০২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে? গাজায় সহিংসতা ও মানবিক সংকটের মাঝে ইসরায়েলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০ জন নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক নীল মসজিদ মানবতার পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী আহ্বান ৯০ বছরের পুরানো জ্যাজ রেকর্ডের রাজত্ব ভিডিও গেমস এবং যুব সমাজ: আধুনিক প্রযুক্তি ও খেলাধুলার প্রভাব জাপানে বিমানযাত্রার খাবার: আকাশে এয়ারলাইন্সগুলো খাবারের মান উন্নত করেছে WTA ফাইনাল: ইগা শোয়াটেক ও এলেনা রাইবাকিনা প্রাথমিক জয়ে আধিপত্য কে-পপ শিল্পে চুক্তির ক্ষমতার প্রমাণ — নিউজিনস ও এক্সও সদস্যদের মামলায় রায় ব্যবস্থাপনার পক্ষে

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক জোরদারে নতুন অঙ্গীকার

ভারত ও ইসরায়েল সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদারে নতুন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মন্ত্রীদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (IMEC) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ভারত ও ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার-এর মধ্যে বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (IMEC) নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বৈঠকে দুই দেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদারে একমত পোষণ করে।

গাজা শান্তি পরিকল্পনায় ভারতের সমর্থন

জয়শঙ্কর বলেন, ভারত পশ্চিম এশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুলে দেবে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, “হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের দেহাবশেষ ও বন্দিদের মুক্তি আমরা স্বাগত জানাই।”

ইসরায়েলের দৃষ্টিতে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ

ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার বলেন, “ইসরায়েল বর্তমানে গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুথিদের মতো চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই সন্ত্রাসী শক্তিগুলিকে নির্মূল করা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন বিশ্বের প্রথম নেতা, যিনি ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করেন। আমরা সেটি কখনও ভুলব না।”

সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় যৌথ অবস্থান

জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত ও ইসরায়েল উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈশ্বিকভাবে শূন্যসহনশীলতার (zero tolerance) নীতি অনুসরণে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
জবাবে সার জানান, চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদ দুই দেশের জন্যই সমান হুমকি। তিনি এপ্রিল মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি

জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক বাস্তব অর্থে গভীর ও কৌশলগত। কঠিন সময়ে উভয় দেশ পরস্পরের পাশে থেকেছে। আজ এই সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।”

অর্থনীতি ও সংযোগে নতুন অধ্যায়

বৈঠকে বাণিজ্য, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পেশাজীবীদের চলাচল ও সংযোগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ একটি বিনিয়োগ চুক্তিতে সই করেন।
জয়শঙ্কর বলেন, “ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ইসরায়েলে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে।” তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত ‘এআই ইমপ্যাক্ট সামিট’-এ ইসরায়েলের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।

ভারতে কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়

বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় শ্রমিক ইসরায়েলে কর্মরত। জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের শ্রমিকরা সেখানে ক্রমবর্ধমানভাবে কাজ করছেন। তাদের কিছু বিষয় মনোযোগ দাবি করে, এবং আমরা আশা করি, এই ক্ষেত্রেও সহযোগিতা আরও বাড়বে।”

আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে যৌথ আগ্রহ

গিডিওন সার বলেন, ইসরায়েল আইটু-ইটু (I2U2) ও আইমেক (IMEC) প্রকল্পগুলোর মতো আঞ্চলিক সংযোগ উদ্যোগকে সমর্থন করছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ জোরদার করতে চাই। ভারত দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং ইসরায়েল আঞ্চলিক শক্তি—এই দুই দেশের সহযোগিতাই ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে।”
বৈঠক শেষে গিডিওন সার বলেন, “ভারতই ভবিষ্যৎ।”

#ভারত #ইসরায়েল #সন্ত্রাসবিরোধী_সহযোগিতা #গাজা_সংঘাত #IMEC #আঞ্চলিক_সংযোগ

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে?

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক জোরদারে নতুন অঙ্গীকার

১১:৩৫:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

ভারত ও ইসরায়েল সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদারে নতুন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মন্ত্রীদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (IMEC) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ভারত ও ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার-এর মধ্যে বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (IMEC) নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বৈঠকে দুই দেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদারে একমত পোষণ করে।

গাজা শান্তি পরিকল্পনায় ভারতের সমর্থন

জয়শঙ্কর বলেন, ভারত পশ্চিম এশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুলে দেবে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, “হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের দেহাবশেষ ও বন্দিদের মুক্তি আমরা স্বাগত জানাই।”

ইসরায়েলের দৃষ্টিতে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ

ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার বলেন, “ইসরায়েল বর্তমানে গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুথিদের মতো চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই সন্ত্রাসী শক্তিগুলিকে নির্মূল করা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন বিশ্বের প্রথম নেতা, যিনি ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করেন। আমরা সেটি কখনও ভুলব না।”

সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় যৌথ অবস্থান

জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত ও ইসরায়েল উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈশ্বিকভাবে শূন্যসহনশীলতার (zero tolerance) নীতি অনুসরণে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
জবাবে সার জানান, চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদ দুই দেশের জন্যই সমান হুমকি। তিনি এপ্রিল মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি

জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক বাস্তব অর্থে গভীর ও কৌশলগত। কঠিন সময়ে উভয় দেশ পরস্পরের পাশে থেকেছে। আজ এই সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।”

অর্থনীতি ও সংযোগে নতুন অধ্যায়

বৈঠকে বাণিজ্য, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পেশাজীবীদের চলাচল ও সংযোগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ একটি বিনিয়োগ চুক্তিতে সই করেন।
জয়শঙ্কর বলেন, “ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ইসরায়েলে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে।” তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত ‘এআই ইমপ্যাক্ট সামিট’-এ ইসরায়েলের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।

ভারতে কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়

বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় শ্রমিক ইসরায়েলে কর্মরত। জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের শ্রমিকরা সেখানে ক্রমবর্ধমানভাবে কাজ করছেন। তাদের কিছু বিষয় মনোযোগ দাবি করে, এবং আমরা আশা করি, এই ক্ষেত্রেও সহযোগিতা আরও বাড়বে।”

আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে যৌথ আগ্রহ

গিডিওন সার বলেন, ইসরায়েল আইটু-ইটু (I2U2) ও আইমেক (IMEC) প্রকল্পগুলোর মতো আঞ্চলিক সংযোগ উদ্যোগকে সমর্থন করছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ জোরদার করতে চাই। ভারত দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং ইসরায়েল আঞ্চলিক শক্তি—এই দুই দেশের সহযোগিতাই ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে।”
বৈঠক শেষে গিডিওন সার বলেন, “ভারতই ভবিষ্যৎ।”

#ভারত #ইসরায়েল #সন্ত্রাসবিরোধী_সহযোগিতা #গাজা_সংঘাত #IMEC #আঞ্চলিক_সংযোগ