স্বাধীনতার স্বপ্নে লড়াইরত রাখাইনদের কণ্ঠ
আরাকান আর্মি (এএ) প্রধান মেজর জেনারেল তুন মিয়াত নাইং দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সামরিক বাস্তবতার এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সামরিক জান্তার দমননীতি, জাতিগত বৈষম্য এবং নিরবচ্ছিন্ন সংঘাতের মধ্যেও তিনি বিশ্বাস করেন।
এই সাক্ষাৎকারে তিনি মিয়ানমারের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, জান্তার পরিকল্পিত নির্বাচন, জাতিগত ঐক্য এবং ভবিষ্যৎ বিপ্লবের সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
জান্তার পরিকল্পিত নির্বাচন: “এটি বৈধ নয়, এটি শোষণ”
তুন মিয়াত নাইং মনে করেন, জান্তা ক্ষমতা বৈধ করার নামে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ চালাচ্ছে। কিন্তু এমন নির্বাচনের কোনো বৈধতা নেই, কারণ এতে যোগ্য প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
তার ভাষায়—
“এই নির্বাচন যদি জান্তার ইচ্ছামতো হয়, তবে তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছু নয়।”
তিনি আরও বলেন, এএ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না এবং রাখাইন রাজ্যে ভোট গ্রহণের অনুমতি দেবে না। কারণ, এটি জনগণের সার্বিক মতামত প্রতিফলিত করবে না।

সু চির মুক্তি ও জান্তার ব্যর্থতা
সু চি-র বন্দিত্ব প্রসঙ্গে তুন মিয়াত নাইং বলেন,
“যদি তারা সত্যিই জনগণের আস্থা ফিরে পেতে চায়, তবে দাউ অং সান সু চিকে মুক্তি দিতে হবে।”
তবে তার মতে, জান্তা এতটাই সংকীর্ণ যে তারা এই ছোট পদক্ষেপটিও নিতে অক্ষম।
এই ব্যর্থতাই প্রমাণ করে—তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে না।
জাতিগত ঐক্য ও ইউনিয়ন গঠনের চ্যালেঞ্জ
তুন মিয়াত নাইং মনে করেন, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বামার জাতির শ্রেষ্ঠত্ববাদী মনোভাব।
তার মতে, যদি তারা সত্যিকারের ইউনিয়ন গঠন করতে চায়, তবে প্রথমে অতীতের ভুলের প্রতিকার করতে হবে।
“কোনো জাতি যদি অন্য জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চায়, তবে প্রথমে তাদের ক্ষত সারাতে হবে। অন্যথায় প্রকৃত ঐক্য সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, রাখাইন জনগণ ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে নতুন মিয়ানমারের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
নেতৃত্ব প্রসঙ্গে: “আমার দায়িত্ব রাখাইনকে মুক্ত করা”
যখন প্রশ্ন আসে—তিনি কি সমগ্র মিয়ানমারের নেতৃত্ব দিতে চান, তুন মিয়াত নাইং বলেন,
“আমার চূড়ান্ত মিশন হলো রাখাইন রাজ্যকে মুক্ত করা। এটি আমার ওপর ইতিহাসের অর্পিত দায়িত্ব।”
তিনি মনে করেন, রাখাইনদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও শতাব্দী ধরে চলা অপমানের অবসানই তার জীবনের লক্ষ্য।
তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, নেতৃত্ব মানে শুধু দায়িত্ব নেওয়া নয়, বরং সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা থাকা প্রয়োজন।
“আমি দায়িত্ব নিতে কখনো ভয় পাই না,” বলেন তিনি, “কিন্তু আমি এখনও নিজেকে মূল্যায়ন করছি—আমি কি সম্পূর্ণ প্রস্তুত?”
আশার আলো: “বিজয়ের প্রচেষ্টায় অনড় থাকা দরকার”
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মাঝেও তুন মিয়াত নাইং দৃঢ়ভাবে বলেন,
“আমরা কিছু লড়াই হারতে পারি, কিন্তু যুদ্ধ নয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার দাঁড়াতে হবে।”
তার মতে, অস্থায়ী ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে বিজয়ের জন্য দৃঢ়তা বজায় রাখা জরুরি।

আন্তর্জাতিক বার্তা: “বিপ্লব ফিরে আসবে”
তুন মিয়াত নাইং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সমালোচনা করেন। জাতিসংঘসহ প্রতিবেশী দেশগুলো কেবল পর্যবেক্ষণ করছে, বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
“জান্তা বিদেশি প্রযুক্তিগত সহায়তা ও কিছু স্বীকৃতি পাচ্ছে, কিন্তু এর ফল হচ্ছে আরও রক্তপাত। এই স্বীকৃতি কোনো সমাধান নয়।”
#রাখাইন #আরাকানআর্মি #তুনমিয়াতনাইং #মিয়ানমার #বিপ্লবফিরেআসবেই
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















