বিলাস ছেড়ে সরলতায় — নতুন প্রজন্মের বিয়ের বিপ্লব
লন্ডনের হ্যাকনি টাউন হলে এই গ্রীষ্মে বিয়ে করলেন গায়িকা চার্লি এক্সসিএক্স ও ব্যান্ড দ্য 1975–এর ড্রামার জর্জ ড্যানিয়েল। বর পরেছিলেন জর্জিও আরমানির স্যুট, আর কনে পরেছিলেন ভিভিয়েন ওয়েস্টউডের ছোট সাদা পোশাক—চোখে ছিল কালো সানগ্লাস। বিয়ের পর দম্পতি সরকারি ভবনের সিঁড়িতে ছবি তুলে কাছের রেস্তোরাঁয় গিয়ে ধূমপান ও ককটেল উপভোগ করেন।
এই বিয়ে কেবল তাদের ‘ডেভিল-মে-কেয়ার’ স্বভাবকেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা এক নতুন প্রবণতাকেও প্রকাশ করে—বিলাসবহুল বিয়ের পরিবর্তে এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন টাউন হলে গিয়ে সাদামাটা বিয়ের পথ। যদিও সবাই চার্লি এক্সসিএক্সের মতো পরবর্তীতে ইতালিতে রেভ পার্টির সুযোগ পান না, তথাপি এমন সহজ বিয়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
টাউন হলে বিয়ের উত্থান
লন্ডনের দুটি জনপ্রিয় টাউন হল—ওল্ড মেরিলিবোন ও ইজলিংটন—এ ২০২৫ সালে বিয়ে ও সিভিল পার্টনারশিপের সংখ্যা মহামারির আগের তুলনায় যথাক্রমে ২৯% ও ৫১% বেড়েছে। নিউইয়র্কেও ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ম্যানহাটন ম্যারেজ ব্যুরোতে বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে ২২%।
এখন আর বিলাসী ফুল, বিশাল ভেন্যু বা দীর্ঘ অতিথি তালিকার প্রয়োজন পড়ছে না। অনেকে স্থানীয় ফুলের দোকান থেকে তোড়া কিনে নেন, রিসেপশন করেন পাড়ার পাবেই। কেউ নিজের হাতে কেক বেক করেন, কেউবা ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান নিজের বিয়েতে। এক টিকটক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নিজের বিয়েতে মেট্রোতে ওঠার মধ্যেও এক বিশেষ রোমান্টিকতা আছে।”
পিন্টারেস্টের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে “রেজিস্ট্রি-অফিস এলোপমেন্ট” শব্দগুচ্ছের সার্চ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছিল ১৯০%।

তারকাদেরও টাউন হলের প্রতি আকর্ষণ
১৯৭০ ও ৮০–এর দশকেই টাউন হলে বিয়ের ধারা প্রথম জনপ্রিয় হয়। ১৯৭১ সালে রক কিংবদন্তি মিক জ্যাগার বিয়ে করেছিলেন সেন্ট ট্রোপেজের টাউন হলে। ওল্ড মেরিলিবোন টাউন হল সম্ভবত ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি সেলিব্রিটি বিয়ের সাক্ষী—তিনজন বিটলস সদস্য (রিঙ্গো স্টারের একবার ও পল ম্যাককার্টনির দুইবার) এবং ওয়েসিস ব্যান্ডের সদস্য লিয়াম গ্যালাঘারের উভয় বিয়েও এখানেই সম্পন্ন হয়েছে।
দুই বড় কারণ: খরচ ও মানসিক শান্তি
ছোট পরিসরের বিয়ে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে মূলত দুটি কারণে।
প্রথমত, খরচ—ব্রিটেন ও আমেরিকায় একটি গড় বিয়ের খরচ প্রায় ৩০,০০০ ডলার, যেখানে টাউন হল বা কোর্টহাউসে বিয়ে সারতে খরচ মাত্র ১০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। নিউইয়র্কের বিয়ের ফটোগ্রাফার স্টেফ রেয়েস বলেন, অনেক তরুণ দম্পতি এখন ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে চান, এক দিনের বিলাসিতার জন্য নয়।
দ্বিতীয়ত, চাপ কমানো—টাউন হলের বিয়ে দ্রুত ও ঘনিষ্ঠ পরিবেশে সম্পন্ন হয়। ২০২৫ সালের দ্য নট নামে একটি বিয়ে পরিকল্পনা সংস্থার জরিপে দেখা যায়, আধুনিক যুগের দম্পতিরা এখন বিয়েতে ‘আসল অনুভব’ বা অথেনটিসিটি-কে অগ্রাধিকার দেন। তাদের মতে, বিয়ে এমন হওয়া উচিত যা তাদের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। কারও জন্য তা চার্চে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, আবার অনেকের কাছে তা হলো রেজিস্ট্রি অফিসে সহজ এক প্রতিশ্রুতি—এরপর পাড়ার পাবেতে এক পিন্ট বিয়ার।

নতুন ধারা, নতুন সংজ্ঞা
আজকের যুগে বিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি ব্যক্তিগত দর্শনের প্রতিফলন। ছোট আকারের, ব্যক্তিগত ও কম খরচের এই বিয়েগুলো প্রমাণ করছে, ভালোবাসা প্রকাশে জাঁকজমক নয়, বরং আন্তরিকতাই সৌন্দর্যের আসল রূপ।
#NoFrillsNuptials #WeddingTrends #SimpleWeddings #CharliXCX #LondonTownHall #ModernLove #MinimalWedding #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















