তালেবানের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা
আফগান তালেবান সম্প্রতি একটি প্রচারণামূলক মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে পাকিস্তানের লাহোরসহ একাধিক অঞ্চলকে তথাকথিত “গ্রেটার আফগানিস্তান”-এর অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা এই মানচিত্রকে সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, এটি তালেবানের রাজনৈতিক একঘরে অবস্থান ও শাসন ব্যর্থতার প্রতিফলন, শক্তি প্রদর্শনের নয়।
মানচিত্রের পেছনের উদ্দেশ্য: মানসিক চাপ সৃষ্টি
আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মানচিত্র প্রকাশের মূল লক্ষ্য আফগানিস্তানের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানো। তালেবান সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ, অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল, এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, যার পেশাদার সামরিক বাহিনী দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে স্বীকৃত।
সামাজিক মাধ্যমে উপহাসের ঝড়
তালেবানের এই ‘অবাস্তব দাবি’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছে। এমনকি আফগানিস্তানের ভেতরেও অনেক নাগরিক এই দাবিকে হাস্যকর বলে মনে করছেন। এক অনলাইন মন্তব্যে বলা হয়েছে, “যারা কাবুলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাও ঠিক রাখতে পারে না, তারা নাকি লাহোরের স্বপ্ন দেখে!”
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: ‘উসকানিমূলক প্রচেষ্টা’
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও সরকারি সূত্র এই মানচিত্রকে গুরুত্বহীন ও উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এটি কট্টরপন্থীদের এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে উত্তেজিত করা ও দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরিয়ে নেওয়া। তারা আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা প্রশ্নাতীত — দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিজ্ঞতা এই অবস্থানকে সুরক্ষিত রেখেছে।
ভারতের প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা
পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন, তালেবানের এই মানচিত্র প্রকাশ ভারতের কিছু গণমাধ্যমের বর্ণনার সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে। এসব গণমাধ্যম পাকিস্তানের নিরাপত্তা কাঠামোকে দুর্বল দেখানোর চেষ্টা করছে এবং সীমান্ত অস্থিতিশীলতার ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করছে। কিন্তু বাস্তবে পাকিস্তান এখনো আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, কূটনীতি ও বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে, যেখানে তালেবান সরকার এখনো বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম করছে।
‘গ্রেটার আফগানিস্তান’: দুর্বলতার প্রকাশ
তথাকথিত “গ্রেটার আফগানিস্তান” ধারণাটি মূলত শক্তির নয়, বরং দুর্বলতার প্রতীক। নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে তালেবান এখন প্রচারণার মাধ্যমে টিকে থাকার কৌশল নিচ্ছে। তাদের মানচিত্র হয়তো প্রচারণা কার্যালয়ে তৈরি হয়, কিন্তু পাকিস্তানের সীমান্ত নির্ধারিত হয়েছে ইতিহাস, শক্তি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে — কল্পনার নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















