বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বৃহস্পতিবারের ঘোষিত ‘লকডাউন’-এর আগে চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সম্ভাব্য সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানীজুড়ে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী বলেন, “লকডাউনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা আশা করি ঢাকাবাসী শান্তি রক্ষায় আমাদের পাশে থাকবে।”
তিনি জানান, রাজধানীর সব প্রবেশ ও প্রস্থানপথে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকায় বিজিবি মোতায়েন
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল থেকে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে মোট ১৪টি প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১২টি এবং আশপাশের জেলাগুলোতে ২টি প্লাটুন দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন, “বিজিবি সদস্যরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ধানমন্ডি-৩২, বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, কাকরাইল, শিশু পার্ক, হাইকোর্ট এলাকা ও আবরার ফাহাদ এভিনিউসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল দিচ্ছেন।”
.jpg)
সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ
রাজধানীতে ইতোমধ্যে সহিংসতার ছাপ দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতে সুত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের কাছে মালঞ্চ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মকর্তা জানান, “গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে অন্তত পাঁচটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”
রাজনৈতিক পটভূমি
এই ঘোষিত ‘লকডাউন’ এসেছে এমন সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় দিতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলেছে।

জনমনে ভয় ও উদ্বেগ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্বাস সত্ত্বেও নাগরিকদের মধ্যে ভয় স্পষ্ট। গাবতলী বাস টার্মিনালে এক যাত্রী বলেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি, কারণ কাল হয়তো বাস চলবে না। গত কয়েক রাতে কিছু এলাকায় আগুন দেওয়ার খবর পাচ্ছি।”
পুলিশের সতর্কতা ও নির্দেশনা
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী বলেন, “যে কেউ সহিংসতা বা ভাঙচুরে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে আসা দুর্বৃত্তরা যেন শহরে লুকিয়ে থাকতে না পারে, সেজন্য বাড়ির মালিক, হোটেল, হোস্টেল ও মেস মালিকদের অচেনা কাউকে আশ্রয় না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
“মোটরসাইকেল বা গাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে ভাড়াটিয়ার পরিচয় নিশ্চিত করুন, যাতে তা দুর্বৃত্তদের হাতে না পড়ে,” তিনি বলেন।
তিনি আরও আহ্বান জানান, কোনো সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার জন্য।

সহিংসতা ও গ্রেপ্তার অভিযান
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠন ১৪টি আকস্মিক মিছিল করেছে। একই সময়ে ঢাকাজুড়ে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত দুই দিনেই ৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।”
এইসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৫২ জনকে আটক করা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা সাধারণত হেলমেট ও মুখোশ পরে থাকে এবং ভোরবেলা বা অফিস ছুটির সময় আক্রমণ চালায়। “আমরা প্রমাণ পেয়েছি, কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে ককটেল বিস্ফোরণের জন্য,” বলেন তিনি।
নতুন করে গ্রেপ্তার অভিযান
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ৪৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
#ঢাকা #লকডাউন #সহিংসতা #ডিএমপি #বিজিবি #মোহাম্মদজাহাঙ্গীরআলম #ইউএনবি
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইউএনবি 



















