০২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে আগুন, দুই সন্দেহভাজন আটক এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী এনসিপি নেতাকে পিটিয়ে আহত — হাতের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) পরিত্যক্ত দুটি গুদামে হঠাৎ আগুন কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ তিউনিসিয়ায় কারাগারে বর্বর নির্যাতন! বিরোধী নেতার পরিবারে চরম ক্ষোভ প্রো- ও অ্যান্টি-লকডাউন মিছিল গাজীপুরে পেট্রল ঢেলে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই বাসে আগুন ফরিদপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ

গাজায় অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে ক্ষোভ ” আমার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড “

দীর্ঘ চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল গাজায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগী, স্বজন ও চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্যসেবার প্রায় পুরো কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বহু রোগীর মৃত্যুর সমান।


যামেন আল-নাজ্জারের জীবন সংগ্রাম

১৬ বছর বয়সী যামেন আল-নাজ্জার একসময় স্কুল, বাড়ি ও স্বাভাবিক জীবনের কথা মনে করেন।
এখন তিনি পূর্ব জেরুজালেমের এক হাসপাতালের ছোট ৬ বর্গমিটার কক্ষের বিছানাতেই বেশিরভাগ সময় কাটান।
তিনি বলেন, “জীবন খুব কঠিন। সবসময় ব্যথা অনুভব করি… নিজেকে একা লাগে, আর বাড়িকে খুব মিস করি।”

গাজা সিটি থেকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার দুই দিন আগে চিকিৎসার জন্য তাকে ও তার মাকে পূর্ব জেরুজালেমে আনা হয়।
বিরল রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত যামেন দুই বছর ধরে তৃতীয় দেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতির অপেক্ষায় আছেন।
ডব্লিউএইচও চিকিৎসার অনুমোদন দিলেও এখনো কোনো দেশ তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।


হঠাৎ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ

মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকেরা যামেনের মাকে জানান, ইসরায়েল সব গাজাবাসী রোগীকে আগামী সপ্তাহে গাজায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনকি যারা চিকিৎসাধীন তারাও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, “দুই বছরের চেষ্টা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে। ধ্বংসস্তূপ গাজায় একটি অসুস্থ শিশুকে পাঠানো কীভাবে সম্ভব? এটা আমার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত ৮৯ জন রোগী ও তাদের সঙ্গীদের ফেরত পাঠানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অধিকাংশ রোগীই রাজি নন, কারণ গাজায় চিকিৎসা সুবিধা প্রায় নেই।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৯৪% হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস।

সবচেয়ে কম বয়সীরা সদ্যজাত শিশু, আর সবচেয়ে বয়স্ক রোগীর বয়স ৮৫।
তাদের অনেকেই যুদ্ধের আগেই জেরুজালেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন।


ডব্লিউএইচওর উদ্বেগ

ডব্লিউএইচও জানায়, ইসরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ COGAT তাদের রোগীদের গাজায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে বলেছে।
সিএনএন এ বিষয়ে COGAT-এর কাছে জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।


পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন যামেন

যামেনের বাবা, ভাই-বোনেরা গাজার দক্ষিণে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে বাস করছেন।
দুই বছর ধরে তিনি তাদের দেখেননি।

তার মা বলেন, “যামেনের শরীর এতটাই দুর্বল যে তাঁবুতে কয়েক ঘণ্টাও টিকবে না। তার রক্তচাপ ওঠানামা করে, শরীর ঠান্ডা থাকে, সবসময় রক্তক্ষরণ হয়।”


মানবাধিকার সংস্থার অবস্থান

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা PHRI বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নৈতিক, চিকিৎসাগত ও আইনগতভাবে ‘অগ্রহণযোগ্য’।
তাদের মতে, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দায়িত্ব হচ্ছে রোগীদের বর্তমান হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া বা প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

PHRI-এর কর্মকর্তা আসিল আবুরাস বলেন, “ইসরায়েল নিজেই গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এখন দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না।”

ইসরায়েলি সংসদের ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সদস্য আহমদ তিব্বি বলেন, “এভাবে রোগীদের ফেরত পাঠানো মানে সরাসরি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।”


অন্য রোগীদের পরিস্থিতি

গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা নাফেজ আল কাউহাজি বলেন, তার কিডনি বিকল হয়ে গেছে এবং সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “গাজায় ফেরত পাঠানো মানে দুদিনেই মৃত্যু।”

জাবালিয়ার নাঈল ইজ্জেদ্দিন ২৫ মাস হাসপাতালে ছিলেন।
তিনি পরিবারের কাছে ফিরতে চান, যদিও জানেন গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ।
তিনি বলেন, “আমি পরিবারকে খুব মিস করি… মরলেও তাদের কাছেই থাকতে চাই।”


আগেও ছিল ফেরত পাঠানোর চেষ্টা

২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম থেকে ২২ জন রোগীকে গাজায় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।
তাদের মধ্যে নবজাতক ও ক্যান্সার রোগীও ছিলেন।
PHRI-এর আবেদন ও সিএনএনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।


যামেনের শিল্পীসুলভ আশা

যামেন ছবি আঁকতে ভালোবাসে—প্রকৃতি, ল্যান্ডস্কেপ এবং ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির রঙিন চিত্র।
সে বলে, “ধূসর হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে রং ফিরিয়ে আনতে চাই।”

যামেন বলেন, “বাড়ি, ভাইবোনদের হাসি, স্কুল, সমুদ্র—সবকিছু খুব মিস করি।
শুধু বিশ্রাম চাই।
আশা করি গাজার প্রতিটি শিশু পৃথিবীর অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবন পাবে।
কেউ যেন আমার মতো ব্যথা বা ভয় না পায়।”


#গাজা_সংকট #ফিলিস্তিনি_রোগী # ইসরায়েল_  #গাজাস্বাস্থ্যসেবা_ধ্বংস  #মানবাধিকার

জনপ্রিয় সংবাদ

পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে আগুন, দুই সন্দেহভাজন আটক

গাজায় অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে ক্ষোভ ” আমার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড “

১১:৩৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল গাজায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগী, স্বজন ও চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্যসেবার প্রায় পুরো কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বহু রোগীর মৃত্যুর সমান।


যামেন আল-নাজ্জারের জীবন সংগ্রাম

১৬ বছর বয়সী যামেন আল-নাজ্জার একসময় স্কুল, বাড়ি ও স্বাভাবিক জীবনের কথা মনে করেন।
এখন তিনি পূর্ব জেরুজালেমের এক হাসপাতালের ছোট ৬ বর্গমিটার কক্ষের বিছানাতেই বেশিরভাগ সময় কাটান।
তিনি বলেন, “জীবন খুব কঠিন। সবসময় ব্যথা অনুভব করি… নিজেকে একা লাগে, আর বাড়িকে খুব মিস করি।”

গাজা সিটি থেকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার দুই দিন আগে চিকিৎসার জন্য তাকে ও তার মাকে পূর্ব জেরুজালেমে আনা হয়।
বিরল রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত যামেন দুই বছর ধরে তৃতীয় দেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতির অপেক্ষায় আছেন।
ডব্লিউএইচও চিকিৎসার অনুমোদন দিলেও এখনো কোনো দেশ তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।


হঠাৎ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ

মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকেরা যামেনের মাকে জানান, ইসরায়েল সব গাজাবাসী রোগীকে আগামী সপ্তাহে গাজায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনকি যারা চিকিৎসাধীন তারাও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, “দুই বছরের চেষ্টা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে। ধ্বংসস্তূপ গাজায় একটি অসুস্থ শিশুকে পাঠানো কীভাবে সম্ভব? এটা আমার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত ৮৯ জন রোগী ও তাদের সঙ্গীদের ফেরত পাঠানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অধিকাংশ রোগীই রাজি নন, কারণ গাজায় চিকিৎসা সুবিধা প্রায় নেই।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৯৪% হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস।

সবচেয়ে কম বয়সীরা সদ্যজাত শিশু, আর সবচেয়ে বয়স্ক রোগীর বয়স ৮৫।
তাদের অনেকেই যুদ্ধের আগেই জেরুজালেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন।


ডব্লিউএইচওর উদ্বেগ

ডব্লিউএইচও জানায়, ইসরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ COGAT তাদের রোগীদের গাজায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে বলেছে।
সিএনএন এ বিষয়ে COGAT-এর কাছে জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।


পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন যামেন

যামেনের বাবা, ভাই-বোনেরা গাজার দক্ষিণে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে বাস করছেন।
দুই বছর ধরে তিনি তাদের দেখেননি।

তার মা বলেন, “যামেনের শরীর এতটাই দুর্বল যে তাঁবুতে কয়েক ঘণ্টাও টিকবে না। তার রক্তচাপ ওঠানামা করে, শরীর ঠান্ডা থাকে, সবসময় রক্তক্ষরণ হয়।”


মানবাধিকার সংস্থার অবস্থান

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা PHRI বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নৈতিক, চিকিৎসাগত ও আইনগতভাবে ‘অগ্রহণযোগ্য’।
তাদের মতে, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দায়িত্ব হচ্ছে রোগীদের বর্তমান হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া বা প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

PHRI-এর কর্মকর্তা আসিল আবুরাস বলেন, “ইসরায়েল নিজেই গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এখন দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না।”

ইসরায়েলি সংসদের ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সদস্য আহমদ তিব্বি বলেন, “এভাবে রোগীদের ফেরত পাঠানো মানে সরাসরি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।”


অন্য রোগীদের পরিস্থিতি

গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা নাফেজ আল কাউহাজি বলেন, তার কিডনি বিকল হয়ে গেছে এবং সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “গাজায় ফেরত পাঠানো মানে দুদিনেই মৃত্যু।”

জাবালিয়ার নাঈল ইজ্জেদ্দিন ২৫ মাস হাসপাতালে ছিলেন।
তিনি পরিবারের কাছে ফিরতে চান, যদিও জানেন গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ।
তিনি বলেন, “আমি পরিবারকে খুব মিস করি… মরলেও তাদের কাছেই থাকতে চাই।”


আগেও ছিল ফেরত পাঠানোর চেষ্টা

২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম থেকে ২২ জন রোগীকে গাজায় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।
তাদের মধ্যে নবজাতক ও ক্যান্সার রোগীও ছিলেন।
PHRI-এর আবেদন ও সিএনএনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।


যামেনের শিল্পীসুলভ আশা

যামেন ছবি আঁকতে ভালোবাসে—প্রকৃতি, ল্যান্ডস্কেপ এবং ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির রঙিন চিত্র।
সে বলে, “ধূসর হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে রং ফিরিয়ে আনতে চাই।”

যামেন বলেন, “বাড়ি, ভাইবোনদের হাসি, স্কুল, সমুদ্র—সবকিছু খুব মিস করি।
শুধু বিশ্রাম চাই।
আশা করি গাজার প্রতিটি শিশু পৃথিবীর অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবন পাবে।
কেউ যেন আমার মতো ব্যথা বা ভয় না পায়।”


#গাজা_সংকট #ফিলিস্তিনি_রোগী # ইসরায়েল_  #গাজাস্বাস্থ্যসেবা_ধ্বংস  #মানবাধিকার