চীনা বিজ্ঞানীরা ১৪০ বছর পুরোনো এক জটিল রসায়ন সমস্যার সমাধান করেছেন, যা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা ও অন্যান্য ওষুধ উৎপাদনের খরচ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে পারে। এই আবিষ্কার রসায়ন শিল্পের প্রচলিত উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গবেষণার নেতৃত্ব ও প্রকাশনা
এই যুগান্তকারী গবেষণার নেতৃত্ব দেন চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেসের হাংজো ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির ঝাং শিয়াহেং এবং সাংহাই ইনস্টিটিউট অব অর্গানিক কেমিস্ট্রির অধ্যাপক শুয়ে শিয়াওসং। তাঁদের যৌথ গবেষণাটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক মহলে প্রতিক্রিয়া
বিশ্বখ্যাত ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের সিনিয়র প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট স্কট ব্যাগলি এই গবেষণাকে বর্ণনা করেছেন “একটি প্রকৃত tour de force” হিসেবে। তিনি বলেন, গবেষক দল শুধু নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেননি, বরং এর কার্যকারিতা প্রমাণে গভীরতর বিশ্লেষণ ও বাস্তব প্রয়োগও দেখিয়েছেন।
চীনের রসায়ন গবেষণা সম্প্রদায়ের অনেকেই এই সাফল্যকে “নোবেল পুরস্কার-যোগ্য” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এক শতাব্দীর পুরোনো জটিল প্রক্রিয়ায় বিপ্লব
গবেষকরা এমন একটি সহজতর বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তাব করেছেন, যা গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ ও কীটনাশক তৈরিতে ব্যবহৃত ব্যয়বহুল, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই পুরোনো প্রক্রিয়াটি মূলত ‘অ্যামিন’ নামক এক শ্রেণির জৈব যৌগ থেকে রাসায়নিক পদার্থ সংশ্লেষণের ওপর নির্ভর করে, যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি ও উচ্চ উৎপাদন খরচের জন্য দীর্ঘদিন সমালোচিত ছিল।
নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উৎপাদনের সম্ভাবনা
নতুন পদ্ধতিটি পুরোনো পদ্ধতির বহু সীমাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হয়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কেবল উৎপাদনকে নিরাপদই করবে না, বরং ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে। ফলে ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো ভবিষ্যতে আরও সহজলভ্য হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন
স্কট ব্যাগলির ভাষায়, “গবেষকরা শুধুমাত্র একটি নতুন পদ্ধতি উপস্থাপন করেননি, বরং এর গভীর প্রক্রিয়াগত বিশ্লেষণ এবং বাস্তব প্রয়োগের উদাহরণ দেখিয়েছেন। তাঁদের কাজ প্রমাণ করে যে এই রসায়নিক প্রক্রিয়া বহু ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।”
এই গবেষণা শুধু চীনের বৈজ্ঞানিক দক্ষতার আরেকটি নিদর্শন নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী চিকিৎসা ও নিরাপদ ওষুধ উৎপাদনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















