০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ ওবামাকেয়ার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন: খরচ বাড়ছে, সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে? গাজায় সহিংসতা ও মানবিক সংকটের মাঝে ইসরায়েলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০ জন নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক নীল মসজিদ মানবতার পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী আহ্বান ৯০ বছরের পুরানো জ্যাজ রেকর্ডের রাজত্ব ভিডিও গেমস এবং যুব সমাজ: আধুনিক প্রযুক্তি ও খেলাধুলার প্রভাব জাপানে বিমানযাত্রার খাবার: আকাশে এয়ারলাইন্সগুলো খাবারের মান উন্নত করেছে

রোমের মধ্যযুগীয় টাওয়ার ধসে প্রাণ গেল এক শ্রমিকের

দুর্ঘটনায় আটকে পড়া শ্রমিকের মৃত্যু

রোমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এক মধ্যযুগীয় টাওয়ারের আংশিক ধসের ঘটনায় একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৬৬ বছর বয়সী অক্টাভ স্ট্রোইচি নামের ওই শ্রমিক প্রায় বারো ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকার পর উদ্ধার হন, কিন্তু পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

দীর্ঘ উদ্ধার অভিযান

স্থানীয় সময় রাত ১১টায় (গ্রিনিচ সময় রাত ১০টা) তাঁকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বের করা হয়। উদ্ধার অভিযানে দমকলকর্মীরা ড্রোন ও বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন, যদিও টাওয়ারটির নড়বড়ে অবস্থা উদ্ধারকাজকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল। উদ্ধার চলাকালে স্ট্রোইচি সচেতন অবস্থায় উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁর স্ত্রীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

রোমানিয়ার নাগরিক ও সহকর্মীরা

রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্ট্রোইচি রোমানিয়ার নাগরিক ছিলেন। ধসে আহত তিনজনের মধ্যে আরেকজনও রোমানিয়ান। মন্ত্রণালয় নিহত শ্রমিকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, “শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আশা ধরে রেখেছিলাম।”

ঐতিহাসিক স্থাপনায় সংরক্ষণকাজ চলছিল

স্ট্রোইচি রোমের বিখ্যাত ভিয়া দেই ফোরি ইম্পেরিয়ালি সড়কের পাশে অবস্থিত ‘টোরে দেই কন্তি’ নামের টাওয়ারটিতে সংরক্ষণকাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৩ শতকে নির্মিত এই স্থাপনাটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে টাওয়ারের একটি অংশ ধসে পড়ে, এবং দেড় ঘণ্টা পর আবারো একটি অংশ ভেঙে পড়লে উদ্ধারকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয়।

বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ

রোমের প্রশাসক লামবের্তো জিয়ানিনি ঘটনাটিকে “খুবই জটিল পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথম ধসের পর দমকলকর্মীরা স্ট্রোইচির চারপাশে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, ফলে দ্বিতীয় ধসেও তাঁকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। উদ্ধার অভিযান দীর্ঘ হয় কারণ উদ্ধারকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা ঝুঁকি কমাতে হয়েছে।

আহত দমকলকর্মী ও তদন্ত

ইতালীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এক দমকলকর্মী চোখে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে অন্যরা অক্ষত থেকে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখেন। রোমের প্রসিকিউটর অফিস দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি উদ্ধার অভিযান চলাকালে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “ধ্বংসস্তূপের নিচে যিনি জীবনের জন্য লড়ছেন, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি।” রোমের মেয়র ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য

অন্য এক শ্রমিক, ৬৭ বছর বয়সী ওত্তাভিয়ানো, যিনি ধসের সময় ভবনের ভেতরেই ছিলেন কিন্তু বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন, সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেন, “এটি নিরাপদ ছিল না। আমি শুধু বাড়ি ফিরতে চাই।”

ঐতিহাসিক পটভূমি

১৩ শতকে পোপ ইনোসেন্ট তৃতীয় তাঁর ভাইয়ের জন্য টাওয়ারটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি রোমান ফোরামের প্রধান পর্যটন এলাকার পাশেই অবস্থিত। দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য আশপাশের রাস্তা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।


জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ

রোমের মধ্যযুগীয় টাওয়ার ধসে প্রাণ গেল এক শ্রমিকের

১২:৪২:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

দুর্ঘটনায় আটকে পড়া শ্রমিকের মৃত্যু

রোমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এক মধ্যযুগীয় টাওয়ারের আংশিক ধসের ঘটনায় একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৬৬ বছর বয়সী অক্টাভ স্ট্রোইচি নামের ওই শ্রমিক প্রায় বারো ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকার পর উদ্ধার হন, কিন্তু পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

দীর্ঘ উদ্ধার অভিযান

স্থানীয় সময় রাত ১১টায় (গ্রিনিচ সময় রাত ১০টা) তাঁকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বের করা হয়। উদ্ধার অভিযানে দমকলকর্মীরা ড্রোন ও বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন, যদিও টাওয়ারটির নড়বড়ে অবস্থা উদ্ধারকাজকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল। উদ্ধার চলাকালে স্ট্রোইচি সচেতন অবস্থায় উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁর স্ত্রীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

রোমানিয়ার নাগরিক ও সহকর্মীরা

রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্ট্রোইচি রোমানিয়ার নাগরিক ছিলেন। ধসে আহত তিনজনের মধ্যে আরেকজনও রোমানিয়ান। মন্ত্রণালয় নিহত শ্রমিকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, “শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আশা ধরে রেখেছিলাম।”

ঐতিহাসিক স্থাপনায় সংরক্ষণকাজ চলছিল

স্ট্রোইচি রোমের বিখ্যাত ভিয়া দেই ফোরি ইম্পেরিয়ালি সড়কের পাশে অবস্থিত ‘টোরে দেই কন্তি’ নামের টাওয়ারটিতে সংরক্ষণকাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৩ শতকে নির্মিত এই স্থাপনাটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে টাওয়ারের একটি অংশ ধসে পড়ে, এবং দেড় ঘণ্টা পর আবারো একটি অংশ ভেঙে পড়লে উদ্ধারকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয়।

বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ

রোমের প্রশাসক লামবের্তো জিয়ানিনি ঘটনাটিকে “খুবই জটিল পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথম ধসের পর দমকলকর্মীরা স্ট্রোইচির চারপাশে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, ফলে দ্বিতীয় ধসেও তাঁকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। উদ্ধার অভিযান দীর্ঘ হয় কারণ উদ্ধারকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা ঝুঁকি কমাতে হয়েছে।

আহত দমকলকর্মী ও তদন্ত

ইতালীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এক দমকলকর্মী চোখে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে অন্যরা অক্ষত থেকে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখেন। রোমের প্রসিকিউটর অফিস দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি উদ্ধার অভিযান চলাকালে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “ধ্বংসস্তূপের নিচে যিনি জীবনের জন্য লড়ছেন, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি।” রোমের মেয়র ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য

অন্য এক শ্রমিক, ৬৭ বছর বয়সী ওত্তাভিয়ানো, যিনি ধসের সময় ভবনের ভেতরেই ছিলেন কিন্তু বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন, সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেন, “এটি নিরাপদ ছিল না। আমি শুধু বাড়ি ফিরতে চাই।”

ঐতিহাসিক পটভূমি

১৩ শতকে পোপ ইনোসেন্ট তৃতীয় তাঁর ভাইয়ের জন্য টাওয়ারটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি রোমান ফোরামের প্রধান পর্যটন এলাকার পাশেই অবস্থিত। দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য আশপাশের রাস্তা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।