১০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে:রাজধানীর জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ— আগুনে মোটরসাইকেল পুড়ে গেল গাজীপুরে চলন্ত বাসে হঠাৎ আগুন: অল্পের জন্য রক্ষা পেল যাত্রীরা গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অফিসকেন্দ্রিক জীবনযাপন ও স্ট্রেস একসঙ্গে বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিসের বিস্তার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে আহত ২০ জন, বাড়িঘর ভাঙচুর ৩৫ বলে শতক হাঁকালেন হাবিবুর, বাংলাদেশের দ্রুততম টি–২০ সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৯২ জন চীনের বিজনেস স্কুলে বৈশ্বিক ট্যালেন্ট ধরে রাখার নতুন উদ্যোগ বাগেরহাট কারাগারে ভারতীয় জেলের মৃত্যু

সব থেকে বেশি অবহেলিত নারী ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে নানা শারীরিক রোগের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও চিকিৎসায় এ দুই দিক একসঙ্গে বিবেচনা করার প্রশিক্ষণ এখনো অধিকাংশ চিকিৎসকের নেই। শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা এই বাস্তবতা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন।


শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয়ের ঘাটতি

সেমিনারে বলা হয়, অনেক রোগীর মূল সমস্যার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য জড়িত থাকে, কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই পর্যাপ্ত মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দিতে পারেন না। এতে বড় ধরনের চিকিৎসা-ফাঁক তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির কনভেনর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাফিউদ্দিন জানান, অনেক তরুণ রোগী আতঙ্কজনিত ব্যথা নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসেন, যা আসলে কার্ডিয়াক নয়।
তিনি বলেন, “আমরা যতই বোঝাই যে এটি মানসিক কারণ, রোগীরা বারবার ফিরে আসেন। কার্ডিওলজিস্টরা কখনো মনোরোগবিদ্যা শেখেনি—প্যানিক ডিজঅর্ডারের মতো বিষয়ে দক্ষতা নেই।”


নিউরোলজি–সাইকিয়াট্রির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আলিম নদীম বলেন, নিউরোলজি ও সাইকিয়াট্রি পরস্পর গভীরভাবে যুক্ত, তবে একে অপরের বিকল্প নয়।
তার মতে, অনেক রোগীর নিউরোলজিক্যাল ও মানসিক—দু’ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, কিন্তু সাধারণত একটিই দেওয়া হয়। ফলে তারা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন না।


শিশু রোগীর ক্ষেত্রে সংকট আরও গভীর

বাংলাদেশ চাইল্ড নিউরোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ মোনির হোসেন জানান, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ১৮ বছরের নিচে। অনেক শিশুই নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় ভোগে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মাত্র ৭৫ জন শিশু নিউরোলজিস্ট আছে। সাইকিয়াট্রিস্টদের সঙ্গে আমাদের সমন্বয়ও দুর্বল। এই সমন্বয় জোরদার হলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বদলে যেতে পারে।”


মেডিকেল শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্য অনুপস্থিত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ টিচার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদ সামি-আল-হাসান বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও কাউন্সেলিং সুবিধা কমেছে।
তিনি জানান, “এখনো এমবিবিএস পাঠ্যক্রমে মনোবিজ্ঞান নেই। প্রতিবছর নতুন ডাক্তার বের হচ্ছে, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানও তাদের নেই।”


নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: অবহেলার আরেক চিত্র

বিএপি কনভেনর প্রফেসর ডা. মো. আবদুল মত্তালেব বলেন, অনেক নারী মানসিক সমস্যা নিয়ে এখনো গ্রাম্য কবিরাজ বা ওঝার কাছে যান।
তার মতে, “মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা গ্রামীণ অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছেন না—এটি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যর্থতা।”

অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনিাকোলজিস্টস ফোরামের সদস্য সচিব ডা. মুসারাত সুলতানা বলেন, কিশোরী মেয়েরা প্রায় কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পায় না।
তিনি আরো বলেন, “গর্ভধারণ মানসিক স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মেনোপজের সময়ও নারীরা গাইনি চিকিৎসকের কাছে যান, অথচ এসব ক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের সহায়তা প্রয়োজন। সমন্বিত চিকিৎসা মডেল জরুরি।”


যৌনস্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য

বাংলাদেশ ডার্মাটোলজিক্যাল সোসাইটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মুনীর রশীদ বলেন, যৌন সমস্যার অভিযোগ বাড়ছে, এবং অনেকেই প্রথমে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান।
তিনি জানান, “অনেক যৌন সমস্যা আসলে মানসিক—দাম্পত্য অখুশি, সন্তান নিতে অনীহা, মানসিক অসন্তুষ্টি। কেবল কাউন্সেলিং করলেই অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব।”


‘একটি চিকিৎসা সবার জন্য নয়’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন মনোরোগবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, একধরনের চিকিৎসা সবার জন্য প্রয়োগ করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, “রোগীর সমস্যা শারীরিক নাকি মানসিক—এটি নির্ণয় করা জরুরি। আমাদের প্রচলিত সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে যেতে হবে।”


আগামীর পরিকল্পনা

বিএপি জানিয়েছে, খুব শিগগিরই সব চিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আন্তঃবিভাগীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হবে।


বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা মানসিক_স্বাস্থ্য চিকিৎসা_ব্যবস্থা সাইকিয়াট্রি মেডিকেল_শিক্ষা

জনপ্রিয় সংবাদ

পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে:রাজধানীর জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ— আগুনে মোটরসাইকেল পুড়ে গেল

সব থেকে বেশি অবহেলিত নারী ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য

০৭:৫১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে নানা শারীরিক রোগের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও চিকিৎসায় এ দুই দিক একসঙ্গে বিবেচনা করার প্রশিক্ষণ এখনো অধিকাংশ চিকিৎসকের নেই। শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা এই বাস্তবতা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন।


শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয়ের ঘাটতি

সেমিনারে বলা হয়, অনেক রোগীর মূল সমস্যার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য জড়িত থাকে, কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই পর্যাপ্ত মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দিতে পারেন না। এতে বড় ধরনের চিকিৎসা-ফাঁক তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির কনভেনর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাফিউদ্দিন জানান, অনেক তরুণ রোগী আতঙ্কজনিত ব্যথা নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসেন, যা আসলে কার্ডিয়াক নয়।
তিনি বলেন, “আমরা যতই বোঝাই যে এটি মানসিক কারণ, রোগীরা বারবার ফিরে আসেন। কার্ডিওলজিস্টরা কখনো মনোরোগবিদ্যা শেখেনি—প্যানিক ডিজঅর্ডারের মতো বিষয়ে দক্ষতা নেই।”


নিউরোলজি–সাইকিয়াট্রির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আলিম নদীম বলেন, নিউরোলজি ও সাইকিয়াট্রি পরস্পর গভীরভাবে যুক্ত, তবে একে অপরের বিকল্প নয়।
তার মতে, অনেক রোগীর নিউরোলজিক্যাল ও মানসিক—দু’ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, কিন্তু সাধারণত একটিই দেওয়া হয়। ফলে তারা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন না।


শিশু রোগীর ক্ষেত্রে সংকট আরও গভীর

বাংলাদেশ চাইল্ড নিউরোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ মোনির হোসেন জানান, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ১৮ বছরের নিচে। অনেক শিশুই নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় ভোগে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মাত্র ৭৫ জন শিশু নিউরোলজিস্ট আছে। সাইকিয়াট্রিস্টদের সঙ্গে আমাদের সমন্বয়ও দুর্বল। এই সমন্বয় জোরদার হলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বদলে যেতে পারে।”


মেডিকেল শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্য অনুপস্থিত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ টিচার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদ সামি-আল-হাসান বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও কাউন্সেলিং সুবিধা কমেছে।
তিনি জানান, “এখনো এমবিবিএস পাঠ্যক্রমে মনোবিজ্ঞান নেই। প্রতিবছর নতুন ডাক্তার বের হচ্ছে, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানও তাদের নেই।”


নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: অবহেলার আরেক চিত্র

বিএপি কনভেনর প্রফেসর ডা. মো. আবদুল মত্তালেব বলেন, অনেক নারী মানসিক সমস্যা নিয়ে এখনো গ্রাম্য কবিরাজ বা ওঝার কাছে যান।
তার মতে, “মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা গ্রামীণ অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছেন না—এটি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যর্থতা।”

অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনিাকোলজিস্টস ফোরামের সদস্য সচিব ডা. মুসারাত সুলতানা বলেন, কিশোরী মেয়েরা প্রায় কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পায় না।
তিনি আরো বলেন, “গর্ভধারণ মানসিক স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মেনোপজের সময়ও নারীরা গাইনি চিকিৎসকের কাছে যান, অথচ এসব ক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের সহায়তা প্রয়োজন। সমন্বিত চিকিৎসা মডেল জরুরি।”


যৌনস্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য

বাংলাদেশ ডার্মাটোলজিক্যাল সোসাইটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মুনীর রশীদ বলেন, যৌন সমস্যার অভিযোগ বাড়ছে, এবং অনেকেই প্রথমে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান।
তিনি জানান, “অনেক যৌন সমস্যা আসলে মানসিক—দাম্পত্য অখুশি, সন্তান নিতে অনীহা, মানসিক অসন্তুষ্টি। কেবল কাউন্সেলিং করলেই অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব।”


‘একটি চিকিৎসা সবার জন্য নয়’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন মনোরোগবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, একধরনের চিকিৎসা সবার জন্য প্রয়োগ করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, “রোগীর সমস্যা শারীরিক নাকি মানসিক—এটি নির্ণয় করা জরুরি। আমাদের প্রচলিত সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে যেতে হবে।”


আগামীর পরিকল্পনা

বিএপি জানিয়েছে, খুব শিগগিরই সব চিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আন্তঃবিভাগীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হবে।


বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা মানসিক_স্বাস্থ্য চিকিৎসা_ব্যবস্থা সাইকিয়াট্রি মেডিকেল_শিক্ষা