পাম অয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় প্রচুর মিথেন নিঃসৃত হয়, যা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে তা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা
প্যানেল সদস্যরা জানান, পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহারে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত নীতি ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিবিএস ব্যাংকের ওং বলেন, “আসিয়ান পাওয়ার গ্রিড বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় জ্বালানি বাণিজ্য বাড়াতে সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার, কারণ বিভিন্ন দেশের বাজার কাঠামো ভিন্ন।”
অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু ও জ্বালানি বিভাগের লিন্ডা হেইডেন বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বাড়ানো সম্ভব।”

অস্ট্রেলিয়া–সিঙ্গাপুর সহযোগিতা
২৮ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের এনার্জি মার্কেট অথরিটি এবং অস্ট্রেলিয়ান এনার্জি রেগুলেটর যৌথভাবে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এর লক্ষ্য হলো নিম্ন-কার্বন প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে নীতি ও জ্ঞান বিনিময় জোরদার করা।
#পরিষ্কার_জ্বালানি #আসিয়ান #সবুজ_হাইড্রোজেন #বায়োমিথেন #নবায়নযোগ্য_শক্তি #যৌথ_অর্থায়ন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















