ডেটা বলছে, আকর্ষণ টিকে আছে
নতুন পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সব ঝামেলা সত্ত্বেও উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষ পছন্দ বিদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীদের কাছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিত—এসটিইএম খাতে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সুবিধা, ল্যাব ও শিল্পখাতের শক্ত অবস্থান অনেককেই আকৃষ্ট করছে। অনেক গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং–এ মার্কিন ক্যাম্পাসগুলোর আধিপত্য এবং সেখানকার প্রভাবশালী অধ্যাপক–গবেষক নেটওয়ার্কও বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু একই সঙ্গে দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়া, নিরাপত্তা যাচাই এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রকে আগের মতো স্বচ্ছন্দ ও স্বাগতপূর্ণ মনে করছেন না—এমন ইঙ্গিতও মিলছে সার্ভে–তথ্যে।
গত কয়েক বছরে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামনে সহজ ভিসা, পড়াশোনা শেষে কাজের সুযোগ ও স্থায়ী আবাসনের পরিষ্কার পথ দেখিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দূতাবাসে ইন্টারভিউ অপেক্ষা ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের কারণে ফাইল ঝুলে থাকা, নানা বিধিনিষেধ পরিবর্তনের খবর এসে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তায় ফেলছে। তা সত্ত্বেও সামগ্রিক সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে—বিশেষত পিএইচডি স্তরে—অনেকেই এখনও যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথম পছন্দ করে আবেদন করছেন। অনেকের যুক্তি, সর্বোচ্চ মানের ল্যাব ও তহবিলের জন্য ঝুঁকি নিয়েও একবার সুযোগ পাওয়া গেলে গবেষণা–ক্যারিয়ার অনেক এগিয়ে যায়।

রাজনীতি, ভিসা ও স্থায়িত্বের লড়াই
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পখাতের হিসাব আলাদা। কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতের মতো বিষয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বড় অংশই বিদেশি নাগরিক। এরা পরে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি, স্টার্টআপ বা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের নেতৃত্ব দেয়, নতুন পণ্য ও পেটেন্ট তৈরি করে অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে। যদি রাজনৈতিক চাপ ও ভিসা–নীতির কারণে ভবিষ্যতে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আসে, বা আসার পর দ্রুত দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, তবে এই ট্যালেন্ট পাইপলাইন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর দিকে মেধা সরে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবনী শক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
এই ডেটা প্রকাশিত হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন ওয়াশিংটনে পুনরায় অভিবাসন ও বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়ে তর্ক জোরালো। জাতীয় নিরাপত্তা ও চাকরির বাজারের প্রশ্ন তুলে কিছু রাজনীতিক কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলছেন, বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই যাচাই–বাছাই ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের বিধান যথেষ্ট কঠোর; অতিরিক্ত বাধা তৈরি করলে মেধাবী তরুণরা অন্য দেশে চলে যাবে। ফলে স্টার্টআপ ভিসা, সহজতর গ্রিন কার্ড পথ বা এসটিইএম–ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার মতো প্রস্তাব আবারও আলোচনায় এসেছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধু আইন নয়, আদালতের রায় ও প্রশাসনিক নির্দেশও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পূর্বের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ওয়ার্ক পারমিট নীতি পরিবর্তন কিংবা স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ নিয়ে আইনি লড়াই অনেককে অনুভব করিয়েছে—তাদের ভবিষ্যৎ একক কোনো প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর অতিরিক্তভাবে নির্ভরশীল। তাই অনেকে এখন একাধিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে আবেদন করেন এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিকল্প পথ খোলা রাখেন। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু ক্যাম্পাসে ভর্তি–দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মুখে তারা প্রায়ই এক কথাই শুনছেন—শিক্ষার মানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো আকর্ষণীয়, কিন্তু স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আস্থা আগের মতো নেই।
এই মুহূর্তে সংখ্যা দেখলে মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সুপারপাওয়ার হিসেবে উল্লেখযোগ্য টান ধরে রেখেছে; বহু দশকে গড়ে ওঠা গবেষণা–ইকোসিস্টেম এক দিনে নষ্ট হয়ে যাওয়ার নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যদি শিক্ষার্থীদের বারবার অনিশ্চয়তায় ফেলে, তবে এই সুনামও দ্রুত ক্ষয়ে যেতে পারে। সিদ্ধান্ত এখন নীতিনির্ধারকদের—তারা কি বৈশ্বিক প্রতিভাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখবেন, নাকি শক্তি হিসেবে ধরে রেখে স্পষ্ট ও স্থিতিশীল নিয়মের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। সেই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে নতুন প্রজন্মের মেধাবী বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকেরা আগামী দশকে কোন দেশকে প্রথম পছন্দ তালিকায় রাখবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















