ইসরায়েলি অভিযানের ধ্বংসযজ্ঞের পর মানসিকভাবে বিধ্বস্ত গাজার জনগণ — শিশুরা ভুগছে ভয়, ক্ষুধা ও নিদ্রাহীনতায়
গাজার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানের পর থেকে গাজা এখন এক ‘মানসিক আগ্নেয়গিরির’ মতো ফেটে পড়ছে। অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর থেকেই অসংখ্য মানুষ মানসিক চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।
দুই বছরের ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত গাজা
গত দুই বছরে ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলা ও সামরিক অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন, খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। ফলে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই মানসিক আঘাত ও হতাশায় ভুগছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা।

মানসিক হাসপাতালে রোগীর ঢল
গাজা সিটি মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রধান আবদাল্লাহ আল জামাল বলেন, “যুদ্ধবিরতি শুরু হতেই মনে হলো, যেন আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে মানসিক চিকিৎসার জন্য ছুটে আসছে। আগের মতো মানসিক রোগীর কাছে যাওয়া নিয়ে কোনো ভয় বা লজ্জা এখন আর নেই।”
তবে হাসপাতালটি যুদ্ধের সময় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন তারা একটি অস্থায়ী ক্লিনিক থেকে কাজ করছেন। সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে জামাল ও তাঁর সহকর্মীরা প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে দেখছেন। গোপনীয় পরামর্শের জায়গা না থাকায় একই ঘরে একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জামাল বলেন, “এভাবে চিকিৎসা দেওয়া সত্যিই অসম্মানজনক, কিন্তু বিকল্প নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
শিশুদের ভয় ও মানসিক বিপর্যয়
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে রাতের দুঃস্বপ্ন, হঠাৎ কান্না, বিছানা ভেজানো, মনোযোগের ঘাটতি এবং আতঙ্কের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

সংগঠনের বিশেষজ্ঞ নিভিন আবদেলহাদি বলেন, “গাজার শিশুরা এখন খাবার, পানি, আশ্রয় ও পোশাক—সব কিছুর ঘাটতিতে দিন কাটাচ্ছে। আমরা তাদের জন্য গল্প বলা, খেলা ও আঁকাআঁকির মতো মানসিক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছি।”
যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি দিলেও সহিংসতা অব্যাহত
১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি বড় আকারের সংঘর্ষ কিছুদিনের জন্য থামালেও মাঝেমধ্যেই নতুন সহিংসতা দেখা দিচ্ছে।
এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয় বলে ইসরায়েলি পরিসংখ্যান জানায়।
তবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজার মানুষ এখনও ভয়, ক্ষুধা ও মানসিক আঘাতে দিন কাটাচ্ছে — একটি প্রজন্ম ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ট্রমা, ক্ষতি ও অনিশ্চয়তার ভার নিয়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















