ভাইরাল ভিডিওতে জেলের নিরাপত্তা প্রশ্নে কর্ণাটক সরকার নড়েচড়ে বসেছে
বেঙ্গালুরুর পরাপ্পান আগ্রাহারা কেন্দ্রীয় জেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে একাধিক ভিডিও ফাঁসের ঘটনায়। এসব ভিডিওতে দেখা গেছে, কুখ্যাত আইএস জঙ্গি জুহাইব মান্না ও দোষী সাব্যস্ত সিরিয়াল ধর্ষক উমেশ রেড্ডি জেলের ভেতরে অবাধে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, চা খাচ্ছেন, এমনকি টেলিভিশনও দেখছেন বলেও দেখা গেছে।
এই ঘটনার পর জেল প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে কিছু কয়েদিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়েও।
আইএস জঙ্গি জুহাইব মান্নার অবাধ চলাফেরা
প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, জুহাইব হামিদ শাকিল মান্না মোবাইলে স্ক্রল করছেন, পাশাপাশি কথা বলছেন ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির সঙ্গে। মান্না বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এবং কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তাকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) গ্রেপ্তার করেছিল আইএস জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে। তিনি ‘প্রতারিত’ মুসলিম তরুণদের সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ ও পাঠানোর কাজে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে এ তথ্য জানা যায়।
সিরিয়াল ধর্ষক উমেশ রেড্ডির তিনটি ফোন জব্দ
আরেকটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, উমেশ রেড্ডি নামের কুখ্যাত সিরিয়াল ধর্ষক ও হত্যাকারী জেলের ভেতর অন্তত তিনটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলকর্মীরাও বিষয়টি জানতেন; তবুও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
রেড্ডির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার মোট ১৮টি মামলা ছিল। একসময় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তিন বছর আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় পরিবর্তন করে দেয় এবং ৩০ বছরের যাবজ্জীবন সাজা নির্ধারণ করে।
রেড্ডির অপরাধের ইতিহাস
উমেশ রেড্ডি একসময় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর সদস্য ছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি এক কমান্ড্যান্টের মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে গিয়ে কর্ণাটকে ফিরে আসেন।
তার বিরুদ্ধে একসময় ২০টি ধর্ষণ ও ১৮টি হত্যার অভিযোগ ওঠে। ২০০৬ সালে বেঙ্গালুরুর এক আদালত তাকে ৩৭ বছর বয়সী এক নারীর ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত শুরু
ভিডিওগুলো ভাইরাল হতেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পরমেশ্বর জানিয়েছেন, “এ ধরনের ভিআইপি সুবিধা কোনোভাবেই জেলে মেনে নেওয়া হবে না।”
প্রাথমিকভাবে জেল কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রকাশ পেয়েছে ভারতের কিছু জেলে নিরাপত্তা ও নজরদারির ঘাটতি। আইএস জঙ্গি ও সিরিয়াল ধর্ষকের মতো বিপজ্জনক বন্দিদের এই অবাধ চলাফেরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে, জেলের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা আসলে কতটা কার্যকর?
#আইএস #উমেশরেড্ডি #বেঙ্গালুরু #জেলকেলেঙ্কারি #কর্ণাটকসরকার #ভারতসংবাদ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















