ঠান্ডা যুদ্ধের পটভূমিতে নতুন অভিযানে বয়েড
উইলিয়াম বয়েড আবারও ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত গুপ্তচর-রোমাঞ্চে ফিরে এসেছেন। তাঁর নতুন উপন্যাস ‘দ্য প্রেডিকামেন্ট’ হলো গ্যাব্রিয়েল ড্যাক্স সিরিজের দ্বিতীয় খণ্ড, যেখানে এক ভ্রমণলেখক অনিচ্ছাসত্ত্বেও জড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দা দুনিয়ার অদ্ভুত সব খেলায়।
উইলিয়াম বয়েডের লেখার ধরন
বয়েডের দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে দুটি ধারা বিশেষভাবে জনপ্রিয়—
১) হাস্যরসাত্মক উপন্যাস, যেখানে দুর্ভাগা নায়করা বিদেশের জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে।
২) ‘হোল-লাইফ’ উপন্যাস, যেখানে চরিত্রদের শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তুলে ধরা হয়।
তিনি গুপ্তচর-ভিত্তিক উপন্যাসও লিখেছেন—‘রেস্টলেস’, ‘সোলো’ তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর প্রকাশিত হয় ‘গ্যাব্রিয়েলস মুন’, যেখানে প্রথমবার দেখা যায় ভ্রমণলেখক গ্যাব্রিয়েল ড্যাক্সকে— ঠান্ডা যুদ্ধের সময় গোপন মিশনে পাঠানো হয় তাকে।
গ্যাব্রিয়েল ড্যাক্স: অনিচ্ছুক কিন্তু দক্ষ গুপ্তচর
‘দ্য প্রেডিকামেন্ট’ শুরু হয়েছে ১৯৬৩ সালে। লন্ডনের কোলাহল ছেড়ে ড্যাক্স চলে এসেছে ইস্ট সাসেক্সের এক শান্ত গ্রামে। সেখানে সে লিখছে পৃথিবীর নদী নিয়ে একটি ভ্রমণবই।
কিন্তু শান্ত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

অপ্রত্যাশিত জটিলতা
গ্যাব্রিয়েলের সমস্যার সূত্রপাত তিনটি দিক থেকে—
১. এক কেজিবি এজেন্ট তার কাছে আসে। সে সন্দেহ করে গ্যাব্রিয়েল দ্বিমুখী গুপ্তচর। ফেইথ গ্রিন সম্পর্কে তথ্যও দাবি করে— তিনি এমআই-৬ কর্মকর্তা এবং গ্যাব্রিয়েলের সাবেক প্রেমিকা।
২. তার প্রকাশক জানায়— অপর এক লেখক তাকে নকলের অভিযোগে আদালতে টানছে।
৩. হঠাৎ ফেইথ নিজেই হাজির হয়। অতীতের অনুভূতি জেগে ওঠে এবং জানায় নতুন একটি মিশনের কথা— বিদেশে যেতে হবে, লেখালেখিকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে।
শেষ পর্যন্ত গ্যাব্রিয়েল রাজি হয়— যেন সুতোয় বাঁধা এক পুতুলের মতো।
মিশন: গুয়াতেমালা
নতুন দায়িত্বে তার লক্ষ্য পাদ্রে তিয়াগো— সাবেক পুরোহিত, এখন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনি আমেরিকান প্রভাব কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির জমি জাতীয়করণের হুমকি দিয়েছেন।
সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীরা গ্যাব্রিয়েলের মাথায় হুড পরিয়ে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে, যেখানে তিয়াগোর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়— নির্বাচন বাতিল, জরুরি অবস্থা জারি, আর গ্যাব্রিয়েলের কোনোমতে বেঁচে পালানো।
কিন্তু এখানেই বিপদ শেষ হয় না— নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর তার ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়।
পরবর্তী গন্তব্য: পশ্চিম বার্লিন
ফেইথ এবার পাঠায় তাকে পশ্চিম বার্লিনে। লক্ষ্য— ডিন ফারলান, এক মার্কিন ব্যবসায়ী, যিনি পাইকারি কফি ব্যবসার আড়ালে গোপন কার্যকলাপে যুক্ত বলে সন্দেহ রয়েছে। গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল গুয়াতেমালাতেই।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে— প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির ওপর দুটি হত্যাচেষ্টার সময় ডিন লস অ্যাঞ্জেলেস ও মিয়ামিতে ছিলেন। এখন কেনেডি বার্লিন সফরে। গ্যাব্রিয়েল সূত্র খুঁজতে থাকে, কিন্তু তার জীবনে নেমে আসে ‘গ্রেড-২’ দুর্ভাগ্য, যা তাকে মৃত্যু-ঝুঁকিতে ফেলে।

গল্পের গতি, উত্তেজনা ও রহস্য
‘গ্যাব্রিয়েলস মুন’ দ্রুতগতি নিয়ে শুরু হলেও ‘দ্য প্রেডিকামেন্ট’ তুলনামূলক ধীর। কিন্তু প্রথম ভাগ শেষে গল্প হয়ে ওঠে জটিল, বিপজ্জনক ও উত্তেজনাপূর্ণ।
গ্যাব্রিয়েল বুঝতে থাকে— গুপ্তচরদের চিরচেনা রোগ ‘প্যারানয়া’ তাকে গ্রাস করছে। পাঠকও ঢুকে পড়ে এক সন্দেহ-খেলায়—
কে সত্যি? কে ছদ্মবেশে?
সে কি মূল্যবান সম্পদ, নাকি সহজে ফেলে দেওয়ার মতো ঘুঁটি?
লেখক গড়েছেন নিজস্ব শব্দজগৎ—
গোপন ঘর ‘কুপ’, গুপ্তচরকলা ‘আর্টিফাইস’, ফ্রিল্যান্স এজেন্ট ‘ইউনিট’, আর অদেখা গুপ্তচর ‘টার্মাইট’।
মানুষ গ্যাব্রিয়েল: ভেতরের দ্বন্দ্ব
বয়েড গ্যাব্রিয়েলকে শুধু নিস্তরঙ্গ গুপ্তচর হিসেবে আঁকেননি; বরং তার অতীত, মানসিক টানাপোড়েন, প্রেম ও আত্মদ্বন্দ্বকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
মনোবিশেষজ্ঞ ক্যাটারিনা হাস তাকে বোঝান— আসল সত্তা ও মিথ্যা সত্তার পার্থক্য। গ্যাব্রিয়েল অনুভব করে— ভ্রমণলেখকের স্বাভাবিক জীবনের বদলে ছায়াময় গুপ্তজীবন বেছে নেওয়া তার গভীর আক্ষেপের কারণ।
আর আছে ফেইথ—
কখনো উষ্ণ, কখনো ঠান্ডা;
কখনো বাস্তব, কখনো অধরা।
‘দ্য প্রেডিকামেন্ট’ জুড়ে ছড়িয়ে আছে মোচড়, আকস্মিক বাঁক, বিদ্যুতের মতো তীক্ষ্ণ মুহূর্ত। ফেইথ বলে— “এই পেশায় কেউ নিজে থেকে বিদায় নিতে পারে না।”
মনে হয়— খুব শিগগিরই গ্যাব্রিয়েল ড্যাক্সের আরেকটি মিশন শুরু হতে যাচ্ছে।
#গল্পসমালোচনা |# বইপাঠ | #অনুবাদ | #সাহিত্য | #গুপ্তচর_উপন্যাস
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















