দীর্ঘ যাত্রা শেষে বেলেমে আগমন
ব্রাজিলের বেলেম শহরে জাতিসংঘের COP30 জলবায়ু সম্মেলন শুরুর একদিন আগে আন্দেস পর্বতের হিমবাহ অঞ্চল থেকে সপ্তাহব্যাপী যাত্রা শেষে একদল আদিবাসী নেতা আমাজন নদীপথে নৌকাযোগে বেলেমে এসে পৌঁছান।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—নিজেদের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা দাবি করা। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খনিজ উত্তোলন, তেল অনুসন্ধান ও বননিধন কার্যক্রম আদিবাসী এলাকা পর্যন্ত প্রবেশ করছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
“আমাদের ভূমি আর উৎসর্গ নয়”
গুয়াতেমালার কিচে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি লুসিয়া ইক্সচিউ বলেন, “আমরা শুধু অর্থ বা অর্থায়নের নিশ্চয়তা চাই না। আমরা চাই এমন এক ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে যেখানে আর কোনো আদিবাসী ভূমিকে উৎসর্গ করতে হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি এটি একটি স্বপ্ন, কারণ অনেক স্বার্থ এখানে জড়িত। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম থামবে না।”

খনিজ ও বননিধনের দখল
সম্প্রতি আর্থ ইনসাইট ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অব টেরিটোরিয়াল কমিউনিটিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাজন রেইনফরেস্টের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা আদিবাসী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের দখলে থাকলেও, তার ১৭ শতাংশ এখন খনিজ উত্তোলন, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং বননিধনের হুমকির মুখে রয়েছে।
এছাড়া, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আমাজন, কঙ্গো, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার অঞ্চলে ১,৬৯০ জন পরিবেশ রক্ষাকারীকে হত্যা বা অপহরণ করা হয়েছে বলে গ্লোবাল উইটনেস জানিয়েছে।
“পৃথিবী ব্যবসার জিনিস নয়”
ইক্সচিউ বলেন, “সব কিছু অর্থের চারপাশে ঘুরতে হবে না। পৃথিবী কোনো ব্যবসা নয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ, যা আদিবাসীরা ১২ হাজার বছর ধরে রক্ষা করে আসছে।”
আনন্দঘন আগমন ও সাংস্কৃতিক আচার
আন্দেসের বরফাচ্ছন্ন অঞ্চলে জ্যাকেট ও উলের টুপি পরা ইক্সচিউ বেলেমে পৌঁছে পরেছিলেন হালকা বেগুনি ও কালো রঙের ছোট হাতার ঐতিহ্যবাহী পোশাক। নদীর পাড়ে তাদের আগমন উদযাপিত হয় গান, নৃত্য ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে তারা মোমবাতি, মিষ্টি, বীজ, কোকা পাতা এবং একটি লামা শিশুর প্রতীকী দেহ উৎসর্গ করেন, যা প্রকৃতির দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও যাত্রার একটি অংশ ছিল।

নৌযাত্রার অংশগ্রহণকারীরা—যারা পথে বিভিন্ন নৌকা বদল করেছেন—শেষে “ইয়াকু মামা” (জলের মা) নামের তিনতলা কাঠের নৌকায় বেলেমে পৌঁছান।
যাত্রাপথে নানা কার্যক্রম
যাত্রাপথে তারা পেরু, কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের বিভিন্ন স্থানে থেমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা, প্রদর্শনী ও কর্মশালা আয়োজন করেন।
ইকুয়েডরের কোকা শহরে তারা “জ্বালানি তেলের অন্ত্যেষ্টি” নামে প্রতীকী অনুষ্ঠান করেন এবং ব্রাজিলের মানাউসে ছোট চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও শিক্ষামূলক সভা করেন।
এই যাত্রা ছিল শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার পর্বত হিমবাহ ও নদীগুলোর সংকট তুলে ধরার এক বাস্তব বার্তা।
জাতিসংঘের ২০২৫ সালের বিশ্ব জলসম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট উষ্ণমণ্ডলীয় হিমবাহের ৯৯ শতাংশই আন্দেস পর্বতমালায় অবস্থিত। ১৯৮০-এর দশক থেকে এ অঞ্চলের হিমবাহের বরফ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত গলেছে, যা আমাজনের পানির উৎসের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
“আমরা আমাদের প্রাপ্য স্থান নিচ্ছি”
৩০ দিনের এই যাত্রা শেষে ইক্সচিউ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “আমরা যেসব তরুণ আদিবাসীর সঙ্গে ভ্রমণ করেছি, তাদের প্রতিশ্রুতি দেখে আমি আশাবাদী। তারা নিজেদের ভূমি রক্ষার জন্য প্রস্তুত। এই COP30 আসলেই আমাজনের সম্মেলন—কারণ আমরা এখানে উপস্থিত, আমরা আমাদের প্রাপ্য স্থান গ্রহণ করছি।”
#COP30 #আমাজন #আন্দেস #জলবায়ুপরিবর্তন #আদিবাসীঅধিকার #ব্রাজিল #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















