সস্তা জ্বালানি অগ্রাধিকার, নীতিতে বড় মোড়
অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল লিবারেল পার্টি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট–জিরো নিঃসরণে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এসেছে এবং ক্ষমতায় ফিরতে পারলে “সস্তা জ্বালানি”কে মূল অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ আলোচনার পর পার্টি নেতা সুসান লেই জানিয়েছেন, উন্নত দেশের মানদণ্ড হয়ে ওঠা এই লক্ষ্য আর তারা সামনে রেখে নির্বাচন করবে না। আগে থেকেই নেট–জিরো প্রতিশ্রুতি বাতিল করা গ্রামীণভিত্তিক মিত্র দল ন্যাশনাল পার্টির অবস্থানের সঙ্গে এবার লিবারেলদের নতুন অবস্থান মিলেছে। ফলে কেন্দ্র–বাম লেবার সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের জলবায়ু নীতির দূরত্ব আরও বেড়েছে; লেবার ইতোমধ্যে আইন করে নির্দিষ্ট নিঃসরণ কাটছাঁটের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং তা শিল্প রূপান্তরের বড় পরিকল্পনার সঙ্গে বেঁধে রাখছে।
নতুন প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী, লিবারেল পার্টি বলছে তারা এখনও নিঃসরণ কমাতে চায়, তবে “প্রযুক্তি যতটুকু অনুমতি দেয়” সেই গতিতেই এগোবে; নির্দিষ্ট কোনো বছর ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগেভাগে বন্ধ হওয়ার প্রবণতা ঠেকানো, দীর্ঘদিনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিষেধাজ্ঞা তোলা এবং গ্যাস সরবরাহ ও অবকাঠামোয় নতুন বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তারা লেবার সরকারের একাধিক নীতিমালাও বাতিল করতে চায়, যার মধ্যে বড় শিল্পকারখানার নিঃসরণ সীমা বেঁধে দেওয়া এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসায়িক মহল ও পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলছেন, গত দশকে একের পর এক নীতির মোড় ঘুরতে থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যেই দ্বিধায়; আবার দিক পাল্টানো হলে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।

ভিতরের রাজনীতি, বিনিয়োগ সংকেত ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
জলবায়ু কূটনীতির দিক থেকেও সময়টা অস্ট্রেলিয়ার জন্য স্পর্শকাতর। দেশটি একদিকে নিজেকে কম নিঃসরণ–নির্ভর জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে তুলে ধরতে চায়, অন্যদিকে এখনও কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় রফতানিকারক। নেট–জিরো লক্ষ্য বাতিল করায় সরাসরি প্যারিস চুক্তি লঙ্ঘিত না হলেও জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় ও মিত্র দেশগুলোর চোখে ক্যানবেরার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হতে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থবাজারে এখন অনেক বিনিয়োগকারীই জলবায়ু প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে ঝুঁকি হিসাব করেন; অস্ট্রেলিয়াকে যদি পিছু হটার দেশ হিসেবে দেখা হয়, তাহলে ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়া বা মূলধন অন্যত্র সরে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
দেশের ভেতরে লিবারেল নেতৃত্বের হিসাব, পরের জাতীয় নির্বাচনে জলবায়ুর চেয়ে বিদ্যুৎ বিল ও জীবনযাত্রার খরচই ভোটারদের প্রধান চিন্তা হবে। অনেক পরিবারই বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ বিলের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, আর কয়লা–নির্ভর খনি অঞ্চলে হঠাৎ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বিরক্তি বাড়ছে। সমালোচকেরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, রূপান্তর যত দেরিতে শুরু হবে, ভবিষ্যতে ঝুঁকি ও খরচ তত বেশি হবে—বিশেষ করে যখন জলবায়ু–সংশ্লিষ্ট দাবানল, বন্যা ও তাপপ্রবাহের প্রভাব অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে ঘন ঘন অনুভব করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও বহু কোম্পানি নিজ নিজ নেট–জিরো পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে, ফলে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে মাঠের বাস্তবতা ক্রমেই ভিন্ন রঙ নিচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















