নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানি’র বিজয় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা বৈশ্বিক বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছে। তার নির্বাচনী প্রচারণা, যা affordability নীতির উপর গুরুত্ব দিয়েছিল, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সাড়া ফেলেছে, বিশেষত যেখানে তার পারিবারিক শেকড় রয়েছে। তবে তার বিজয় কিছু দেশের মধ্যে সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে যেখানে তিনি তার সমালোচনা করেছেন, যেমন ইসরায়েল।
মামদানি, যিনি একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, তার নির্বাচনী প্রচারণায় জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছেন। তিনি তার বিজয় বক্তৃতায় ইয়েমেনি বোডেগা মালিক, সেনেগালিস ট্যাক্সি ড্রাইভার, উজবেক নার্স, ত্রিনিদাদীয় খাবারের কুক, এবং ইথিওপিয়ান আন্টির মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এটি বিশ্বজুড়ে আশাবাদী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যখন বিশ্বে ডানপন্থী জনতার প্রভাব বাড়ছে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ব্রিটেনে, যেখানে গ্রীন পার্টির নবাগত নেতা মামদানি’র নির্বাচনী কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, বেশ কিছু বামপন্থী রাজনীতিবিদ তার বিজয় উদযাপন করছেন। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বিরোধে জড়িয়েছেন, মামদানি’র বিজয়কে “আশার” একটি বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জেরেমি করবিন, প্রাক্তন লেবার পার্টির নেতা, নিউ ইয়র্কে মামদানি’র সমর্থনে প্রচারণা চালিয়েছেন।

কোলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, যাকে সেপ্টেম্বরে মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছিল, মামদানি’র বিজয়কে উদযাপন করে তার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এছাড়াও, পেত্রোরের দলের আরেক নেতা মারিয়া হোসে পিজারো রদ্রিগেজ মামদানি’র বিজয়কে “লিবারেল ধারণা”র প্রয়োজনীয়তা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ইসরায়েলে বিতর্ক
তবে, মামদানি’র ইসরায়েল সম্পর্কে মন্তব্য একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেছেন যে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন, তবে “জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধতার” অধিকার তিনি স্বীকার করেন না। তার এই বক্তব্য ইসরায়েলের ন্যাশনাল সিকিউরিটি মিনিস্টার ইটামার বেন-গ্ভিরের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যিনি মামদানি’র বিজয়কে “এন্টি-সেমিটিজমের একটি মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি আইন প্রণেতা আমিচাই চিকলি, নিউ ইয়র্ক সিটির কাছে মামদানি’কে “হামাস সমর্থক” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ইসরায়েলি ইহুদিদের নিউ ইয়র্ক ছেড়ে ইসরায়েলে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মামদানি’র রাজনৈতিক যাত্রা
মামদানি, যিনি ৩৪ বছর বয়সী, নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম দক্ষিণ এশীয় এবং মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তার বিজয়টি তার বর্ণনা করা সত্ত্বেও নিছক একটি রাজনীতি নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি উদাহরণ। তিনি তার পরিবারের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে উগান্ডায় ১৯৭০-এর দশকে তাদের উচ্ছেদ হওয়ার গল্প এবং নিউ ইয়র্কে মুসলিমদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে তার নিজের অভিজ্ঞতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় জড়িয়েছেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের নানা দেশের বামপন্থী নেতারা মামদানি’র বিজয়কে উদযাপন করেছেন, যেমন কানাডার জাগমীত সিং, ভারতের অভিষেক মন্নু সিংভি, এবং ফ্রান্সের ম্যানন অঁব্রি। তাদের মতে, মামদানি’র বিজয় প্রমাণ করে যে উদারপন্থী মূল্যবোধ এখনও টিকে আছে এবং পরিবর্তন সাধনে জনগণের শক্তি রয়েছে।
![]()
বিশেষ সমর্থন ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষভাবে, মামদানি’র নির্বাচনী কৌশল, তার পরিচয় এবং তার রাজনৈতিক দর্শন অনেকের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই সাথে, তার সমালোচনাও কেবল কিছু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তার বিরুদ্ধে সমালোচনা রয়েছে ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের কাছেও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে মামদানি তাকে “যুদ্ধাপরাধী” আখ্যা দিয়েছিলেন, যা ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
মামদানি’র বিজয় একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে, যেখানে পরিবর্তন এবং বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতা রাজনৈতিক দৃশ্যে আরও দৃঢ় অবস্থান পেতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে বামপন্থী নেতারা তাকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করছেন, তবে তার কিছু মন্তব্য এবং আচরণ বিশেষত ইসরায়েলসহ কিছু দেশের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
#MamdaniVictory #GlobalLeft #IsraelControversy #ProgressivePolitics #HistoricalElection
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















