বাংলাদেশের বিমান খাতের রূপান্তরে এয়ারবাসের ভূমিকা
বাংলাদেশে নিযুক্ত হতে যাওয়া ফ্রান্সের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ-মার্ক সেরি-শারলে (Jean-Marc Séré-Charlet) বলেছেন, বাংলাদেশের বিমান খাত এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং এয়ারবাস এই খাতে একটি মূল কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়তে থাকা যোগাযোগ চাহিদার কারণে দেশটির আঞ্চলিক বিমান পরিবহন কেন্দ্র হয়ে উঠার সব উপাদান রয়েছে।”
বিমানের জন্য এয়ারবাসের প্রস্তাব
ফরাসি দূত জানান, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর আধুনিকীকরণে সহায়তা করতে এয়ারবাস একটি সমন্বিত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য বিমান সংস্থার মতো বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে তা সংস্থাটিকে আরও নমনীয়, টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।”

ইউরোপীয় কূটনীতিকদের আলোচনায় এয়ারবাসের ভূমিকা
ঢাকায় ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের বিমান খাতের উন্নয়ন নিয়ে ইউরোপীয় সংলাপ”-এ অংশ নেন জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লোটজ, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তারা সবাই বাংলাদেশের বিমান খাতের উন্নয়নে এয়ারবাসের ইতিবাচক ভূমিকার ওপর জোর দেন।
ইউরোপের যৌথ সমর্থন
ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, এয়ারবাসের প্রস্তাবটি ইউরোপের চারটি দেশ—ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও স্পেন—এর সম্মিলিত সমর্থনে তৈরি।
তিনি বলেন, “এই বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত সব ইউরোপীয় রপ্তানি ক্রেডিট সংস্থা ইতিমধ্যেই এই চুক্তিকে সমর্থন জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”
দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের লক্ষ্য
জ্যাঁ-মার্ক সেরি-শারলে বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপ শুধু বিমানের বিক্রির দিকে নয়, বরং বাংলাদেশের পুরো বিমান খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নেও সহযোগী হতে আগ্রহী।
এর মধ্যে থাকবে —
- পাইলট ও প্রকৌশলী প্রশিক্ষণ,
- রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম,
- শিল্প-প্রযুক্তি হস্তান্তর,
যা বিমানের মানবসম্পদ ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

ইউরোপের সঙ্গে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান
দূত জোর দিয়ে বলেন,
“আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ যখন আঞ্চলিক বিমান শক্তি হিসেবে উঠে আসছে, ইউরোপ এয়ারবাসের মাধ্যমে এই যাত্রায় তার সঙ্গে থাকতে চায়।”
ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে নিজের পরিচয়পত্র পেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জ্যাঁ-মার্ক সেরি-শারলে।
তিনি বলেন, “ফ্রান্স ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু দশকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।”
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার সুযোগ
ফরাসি দূত উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্স ও ইউরোপের জন্য সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই প্রেক্ষাপটেই, তিনি বলেন, “এয়ারবাস বাংলাদেশের বিমান খাতের রূপান্তরে এক বিশ্বস্ত ও টেকসই অংশীদার হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও আস্থা
দূত বলেন, “এয়ারবাস ফ্রান্স ও ইউরোপের বিমান প্রযুক্তি শিল্পের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ইউরোপীয় শিল্পের সাফল্যের প্রতীক নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের বিমান সংস্থার এক নির্ভরযোগ্য সহযোগী।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















