০৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ড্রোন নেটওয়ার্কে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে লাভবান হচ্ছে আওয়ামী লীগ – নাসিরউদ্দিন মালয়েশিয়ায় ৪০০–এর বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের বেতন বঞ্চনা ও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর অভিযোগ ‘ঢাকা লকডাউনে’র দিনে সকাল থেকে যে পরিস্থিতি দেখা গেল ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা ২: টিজার ফিরল — পুরনো রাগ, নতুন অবস্থা হুট করে যাওয়ার সংস্কার — শেষ মুহূর্তের ভ্রমণে বাজার বদল এবারও থেমে গেল আসন্ন সোপ — অস্ট্রেলিয়ার COP বার্তা অনিশ্চিতে জুলাই সনদ থেকে নিজেই সরে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা—বললেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে মহাকাশে উড়ে গেল মারিও: ‘সুপার মারিও গ্যালাক্সি’ ছবিতে রোজালিনার ভূমিকায় ব্রি লারসন

৪৩ দিনের রেকর্ড শাটডাউন শেষ করতে এগোলো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস

সরকারি অচলাবস্থা কাটাতে প্রতিনিধি পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভোট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ৪৩ দিনের রেকর্ড দীর্ঘ সরকারী শাটডাউন শেষ করতে একটি অর্থায়ন বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যা সপ্তাহব্যাপী অচলাবস্থার পর রাজনৈতিক সংকট নিরসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা অতিক্রম করলে পরিষদে পাস হওয়া নিশ্চিত হয়, যদিও ভোটগ্রহণ তখনও চলমান ছিল। এর মাধ্যমে শত শত হাজার সরকারি কর্মী যাদের বেতন আটকে আছে এবং বহু দপ্তর আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, তারা ধীরে ধীরে কাজে ফিরতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৫৩ দিনের অবকাশ শেষে আলোচনায় ফিরে আসা সংসদ সদস্যদের প্রতি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা কঠোর সমালোচনা করে আসছিলেন।

বিলটি অস্থায়ী হলেও প্রশাসনের অধিকাংশ দপ্তরে পূর্ণ বা প্রায় পূর্ণ বাজেট বরাদ্দ পুনর্বহাল করার পথ খুলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনো সব শর্ত প্রকাশ না হলেও, দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে একাধিক রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্য সমর্থন দেওয়ায় বিরল ধরনের সমঝোতার আবহ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন নীতি, বিদেশি সহায়তা ও ঘাটতি কমানো নিয়ে লড়াইয়ের কারণে কংগ্রেস প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এ রেকর্ড শাটডাউনের কারণে অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে; নতুন চুক্তি স্বাক্ষর পিছিয়েছে, অবকাঠামো প্রকল্প থেমে আছে, আর বিভিন্ন লাইসেন্স ও অনুমোদনের আবেদনের পাহাড় জমেছে।

অন্যদিকে, আর্থিক বাজারে অব্যাহত অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় এই সংকট দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে বিনিয়োগকারী ও ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো। রাষ্ট্রিয় ব্যয় আটকে যাওয়ায় শিক্ষা, দুর্যোগ সহায়তা, নিম্নআয়ের সহায়তামূলক কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য খাতে ফেডারেল অনুদান পেতে দেরি হওয়ায় অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের তহবিল থেকে টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে বেতনহীন অবস্থায় কাজ করা নিরাপত্তা ও এয়ার ট্রাফিক কর্মীদের মধ্যে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বেড়েছে, কিছু জায়গায় শিফট ঘাটতির কারণে ফ্লাইট বিলম্বের আশঙ্কা দেখা দেয়।

রাজনৈতিকভাবে এই ভোট দলীয় নেতৃত্বের জন্যও এক ধরনের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কঠোর অবস্থান নেওয়া দলীয় অংশকে শান্ত রাখা এবং একই সঙ্গে এমন এক সমঝোতা বিল এগিয়ে নেওয়া, যা সিনেট ও হোয়াইট হাউস উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য—দুই লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করতেই নেতৃত্বকে তৎপর হতে হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাস হওয়ার পর এখন নজর সিনেটের দিকে, যেখানে নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন দীর্ঘ অজনপ্রিয় শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঝুঁকি নিতে তারা আগ্রহী নন। সিনেটে বিল চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকারী কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে।

দীর্ঘ শাটডাউনের অভিজ্ঞতা ফেডারেল চাকরি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থায় গভীর ক্ষত তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। বারবার বাজেট সংকটে পড়ে একই ধরনের বন্ধের মুখে পড়ায় অনেক তরুণ কর্মকর্তা ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি বেছে নেওয়া নিয়ে ভাবছেন। নিম্নআয়ের সরকারি কর্মী ও কন্ট্রাক্ট স্টাফদের জন্য খাদ্য সহায়তা ও জরুরি অনুদান দিতে শহর-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে। অর্থনীতি পুনরায় চালু হলেও, কর্মসূচি বিলম্ব, অনিশ্চয়তা এবং ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা যে স্বল্পমেয়াদে কাটবে না—এ নিয়ে প্রায় সবাই একমত।

আগামী নির্বাচনের আগে এই শাটডাউন রাজনৈতিক প্রচারে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উভয় দলই একে অপরকে দোষারোপ করবে—কে প্রথম সরকার বন্ধ করল, আর কে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করল—সে নিয়ে প্রচুর প্রচারণা চালাবে। তবে একই সঙ্গে, বাজেট সময়মতো পাস না হলেও অন্তত আগের বরাদ্দ অনুযায়ী সরকার চালু রাখার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর দাবিও জোরালো হচ্ছে। আপাতত সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে, কত দ্রুত বিভিন্ন দপ্তর আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে, বকেয়া কাজের জট কমাতে পারে এবং বিদেশি অংশীদারদের দেখাতে পারে যে ওয়াশিংটন এখনও অন্তত মৌলিক বাজেট প্রক্রিয়া চালাতে সক্ষম।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ড্রোন নেটওয়ার্কে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

৪৩ দিনের রেকর্ড শাটডাউন শেষ করতে এগোলো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস

০৩:১২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

সরকারি অচলাবস্থা কাটাতে প্রতিনিধি পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভোট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ৪৩ দিনের রেকর্ড দীর্ঘ সরকারী শাটডাউন শেষ করতে একটি অর্থায়ন বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যা সপ্তাহব্যাপী অচলাবস্থার পর রাজনৈতিক সংকট নিরসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা অতিক্রম করলে পরিষদে পাস হওয়া নিশ্চিত হয়, যদিও ভোটগ্রহণ তখনও চলমান ছিল। এর মাধ্যমে শত শত হাজার সরকারি কর্মী যাদের বেতন আটকে আছে এবং বহু দপ্তর আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, তারা ধীরে ধীরে কাজে ফিরতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৫৩ দিনের অবকাশ শেষে আলোচনায় ফিরে আসা সংসদ সদস্যদের প্রতি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা কঠোর সমালোচনা করে আসছিলেন।

বিলটি অস্থায়ী হলেও প্রশাসনের অধিকাংশ দপ্তরে পূর্ণ বা প্রায় পূর্ণ বাজেট বরাদ্দ পুনর্বহাল করার পথ খুলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনো সব শর্ত প্রকাশ না হলেও, দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে একাধিক রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্য সমর্থন দেওয়ায় বিরল ধরনের সমঝোতার আবহ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন নীতি, বিদেশি সহায়তা ও ঘাটতি কমানো নিয়ে লড়াইয়ের কারণে কংগ্রেস প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এ রেকর্ড শাটডাউনের কারণে অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে; নতুন চুক্তি স্বাক্ষর পিছিয়েছে, অবকাঠামো প্রকল্প থেমে আছে, আর বিভিন্ন লাইসেন্স ও অনুমোদনের আবেদনের পাহাড় জমেছে।

অন্যদিকে, আর্থিক বাজারে অব্যাহত অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় এই সংকট দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে বিনিয়োগকারী ও ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো। রাষ্ট্রিয় ব্যয় আটকে যাওয়ায় শিক্ষা, দুর্যোগ সহায়তা, নিম্নআয়ের সহায়তামূলক কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য খাতে ফেডারেল অনুদান পেতে দেরি হওয়ায় অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের তহবিল থেকে টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে বেতনহীন অবস্থায় কাজ করা নিরাপত্তা ও এয়ার ট্রাফিক কর্মীদের মধ্যে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বেড়েছে, কিছু জায়গায় শিফট ঘাটতির কারণে ফ্লাইট বিলম্বের আশঙ্কা দেখা দেয়।

রাজনৈতিকভাবে এই ভোট দলীয় নেতৃত্বের জন্যও এক ধরনের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কঠোর অবস্থান নেওয়া দলীয় অংশকে শান্ত রাখা এবং একই সঙ্গে এমন এক সমঝোতা বিল এগিয়ে নেওয়া, যা সিনেট ও হোয়াইট হাউস উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য—দুই লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করতেই নেতৃত্বকে তৎপর হতে হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাস হওয়ার পর এখন নজর সিনেটের দিকে, যেখানে নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন দীর্ঘ অজনপ্রিয় শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঝুঁকি নিতে তারা আগ্রহী নন। সিনেটে বিল চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকারী কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে।

দীর্ঘ শাটডাউনের অভিজ্ঞতা ফেডারেল চাকরি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থায় গভীর ক্ষত তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। বারবার বাজেট সংকটে পড়ে একই ধরনের বন্ধের মুখে পড়ায় অনেক তরুণ কর্মকর্তা ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি বেছে নেওয়া নিয়ে ভাবছেন। নিম্নআয়ের সরকারি কর্মী ও কন্ট্রাক্ট স্টাফদের জন্য খাদ্য সহায়তা ও জরুরি অনুদান দিতে শহর-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে। অর্থনীতি পুনরায় চালু হলেও, কর্মসূচি বিলম্ব, অনিশ্চয়তা এবং ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা যে স্বল্পমেয়াদে কাটবে না—এ নিয়ে প্রায় সবাই একমত।

আগামী নির্বাচনের আগে এই শাটডাউন রাজনৈতিক প্রচারে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উভয় দলই একে অপরকে দোষারোপ করবে—কে প্রথম সরকার বন্ধ করল, আর কে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করল—সে নিয়ে প্রচুর প্রচারণা চালাবে। তবে একই সঙ্গে, বাজেট সময়মতো পাস না হলেও অন্তত আগের বরাদ্দ অনুযায়ী সরকার চালু রাখার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর দাবিও জোরালো হচ্ছে। আপাতত সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে, কত দ্রুত বিভিন্ন দপ্তর আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে, বকেয়া কাজের জট কমাতে পারে এবং বিদেশি অংশীদারদের দেখাতে পারে যে ওয়াশিংটন এখনও অন্তত মৌলিক বাজেট প্রক্রিয়া চালাতে সক্ষম।