নতুন সংঘর্ষ ও নাজুক যুদ্ধবিরতির পরীক্ষা
ক্যাম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের সীমান্তবিরোধ আবারও সামনে এসেছে; উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যাংকক থেকে জানানো হয়েছে, একটি মার্কিন সমর্থিত শান্তি–প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ তারা আপাতত স্থগিত রেখেছে, কারণ সীমান্তের কাছে নতুনভাবে পাতা সন্দেহভাজন স্থলমাইনে বিস্ফোরণে চার থাই সেনা আহত হয়েছেন। ফনম পেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, নতুন কোনো মাইন পাতা হয়নি; বরং পুরোনো সংঘাতের ফেলে যাওয়া বিস্ফোরকই এখনো ঝুঁকি তৈরি করছে এবং থাইল্যান্ড ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। ক’মাস আগের পাঁচ দিনের সংঘর্ষে অন্তত কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছিল; নতুন এই উত্তেজনা সেই ক্ষতকে আবারও সতেজ করে তুলেছে সীমান্তের গ্রামগুলোতে।
মধ্যস্থতাকারী কূটনীতিকদের মতে, বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু সীমান্তঘেঁষা কিছু বনভূমি ও ফসলের জমি, যেখানে পুরোনো মাইনফিল্ডের ভেতর দিয়েই নতুন টহলপথ ধরা হয়েছে। থাই পক্ষের যুক্তি, যুদ্ধবিরতির পরও বিস্ফোরণ মানে কেউ না কেউ মাঠের বাস্তবতা বদলাতে চাইছে; ক্যাম্বোডিয়ান সেনাধ্যক্ষদের দাবি, এত বছরের লড়াইয়ের পর অবিস্ফোরিত মাইন চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, তাই একে নতুন উসকানি বলা যায় না। মার্কিন–মধ্যস্থতায় হওয়া মূল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া, গোলন্দাজ হামলা বন্ধ রাখা এবং ধীরে ধীরে সীমারেখা–জরিপের দিকে এগোনোর কথা ছিল। বাস্তবে সেই অগ্রগতি হয়েছে খুব ধীরে; সর্বশেষ মাইন বিস্ফোরণ এখন দুই দেশের কঠোর লাইন নেওয়া গোষ্ঠীগুলোকেই আরও জোরালো কণ্ঠ দিয়েছে।

রাজনীতি, কূটনীতি ও সীমান্তবাসীর অনিশ্চয়তা
বিশ্লেষকদের ধারণা, সীমিত পরিসরের এই সংঘর্ষও রাজনৈতিকভাবে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ দুই দেশই ভেতরে নানা চাপের মুখে আছে এবং আঞ্চলিক শক্তির টানাপোড়েনও বাড়ছে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দীর্ঘ মার্কিন সরকার–অচলাবস্থার প্রভাব সামলাতে থাকা থাইল্যান্ডে বিদেশি মাটির কাছাকাছি সেনা হতাহতের খবর সহজেই জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দেয়। ক্যাম্বোডিয়ার শাসকগোষ্ঠীও বহুদিন ধরে সীমান্তরক্ষাকে সার্বভৌমত্বের পরীক্ষা হিসেবে তুলে ধরেছে; তাই নরম অবস্থান নেওয়া তাদের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি। ফলে একটি বিস্ফোরণই দ্রুত মর্যাদার লড়াইতে পরিণত হয় এবং শান্ত পথ বেছে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
ওয়াশিংটন উভয় পক্ষকেই যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে যৌথভাবে মাইন অপসারণ ও সীমারেখা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তিগুলোও পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে, কারণ এ অঞ্চলের সড়ক ও রেলপথ বহুপ্রত্যাশিত বাণিজ্য করিডরের অংশ হতে পারে। আলোচনায় অগ্রগতি না হলে সীমান্ত–সংলগ্ন গ্রামগুলোর কৃষিকাজ, স্কুলশিক্ষা ও ছোটখাটো বাণিজ্য আরও এক দফা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। মানবিক সংস্থাগুলোর হিসাবে, গ্রীষ্মকালের সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত অনেক পরিবারই এখনো পুরোপুরি ঘর পুনর্গঠন করতে পারেনি; নতুন সহিংসতা মানে তাদের আস্থার জায়গা আরও ভেঙে পড়া।

এই মুহূর্তে কামানের গর্জন নেই, আছে কড়া ভাষার লড়াই। ব্যাংকক ও ফনম পেন উভয়ই একে অপরের কাছে তদন্তের ভার ঠেলে দিয়েছে এবং নিজেদের সেনা–অভিযানকে আত্মরক্ষামূলক বলেই উপস্থাপন করছে। অতীতে সীমান্তের মন্দির ও পাহাড়ঘেরা এলাকায় এমন উত্তেজনা দেখা দিলেও বহুবার আড়ালের আলোচনা ও আসিয়ান কূটনীতিতে তা গড়িয়ে গেছে। এবারও সেই পথ খোলা, তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কত দ্রুত গণআবেগের বাইরে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তা–ই নির্ধারণ করবে সীমান্তবাসীর আগামী কয়েক মাস কেমন যাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















