ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনে ডিজিটাল রূপান্তর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ ভূমি ব্যবস্থাপনাকে করেছে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও নাগরিকবান্ধব।
ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উদ্দেশ্য
সরকার “Establishment of Digital Land Management System (EDLMS)” প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মূল লক্ষ্য ভূমি প্রশাসনকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করা। প্রকল্পটির মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিক সেবার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার রাজধানীর ভূমি ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই প্রকল্পের সফটওয়্যার সংক্রান্ত কর্মশালায় সিনিয়র সচিব সালেহ আহমেদ বলেন, বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পরিবেশে জনসেবা খাতেও দক্ষতা ও স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল পদ্ধতির বিকল্প নেই।

ডিজিটাল ভূমি জরিপ: একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ
সচিব উল্লেখ করেন, অতীতের কাগজ-কলম নির্ভর জরিপ পদ্ধতি ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ত্রুটিপূর্ণ। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে ভূমি জরিপ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। স্যাটেলাইট ও জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির সীমানা ও আয়তন নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এর ফলে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও বিরোধ হ্রাস পাচ্ছে। অনলাইন রেকর্ড ব্যবস্থার কারণে জালিয়াতি বা একাধিক মালিকানা দাবি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নাগরিকরা পাচ্ছেন দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা, যা ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে।
সফটওয়্যার উন্নয়নে মতামত ও অগ্রগতি
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে সফটওয়্যারের ব্যবহারবান্ধবতা ও নিরাপত্তা জোরদারের জন্য উন্নয়নমূলক সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। সচিব বলেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটিয়েছে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা
ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে সঠিক ডেটা পাওয়া যাচ্ছে, যা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অবকাঠামো, কৃষি, বন, ও শিল্প খাতে এখন আরও নির্ভুল পরিকল্পনা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে।
ভূমি প্রশাসনের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন নাগরিকদের জন্য সহজ, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মাহমুদ হাসান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিববৃন্দ, এলএমএস-এর ল্যান্ড পলিসি স্পেশালিস্ট মো. হান্নান মিয়া ও মো. হামিদুর রহমান, ইআরডি’র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোরিয়ান জিওমেক্সসফট-এর সিইও ড. জেয়ইয়ং ইউ। প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (উপসচিব) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের ভাষায়, “ডিজিটাল ভূমি জরিপের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো ভূমির সঠিক পরিমাপ ও রেকর্ড সংরক্ষণ। এটি কেবল প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ায়নি, বরং নাগরিকদের আস্থাও ফিরিয়ে এনেছে।”
ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার এই রূপান্তর আধুনিক ও স্বচ্ছ বাংলাদেশের পথে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















