ব্রাজিলে কপ৩০ ও চীনের দৃশ্যমানতা
ব্রাজিলের আমাজন শহর বেলেমে চলমান জাতিসংঘের কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে এবার এক অস্বাভাবিক দৃশ্য: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল নেই, আর সেই শূন্যতায় সবচেয়ে চোখে পড়ছে চীনের উপস্থিতি। প্রবেশদ্বারের পাশেই বিশাল আকারের চীনা প্যাভিলিয়ন, যেখানে বড় বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি ব্যাটারি, সোলার ও বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। বেইজিং জানাচ্ছে, নবায়নযোগ্য শিল্পে তাদের বিনিয়োগ ও উৎপাদন ক্ষমতা এখন বৈশ্বিক নির্গমন কমানোর জন্য অপরিহার্য। একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের জলবায়ু কূটনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোয় আলোচনা–পর্বে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে; অনেক আলোচক বলছেন, প্রথাগত “দুই বড়”–এর জায়গায় এখন একদিকে চীন, অন্যদিকে ইউরোপ ও উদীয়মান অর্থনীতির সমন্বয় দেখা যাচ্ছে।
সম্মেলনের ভেতরে খসড়া টেক্সট নিয়ে আলোচনাতেও চীনা কূটনীতিকদের সক্রিয়তা স্পষ্ট। জলবায়ু–সহায়তা তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে কমানোর সময়সূচি নিয়ে আলোচনায় তারা ব্রাজিলসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে কাছাকাছি অবস্থানে কাজ করছে। তবে একই সঙ্গে চীন নিজের নির্গমন কমানো ও নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গতি নিয়ে আরও কড়া ভাষা অন্তর্ভুক্ত করতে অনাগ্রহী বলে অংশগ্রহণকারীরা জানাচ্ছেন। ফলে একদিকে নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে বিশ্ব–নেতৃত্বের দাবি, অন্যদিকে উচ্চ নির্গমনকারী অর্থনীতি হওয়ার বাস্তবতা—দুইয়ের টানাপোড়েনে চীনের নেতৃত্বের ধারণা নিয়ে ভেতরেই আলোচনা চলছে।

নেতৃত্বের ধরন ও বৈশ্বিক প্রত্যাশা
উন্নয়নশীল অনেক দেশের প্রতিনিধিদের কাছে চীন এখন সুযোগ ও ঝুঁকি—দুয়েরই প্রতীক। আফ্রিকা থেকে লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত সোলার পার্ক, ট্রান্সমিশন লাইন ও ব্যাটারি প্রকল্পে যে অর্থ ও প্রযুক্তি আসছে, তার বড় অংশই চীনা উৎস থেকে। আবার একই সঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে, কিছু প্রকল্পে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বন উজাড় বা অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেক আলোচক বলছেন, চীনের ভূমিকা এখন আর অংশগ্রহণকারী নয়; এটি স্পষ্ট নেতৃত্বের প্রশ্ন—কিন্তু সেই নেতৃত্ব কতটা স্বচ্ছ, ন্যায্য ও বিজ্ঞানসম্মত হবে, সেটাই মূল বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য উন্নত দেশকে নতুন করে জোট হিসাব কষতে হচ্ছে। ব্রাজিল আমাজন রেইনফরেস্টের প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে বন রক্ষা, আদিবাসী অধিকার ও জলবায়ু–স্বাস্থ্যের ইস্যুকে সম্মেলনের কেন্দ্রে আনতে চায়। বাইরে, প্রচণ্ড গরমে ঘর্মাক্ত অবস্থায় হাজারো কর্মী ও পরিবেশ–কর্মী প্ল্যাকার্ড হাতে জীবাশ্ম জ্বালানি দ্রুত বন্ধ ও জলবায়ু–অর্থায়ন বাড়ানোর দাবিতে সমাবেশ করেছে। অনেকের প্রশ্ন, চীনের নতুন প্রভাবশালী অবস্থান কি সত্যিই দ্রুত নির্গমন কমানো, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে, নাকি কপ৩০–এর শেষে কূটনৈতিক ভাষাই মূল অর্জন হয়ে থাকবে। যে পথটিই নেওয়া হোক, এবার আলোচনার মঞ্চে উপস্থিতির ধরনই ভবিষ্যৎ জলবায়ু শাসনকে নির্ধারণ করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















